শেষ পর্যন্ত সূচকের সঙ্গে বাড়লো লেনদেনও
- Update Time : ০৫:২২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
- / 181
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৬ মে) লেনদেনের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ আধা ঘণ্টার চমকে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। এতে লেনদেনের ৩০ মিনিটের মাথায় ১৫ পয়েন্ট কমে যায় ডিএসইর প্রধান সূচক।
লেনদেনের শুরুর দিকে এমন দরপতন হওয়ায় আবারও বড় পতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগের মধ্যে। তবে শেষ আধা ঘণ্টার লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে পতনের বদলে সূচকের বড় উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে ওঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬১টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপরদিকে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় দুইশ কোটি টাকার কম লেনদেন হলেও শেষ পর্যন্ত ৫৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয় ৫১৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ১ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৬০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, জিএসপি ফাইন্যান্স, শাহিনপুকুর সিরামিক, এসিআই ফরমুলেশন এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬২ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৮টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৫৫ পয়েন্ট কমে গেলে গত রোববার (২২ মে) মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, জ্যেষ্ঠ অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাসকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় সোমবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনেই ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সূচকের এমন উত্থানের পরপরই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি।
বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড বাদে অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাট অফ ডেটে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। আগে যেটা ছিল ১ কোটি টাকা।
একইভাবে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রোভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কমিশন সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।
তারল্য বাড়াতে বিএসইসি এমন পদক্ষেপ নিলেও মঙ্গলবার ও বুধবার শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এমনকি ডিএসইতে লেনদেন কমে বুধবার ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেন বাড়লেও এই ধারা কতদিন টিকে থাকে তা এখন দেখার পালা।