স্টেভিয়া চাষে সফল ড. রওনক আরা
- Update Time : ১২:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ২০২১
- / 244
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার জামালপুর পারপূগী গ্রামে ২ একর জমিতে স্টেভিয়ার চাষ করে সফল হয়েছেন ড. রওনক আরা নূর-এ- ফেরদৌস নামে এক নারী উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউট দীর্ঘ গবেষণার পর ড. রওনক আরা নূর-এ- ফেরদৌস নামে এক নারী উদ্যোক্তাকে দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুগাছ স্টেভিয়ার চাষ শুরু করেন। এই ঔষধি গুণ সম্পন্ন গাছ স্টেভিয়া স্বাদে মিষ্টি। এ গাছের পাতার নির্যাস ডায়াবেটিস রোগের মহাঔষুধ।
এছাড়া দাঁতের ক্ষয়রোধ, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকারও পাওয়া যায়।
দীর্ঘ গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ার পর এখন কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিক চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন। অল্প পরিশ্রম, অল্প পুঁজিতে নতুন এ ফসল চাষ করে কৃষক লাভবান হবে বলে এমন দাবি সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের।
গত বছর পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা আসে। এরপরই কৃষক পর্যায়ে স্টেভিয়া চাষ ছড়িয়ে দিতে চারা উৎপাদন শুরু হয়। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় কৃষকদের। কৃষকও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্টেভিয়া চাষে। বায়ো-টেকনোলজি গবেষণা কেন্দ্রে স্টেভিয়া গাছের বংশ বিস্তার ও গুণাগুণ যাচাই করে সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। পরে ২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে গাছটি সংগ্রহ করা হয়। ২০০১ সালে থাইল্যান্ড থেকে এই গাছ বাংলাদেশে নিয়ে আসে সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। দেশের জলবায়ুর সাথে সহনশীল করে তুলতে ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রে এই উদ্ভিদ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চালায় প্রতিষ্ঠানটি। পরে এর চাষ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। এ বছরই কৃষক পর্যায়ে এর চাষ শুরু হয়েছে জেলায়।
১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম বাণিজ্যক চাষ শুরু হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে স্টেভিয়া। স্টেভিয়া পৃথিবীর এক অত্যাশ্চর্য মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এ গাছ শত শত বছর ধরে প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চল রিওমন্ডে এলাকায় চাষাবাদ হতো। ১৮৮৭ সালে সুইজারল্যান্ডের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এমএস বার্টনি স্টেভিয়াকে প্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।
প্যারাগুয়ের গুরানী ইন্ডিয়ান নামক উপজাতীয়রা একে বল- কা-হি-হি অর্থাৎ মধু গাছ। আফ্রিকাতে এটি মধু পাতা বা চিনি পাতা নামে পরিচিত। এছাড়াও থাইল্যান্ডে মিষ্টি ঘাস, জাপানে আমাহা সুটেবিয়া ও ভারতে মধু পারানি নামে স্টেভিয়াকে অভিহিত করা হয়।
১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম স্টেভিয়ার বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়। জাপানে চাষাবাদ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়। স্টেভিয়ার সবুজ ও শুকনো পাতা সরাসরি চিবিয়ে কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বোতলে সংরক্ষণ করা যায়। পাতার গুঁড়ো দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত এ ঔষধি গাছের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। জাপানে হালকা পানীয় কোকাকোলাতে স্টেভিয়া ব্যবহার করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সুগার ক্রপস গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈঞ্জানিক কর্মকর্তা ড. শরিফুল ইসলাম বলেন, স্টেভিয়া চাষ করে হেক্টর প্রতি বছরে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেভিয়া চাষ করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।