নীলফামারীতে তিস্তা নদী হটাৎ ফুঁসে উঠে দু’কুল প্লাবিত

  • Update Time : ১১:২১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১
  • / 166

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী:

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা উজানের ঢলে নীলফামারী তিস্তা নদীর পানি হটাৎ ফুঁসে উঠে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দু’কুল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও নদীর প্রবল স্রোত নিবৃত্ত করতে জেলার ডিমলা উপজেলাধীন পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জে তিস্তা নদীর গ্রাম রক্ষা গ্রোইন টি- বাঁধের ১’শ মিটার ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নের ২টি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ২টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে হটাৎ তিস্তার পানি বেড়ে গিয়ে প্রবল স্রোত প্রবাহিত হতে থাকে।

এমতাবস্থায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে তিস্তার পানি ফুঁসে উঠতে থাকে এবং নদীর ডান দিকের ৪টি গ্রোইন বাঁধে ভাঙ্গন ধরে। নিমিষেই বাঁধের আশেপাশের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়াও নদীর আশেপাশের ২ হাজার হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গিয়েছে।

বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরে। পানির পরিমাণ কোথাও কোমর পর্যন্ত আবার কোথাও গলা পর্যন্ত দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হটাৎ তিস্তা নদী ফুঁসে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এমন বন্যা অনেকেই দেখেননি বলে জানান। আবার অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ৭৫ ও ৮৮ বন্যার চেয়ে আজকের বন্যা ভয়াবহ। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী,ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃদা) মাহবুব হাসান, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ইবনুল আবেদীন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রশাদ ঘোষ, পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের ইনচার্জ প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু বক্কর ছিদ্দিক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী, ডিমলা থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম, নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেজবাহুর রহমান, ত্রাণ শাখার উপ সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম প্রমূখ।

No description available.

উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী টেপাখড়িবাাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার এবং জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু পাখি নিয়ে চরম বিপদে পড়েছে বন্যা কবলিত লোকজন।

পরিদর্শন কালে ডিসি জানান অত্র ডিমলা উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারের জন্য ৪৯ মেঃটন চাউল ও ১০ লক্ষ টাকা পর্যায়ক্রমে বিতরন করা হবে। এছাড়াও প্যাকেটজাত শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য মজুদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অসহায় পরিবারদের রাত্রি যাপনের জন্য ৫০টি তাবু ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা প্রতিবেদককে জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে হটাৎ তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা রেড এলার্ট জারি করেছি। নদী অববাহিকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করেছি। গ্রোইন টি-বাঁধ মেরামত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ পরিচালক আমিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। আমরা শুধু কালীগঞ্জ গ্রামেই স্থানীয় নৌকা দিয়ে সাড়ে তিন’শ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিতে সক্ষম হয়েছি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


নীলফামারীতে তিস্তা নদী হটাৎ ফুঁসে উঠে দু’কুল প্লাবিত

Update Time : ১১:২১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১

মশিয়ার রহমান, নীলফামারী:

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা উজানের ঢলে নীলফামারী তিস্তা নদীর পানি হটাৎ ফুঁসে উঠে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দু’কুল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও নদীর প্রবল স্রোত নিবৃত্ত করতে জেলার ডিমলা উপজেলাধীন পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জে তিস্তা নদীর গ্রাম রক্ষা গ্রোইন টি- বাঁধের ১’শ মিটার ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নের ২টি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ২টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে হটাৎ তিস্তার পানি বেড়ে গিয়ে প্রবল স্রোত প্রবাহিত হতে থাকে।

এমতাবস্থায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে তিস্তার পানি ফুঁসে উঠতে থাকে এবং নদীর ডান দিকের ৪টি গ্রোইন বাঁধে ভাঙ্গন ধরে। নিমিষেই বাঁধের আশেপাশের প্রায় ১৫ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। তাছাড়াও নদীর আশেপাশের ২ হাজার হেক্টর আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গিয়েছে।

বাড়ীঘরে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরে। পানির পরিমাণ কোথাও কোমর পর্যন্ত আবার কোথাও গলা পর্যন্ত দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হটাৎ তিস্তা নদী ফুঁসে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এমন বন্যা অনেকেই দেখেননি বলে জানান। আবার অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ৭৫ ও ৮৮ বন্যার চেয়ে আজকের বন্যা ভয়াবহ। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী,ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃদা) মাহবুব হাসান, সহকারী কমিশনার (ভুমি) ইবনুল আবেদীন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রশাদ ঘোষ, পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের ইনচার্জ প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু বক্কর ছিদ্দিক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী, ডিমলা থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম, নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেজবাহুর রহমান, ত্রাণ শাখার উপ সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম প্রমূখ।

No description available.

উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী টেপাখড়িবাাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার এবং জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু পাখি নিয়ে চরম বিপদে পড়েছে বন্যা কবলিত লোকজন।

পরিদর্শন কালে ডিসি জানান অত্র ডিমলা উপজেলার বন্যা কবলিত পরিবারের জন্য ৪৯ মেঃটন চাউল ও ১০ লক্ষ টাকা পর্যায়ক্রমে বিতরন করা হবে। এছাড়াও প্যাকেটজাত শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য মজুদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অসহায় পরিবারদের রাত্রি যাপনের জন্য ৫০টি তাবু ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা প্রতিবেদককে জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে হটাৎ তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা রেড এলার্ট জারি করেছি। নদী অববাহিকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করেছি। গ্রোইন টি-বাঁধ মেরামত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ পরিচালক আমিরুল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। আমরা শুধু কালীগঞ্জ গ্রামেই স্থানীয় নৌকা দিয়ে সাড়ে তিন’শ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিতে সক্ষম হয়েছি।