বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
- Update Time : ১২:২৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪
- / 145
জয় বাংলা, বাংলার জয় এই স্লোগান ছিল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মুখে মুখে। কোনোকিছুতে জয় বাংলা বলে ওঠা আমাদের জন্য ছিল গর্বের। এটা সে সময়ের কথা বলছি, যখন আমরা এক পরাধীন শৃঙ্খলে আবরণে আবদ্ধ ছিলাম। সে শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে আমাদের চেষ্টার কোনও কমতি ছিল না।
কেমন ছিল সে চেষ্টা গুলো- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় গণহত্যা ও বাঙালিদের প্রতিরোধ। এসবের পিছনে একটি নাম জড়িয়ে আছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যা ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে পরিচিত। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমান নাম মুজিবনগর) আমবাগানে ১৭ এপ্রিল এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার কারণে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সরকারের অন্যতম সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী) ও এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী)। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার সফলতা লাভ করে। মুজিবনগর সরকার’ গঠনের পর মুক্তিযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পায়। এ সরকারের নেতৃত্বে সকল শ্রেণির বাঙালি দেশকে শত্রু মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুক্তিবাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। উপ-প্রধান সেনাপতি ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এর মূল কাারিগর।
মুক্তিবাহিনীকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল । আবার যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার জন্য সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল।
সেক্টর ১:- চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ।
সেক্টর ২:- কুমিল্লা ও ফরিদপুর জেলা এবং ঢাকা ও নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ।
সেক্টর ৩:- মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ এবং কেরানিগঞ্জের অংশ বিশেষ।
সেক্টর ৪:- উত্তরে সিলেট সদর এবং দক্ষিণে হবিগঞ্জ, মধ্যবর্তী সমস্ত অঞ্চল।
সেক্টর ৫:- সিলেট জেলার উত্তরাঞ্চল।
সেক্টর ৬:- রংপুর ও দিনাজপুর জেলা।
সেক্টর ৭:- রাজশাহী, পাবনা , বগুড়া ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ।
সেক্টর ৮:- কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলা।
সেক্টর ৯:- বরিশাল, পটুয়াখালী এবং খুলনা এবং ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ।
সেক্টর ১০:- কোনো আঞ্চলিক সীমানা ছিল না, নৌবাহিনীর কমান্ডো নিয়ে গঠিত। নৌ অভিযানের প্রয়োজনে যে কোনো সেক্টর এলাকায় গিয়ে অপারেশন শেষে ১০ নং সেক্টরে ফিরে আসতো।
সেক্টর ১১:- টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অংশবিশেষ।
এছাড়াও স্থানীয় ছোট ছোট যোদ্ধাবাহিনী ছিল। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তারা গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতেন। ত্রিশ হাজার নিয়মিত যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এই বাহিনীর নাম মুক্তিফৌজ। এক লক্ষ গেরিলা ও বেসামরিক যোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এই মুক্তিফৌজ।
মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়েন। এ যুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষও এ যুদ্ধে অবদান রাখেন। নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, আশ্রর এবং তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। সংস্কৃতি কর্মীরা তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেন। এছাড়াও প্রবাসী বাঙালিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন।। এখন আমরা স্বাধীনভাবে বাসকরি, অনেক মানুষের আত্মত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দেশে।