২০৪১ সাল নাগাদ একটি বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই ছাত্রলীগের লক্ষ্য

  • Update Time : ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
  • / 843

শিল্পবিপ্লবের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Industrial Revolution। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগতমানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয়, তাকেই সাধারণভাবে ‘শিল্পবিপ্লব’ বলা হয়।

ইউরোপের মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। প্রথম শিল্পবিপ্লবটি শুরু হয়েছিল ১৭৮৪ সালে, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। মানুষের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে বাষ্পীয় শক্তির আবিষ্কার।

১৮৭০ সালে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে সেটিকেই আমরা দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রেখেছি। অন্ধকারাচ্ছন্ন মানব সভ্যতাকে আলোর পথ দেখানোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন সত্যিকার অর্থেই আলোর দিশারি হয়ে পথ দেখিয়েছে।

১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে ঘটে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে উৎপাদনকে স্বয়ংক্রিয় করতে ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবকে অবলীলায় ছাড়িয়ে গেছে আজকের যুগের ডিজিটাল বিপ্লব, যাকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে ‘একুশ শতকের বিশ্ব’ প্রাধান্য দিচ্ছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ব্যাপক পরিসরে বর্ধিত-প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন একটি নব্য চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার অবিকল্প সংস্করণ। তবে এর রয়েছে বহু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য।

বিশ্ব এ মুহূর্তে একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার গতিপথ, কর্মক্ষেত্রের ধরন, যোগাযোগের কল্পনাতীত পথ তৈরি প্রক্রিয়া এবং এই সামগ্রিক পদ্ধতিগুলো মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।

আমাদের দেশ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্প বিল্পবে কয়েক দশক পিছিয়ে পড়লেও বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা পিছিয়ে নেই।

বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। একটি দেশকে স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে হলে, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি একজন তরুণকে সচেতন থাকতে হবে।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সবার আগে যেটি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, একটি শিশু যখন একজন সুশিক্ষিত ও আত্মপ্রত্যয়ী মায়ের আচল ছায়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হতে থাকে, তখন সে বেড়ে উঠে নতুন একটি প্রজন্মের জন্য আলোর দিশারি হয়ে।

অন্যদিকে যারা বাংলাদেশকে ধর্মীয় কুসংস্কারের তপ্ত কড়াইয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাকিস্তান বানানোর মতলব ভাজতে থাকে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের অবাধ প্রজননে দেশ ভরিয়ে ফেলে, অসুস্থ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চর্চার খোলসে আগুন সন্ত্রাস-বোমাবাজিকে একমাত্র রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে দেখে, চাঁদাবাজির শৈল্পিক রূপ হিসেবে বৈদ্যুতিক লাইন ছাড়াই খাম্বা বসিয়ে দেশকে শতভাগ অন্ধকারাচ্ছন্নের দিকে ঠেলে দেয়, সামাজিক অনাচার রূপে মিথ্যাচারের গুজব ছড়ানোই যাদের রাজনৈতিক আন্দোলন, বৈষম্য সৃষ্টিতে বৈদেশিক এম্বাসিগুলোর দুয়ারে বসে সার্বভৌমত্ব নষ্টের ভিক্ষে যারা করে, শোষণ-বঞ্চনার নামে জনসাধারণের হয়রানিকে যারা উপেক্ষা করে রীতিমত এবং বিশেষত স্বেচ্ছাচার-অনিয়ম-দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবার কৃতিত্ব নিয়ে যারা জেল-হাজত-ফেরারী আসামি হয়ে নির্লজ্জের মত গণতন্ত্রের কথা বলে; তাদেরকে বাংলাদেশের আপামরসাধারণ অনেক আগেই রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভাবে ত্যাজ্য করেছে। তরুণ প্রজন্ম ভীষণ ঘৃণা মিশ্রিত ক্ষোভ পুষে রেখেছে। তারা শুধু, সামষ্টিকভাবে গণ আলোড়নের তাড়নায় বিভোর হয়ে আছে!

‘MOVE FORWARD & MAKE BANGLADESH SMART’ এর বিপরীতে যারা ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে উগ্রবাদের ভয়াল থাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ; ঠিক সেই সময়ে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের উপলব্ধিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষ হওয়া। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশপ্রেমে আরো মূল্যবোধসম্পন্ন, সৃষ্টিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলেই অর্জিত হবে আমাদের স্বপ্নের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ।’

মনে করিয়ে দেই, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েও উল্লেখ ক্ষমতায় থাকা খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “না এতে সংযুক্ত হওয়া যাবে না। তাহলে নাকি বাংলাদেশের সব তথ্য বাইরে চলে যাবে।”

সে সময়টা ছিলো এমন যেনো, বুদ্ধির বিভ্রাটে রাষ্ট্রের বুদ্ধিও সংকটের মহাসমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।ছাগ-শ্মশ্রু-শোভিত জামায়াতী কীট বগলদাবা করে উন্মত্ততার শিখণ্ডী হয়ে খুন-সন্ত্রাসের বড়ি বিক্রি করাই ছিলো যার রাজনৈতিক পেশা, তার কাছে সাবমেরিন ক্যাবল বলতে আসলে কি জিনিস বুঝেছিলেন, সেটি জানতে আমার ভীষণ রকম ইচ্ছে করে!

পরবর্তীতে, জাতির পিতার কণ্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হই।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো,পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের জনগণের জন্য পথ বাতলে দিয়েছেন। এই ব-দ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থাও দেশরত্ন শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন।

জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা সব সময়ই সবচেয়ে বেশি আস্থা রেখেছেন তরুণ প্রজন্মের উপর। বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশনের সঙ্গে তুলনা করে দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর পরিণতি বরণের পূর্বাভাস প্রদান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার কথা প্রায় সবারই জানা।

জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাস করেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের জন্য এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন ও যুব সমাজের ওপর। তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি- এটাই ছিল আওয়ামীলীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার। সেই কাজ এখনো ব্যাপক পরিসরে চলমান। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পায়।

এক প্রকার দুর্নীতিগ্রস্থ, সন্ত্রাসের আঁতুরঘরে পরিণত হওয়া অসম্ভবের বাংলাদেশকে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরিত করাটা যেমন একটি সচেতন ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়ার সম্মিলিত সাহসী প্রচেষ্টার ফলাফল; তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনও একটি চলমান প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে অপেক্ষমান অর্জন। একটি প্রজন্মকে বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে মনস্তাত্ত্বিক ও হৃদয় দিয়ে দেশপ্রেমের দিকে উদ্ভুদ্ধ করতে পারলে এই লক্ষ্য অর্জনের দুঃসাহসী ও বৈপ্লবিক পরিকল্পনা সফল হতে খুব স্বল্প সময়ের প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতের জন্য টেকসই জাতি ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যার কোনও বিকল্প বর্তমানে বাংলাদেশে নেই।

আগামীতে মানুষ এবং যন্ত্র দুটোর সমন্বয় করেই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকেই প্রাধান্যের প্রথম স্থানে রাখতে হবে। তবে যন্ত্রের সক্ষমতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে সমানভাবে। আমাদের স্মার্ট-তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের চাহিদা, চাহিদা অনুযায়ী সঠিক তথ্যের যোগান নিশ্চিত হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারগুলো গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সাথে ব্যবহারকারীকেও ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষিত-দক্ষ-স্মার্ট সিটিজেন হয়ে, স্মার্ট ইকোনমিতে কন্ট্রিবিউট করতে হবে। তাদের স্মার্ট গভর্নমেন্ট নির্বাচিত করতে সঠিক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে একটি স্মার্ট সোসাইটি সৃষ্টি করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই আমাদের গন্তব্য। এই গন্তব্যে পথ দেখাবেন বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা!

আরেকটি কথা না বললেই নয়,

‘কামারের লোহিত-তপ্ত লোহায় আঘাতে আঘাতে কিংবা গলানো সোনার খাঁজে খাঁজে জহুরীর স্বপ্ন-দিয়ে বোনা, রণাঙ্গনের উদ্ভাসিত তারুণ্যের সোচ্চারিত ভাষা স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির রক্তচক্ষুকে-

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থোড়াই কেয়ার করে !!!

লেখকঃ মুনেম শাহারিয়ার মুন
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,স্যার এ.এফ.রহমান হল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


২০৪১ সাল নাগাদ একটি বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই ছাত্রলীগের লক্ষ্য

Update Time : ১২:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

শিল্পবিপ্লবের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Industrial Revolution। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে দৈহিক শ্রমের পরিবর্তে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার গুণগতমানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক উন্নতি হয়, তাকেই সাধারণভাবে ‘শিল্পবিপ্লব’ বলা হয়।

ইউরোপের মধ্যে ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। প্রথম শিল্পবিপ্লবটি শুরু হয়েছিল ১৭৮৪ সালে, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে। মানুষের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে বাষ্পীয় শক্তির আবিষ্কার।

১৮৭০ সালে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে সেটিকেই আমরা দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রেখেছি। অন্ধকারাচ্ছন্ন মানব সভ্যতাকে আলোর পথ দেখানোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন সত্যিকার অর্থেই আলোর দিশারি হয়ে পথ দেখিয়েছে।

১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে ঘটে তৃতীয় শিল্পবিপ্লব। তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে উৎপাদনকে স্বয়ংক্রিয় করতে ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবকে অবলীলায় ছাড়িয়ে গেছে আজকের যুগের ডিজিটাল বিপ্লব, যাকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে ‘একুশ শতকের বিশ্ব’ প্রাধান্য দিচ্ছে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মূলত তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের ব্যাপক পরিসরে বর্ধিত-প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন একটি নব্য চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার অবিকল্প সংস্করণ। তবে এর রয়েছে বহু স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য।

বিশ্ব এ মুহূর্তে একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার গতিপথ, কর্মক্ষেত্রের ধরন, যোগাযোগের কল্পনাতীত পথ তৈরি প্রক্রিয়া এবং এই সামগ্রিক পদ্ধতিগুলো মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।

আমাদের দেশ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিল্প বিল্পবে কয়েক দশক পিছিয়ে পড়লেও বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা পিছিয়ে নেই।

বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। একটি দেশকে স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে হলে, তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি একজন তরুণকে সচেতন থাকতে হবে।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সবার আগে যেটি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি, একটি শিশু যখন একজন সুশিক্ষিত ও আত্মপ্রত্যয়ী মায়ের আচল ছায়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হতে থাকে, তখন সে বেড়ে উঠে নতুন একটি প্রজন্মের জন্য আলোর দিশারি হয়ে।

অন্যদিকে যারা বাংলাদেশকে ধর্মীয় কুসংস্কারের তপ্ত কড়াইয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাকিস্তান বানানোর মতলব ভাজতে থাকে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের অবাধ প্রজননে দেশ ভরিয়ে ফেলে, অসুস্থ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক চর্চার খোলসে আগুন সন্ত্রাস-বোমাবাজিকে একমাত্র রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে দেখে, চাঁদাবাজির শৈল্পিক রূপ হিসেবে বৈদ্যুতিক লাইন ছাড়াই খাম্বা বসিয়ে দেশকে শতভাগ অন্ধকারাচ্ছন্নের দিকে ঠেলে দেয়, সামাজিক অনাচার রূপে মিথ্যাচারের গুজব ছড়ানোই যাদের রাজনৈতিক আন্দোলন, বৈষম্য সৃষ্টিতে বৈদেশিক এম্বাসিগুলোর দুয়ারে বসে সার্বভৌমত্ব নষ্টের ভিক্ষে যারা করে, শোষণ-বঞ্চনার নামে জনসাধারণের হয়রানিকে যারা উপেক্ষা করে রীতিমত এবং বিশেষত স্বেচ্ছাচার-অনিয়ম-দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবার কৃতিত্ব নিয়ে যারা জেল-হাজত-ফেরারী আসামি হয়ে নির্লজ্জের মত গণতন্ত্রের কথা বলে; তাদেরকে বাংলাদেশের আপামরসাধারণ অনেক আগেই রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভাবে ত্যাজ্য করেছে। তরুণ প্রজন্ম ভীষণ ঘৃণা মিশ্রিত ক্ষোভ পুষে রেখেছে। তারা শুধু, সামষ্টিকভাবে গণ আলোড়নের তাড়নায় বিভোর হয়ে আছে!

‘MOVE FORWARD & MAKE BANGLADESH SMART’ এর বিপরীতে যারা ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে উগ্রবাদের ভয়াল থাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে ; ঠিক সেই সময়ে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের উপলব্ধিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানবিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষ হওয়া। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশপ্রেমে আরো মূল্যবোধসম্পন্ন, সৃষ্টিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলেই অর্জিত হবে আমাদের স্বপ্নের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ।’

মনে করিয়ে দেই, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েও উল্লেখ ক্ষমতায় থাকা খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “না এতে সংযুক্ত হওয়া যাবে না। তাহলে নাকি বাংলাদেশের সব তথ্য বাইরে চলে যাবে।”

সে সময়টা ছিলো এমন যেনো, বুদ্ধির বিভ্রাটে রাষ্ট্রের বুদ্ধিও সংকটের মহাসমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।ছাগ-শ্মশ্রু-শোভিত জামায়াতী কীট বগলদাবা করে উন্মত্ততার শিখণ্ডী হয়ে খুন-সন্ত্রাসের বড়ি বিক্রি করাই ছিলো যার রাজনৈতিক পেশা, তার কাছে সাবমেরিন ক্যাবল বলতে আসলে কি জিনিস বুঝেছিলেন, সেটি জানতে আমার ভীষণ রকম ইচ্ছে করে!

পরবর্তীতে, জাতির পিতার কণ্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে আমরা সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হই।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়েছেন। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো,পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের জনগণের জন্য পথ বাতলে দিয়েছেন। এই ব-দ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থাও দেশরত্ন শেখ হাসিনা করে দিয়েছেন।

জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা সব সময়ই সবচেয়ে বেশি আস্থা রেখেছেন তরুণ প্রজন্মের উপর। বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে ম্যালথাসিয়ান স্ট্যাগনেশনের সঙ্গে তুলনা করে দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যুর পরিণতি বরণের পূর্বাভাস প্রদান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার কথা প্রায় সবারই জানা।

জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাস করেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের জন্য এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন ও যুব সমাজের ওপর। তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি- এটাই ছিল আওয়ামীলীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার। সেই কাজ এখনো ব্যাপক পরিসরে চলমান। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পায়।

এক প্রকার দুর্নীতিগ্রস্থ, সন্ত্রাসের আঁতুরঘরে পরিণত হওয়া অসম্ভবের বাংলাদেশকে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরিত করাটা যেমন একটি সচেতন ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়ার সম্মিলিত সাহসী প্রচেষ্টার ফলাফল; তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনও একটি চলমান প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে অপেক্ষমান অর্জন। একটি প্রজন্মকে বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে মনস্তাত্ত্বিক ও হৃদয় দিয়ে দেশপ্রেমের দিকে উদ্ভুদ্ধ করতে পারলে এই লক্ষ্য অর্জনের দুঃসাহসী ও বৈপ্লবিক পরিকল্পনা সফল হতে খুব স্বল্প সময়ের প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতের জন্য টেকসই জাতি ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যার কোনও বিকল্প বর্তমানে বাংলাদেশে নেই।

আগামীতে মানুষ এবং যন্ত্র দুটোর সমন্বয় করেই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকেই প্রাধান্যের প্রথম স্থানে রাখতে হবে। তবে যন্ত্রের সক্ষমতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে সমানভাবে। আমাদের স্মার্ট-তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের চাহিদা, চাহিদা অনুযায়ী সঠিক তথ্যের যোগান নিশ্চিত হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারগুলো গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একই সাথে ব্যবহারকারীকেও ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষিত-দক্ষ-স্মার্ট সিটিজেন হয়ে, স্মার্ট ইকোনমিতে কন্ট্রিবিউট করতে হবে। তাদের স্মার্ট গভর্নমেন্ট নির্বাচিত করতে সঠিক ভূমিকা রাখার মাধ্যমে একটি স্মার্ট সোসাইটি সৃষ্টি করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্ভাবনী, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই আমাদের গন্তব্য। এই গন্তব্যে পথ দেখাবেন বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা!

আরেকটি কথা না বললেই নয়,

‘কামারের লোহিত-তপ্ত লোহায় আঘাতে আঘাতে কিংবা গলানো সোনার খাঁজে খাঁজে জহুরীর স্বপ্ন-দিয়ে বোনা, রণাঙ্গনের উদ্ভাসিত তারুণ্যের সোচ্চারিত ভাষা স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির রক্তচক্ষুকে-

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থোড়াই কেয়ার করে !!!

লেখকঃ মুনেম শাহারিয়ার মুন
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,স্যার এ.এফ.রহমান হল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।