‘পেটে খাবার জুটলে আমিও লকডাউন মানতাম’

  • Update Time : ১০:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
  • / 177

রাজধানীর মানিকনগর ৬ তলা বস্তিতে ভাড়া বাসায় থাকেন মো. হানিফ। পেশায় রিকশাচালক।

শনিবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে তার রিকশায় ওঠেন এই প্রতিবেদক। কথায় কথায় অসহায়ের মতো চেহারা করে হানিফ বলেন, ‘আসলে ত্রাণ সহায়তার কথা মুখে মুখেই থেকে যায়।’

লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষদের  ক্ষতিই বেশি দাবি করে তিনি বলেন, পকেটে টাকা না থাকলে, পেটে খাবার না গেলে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া উভয়ই সমান। হানিফ যে বস্তিতে থাকেন সেখানে অন্তত শ দুয়েক পরিবার বসবাস করে। তার দাবি সেখানের একটি পরিবারও ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে বলে জানা নেই।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সারাদেশে চলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। ঢাকায় বসবাস করা দিনমজুর,অসহায়,খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষগুলো এই সময়টায় ত্রাণ সহায়তার আশায় থাকেন। অথচ অনকের ৩ দিনেও কারও পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছায়নি তাদের কাছে। তাদের দাবি, ত্রাণ সহায়তার কথা যা মুখে মুখেই।

বাংলামোটর দাঁড়িয়ে থাকা আরেক রিকশাচালক বাদল। তিনি থাকেন আগারগাঁওয়ের একটি বস্তিতে। লকডাউনের ৩ দিনে তাদের দরজায় ত্রাণ নিয়ে কেউ আসেননি বলে জানান।

বাদল বলেন, ‘পেটে খাবার জুটলে আমিও লকডাউন মানতাম। কিন্তু পকেটে টাকা নেই অন্যদিকে পরিবারের বাজার-খরচ যখন দরকারি হয়ে পড়ে রাস্তায় বের হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এবারের লকডাউনে রিকশা চালাতে রাস্তায় কোনও বাধার সম্মুখিন হচ্ছি না। কিন্তু রাস্তায় মানুষ না থাকায় উপার্জন নেই বললেই চলে। সকালে রাস্তায় বেরিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাদল ৪শ’ টাকা আয় তার। সাধারণ সময়ে অন্তত ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন হতো।’

মিরপুর উত্তর কাজিপাড়ার কবরস্থান রোডে বস্তিতে থাকেন সিরাজ। তার দাবি ত্রাণের ছিটেফোঁটাও পাননি ৩ দিনে।তিনি বলেন, ‘লকডাউনে না খেয়েই মনে হয় মরবো। দিন শেষে পারিবারিক খরচ সাতশ টাকা।সারাদিন রিকশা চালিয়ে এখন তিনশ টাকাও উপার্জন হয় না।বউ মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করে। কোনওভাবে সংসার টেনে নিতাম। করোনার কারণে বাসা বাড়ির কাজও বন্ধ। বেঁচে থাকবো কিভাবে আল্লাহই ভালো জানেন।’

সিরাজ বলেন, ‘লকডাউনের আগে পত্র-প্রত্রিকা ও টেলিভিশনের খবরে দেখেছি, মানুষের মুখে মুখে শুনেছি রাজনেতিক দলের নেতারা দিনমজুর, অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকবেন। ত্রাণ সহায়তা দেবেন তারা। কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও পাইনি।’

জরুরি সেবা ও তথ্য এবং ত্রাণ সহায়তার জন্য হট লাইন ৩৩৩-এতে কল করে ত্রাণ চাইতে পারেন এই পরামর্শ দিলে সিরাজ বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না। আমাদের কী এই দক্ষতা আছে?’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, যাদের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের জন্য আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ড বা ১০টি অঞ্চলের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। কারও সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বা সরাসরি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এই বরাদ্দ থেকে সহায়তা দেবেন। এছাড়া আমরা আড়াই লাখ মাস্ক, আড়াই লাখ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও আড়াই লাখ সাবান বরাদ্দ দিয়েছি। সূত্রঃবাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media


‘পেটে খাবার জুটলে আমিও লকডাউন মানতাম’

Update Time : ১০:৩৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১

রাজধানীর মানিকনগর ৬ তলা বস্তিতে ভাড়া বাসায় থাকেন মো. হানিফ। পেশায় রিকশাচালক।

শনিবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে তার রিকশায় ওঠেন এই প্রতিবেদক। কথায় কথায় অসহায়ের মতো চেহারা করে হানিফ বলেন, ‘আসলে ত্রাণ সহায়তার কথা মুখে মুখেই থেকে যায়।’

লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষদের  ক্ষতিই বেশি দাবি করে তিনি বলেন, পকেটে টাকা না থাকলে, পেটে খাবার না গেলে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া উভয়ই সমান। হানিফ যে বস্তিতে থাকেন সেখানে অন্তত শ দুয়েক পরিবার বসবাস করে। তার দাবি সেখানের একটি পরিবারও ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে বলে জানা নেই।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সারাদেশে চলছে এক সপ্তাহের লকডাউন। ঢাকায় বসবাস করা দিনমজুর,অসহায়,খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষগুলো এই সময়টায় ত্রাণ সহায়তার আশায় থাকেন। অথচ অনকের ৩ দিনেও কারও পক্ষ থেকে ত্রাণ পৌঁছায়নি তাদের কাছে। তাদের দাবি, ত্রাণ সহায়তার কথা যা মুখে মুখেই।

বাংলামোটর দাঁড়িয়ে থাকা আরেক রিকশাচালক বাদল। তিনি থাকেন আগারগাঁওয়ের একটি বস্তিতে। লকডাউনের ৩ দিনে তাদের দরজায় ত্রাণ নিয়ে কেউ আসেননি বলে জানান।

বাদল বলেন, ‘পেটে খাবার জুটলে আমিও লকডাউন মানতাম। কিন্তু পকেটে টাকা নেই অন্যদিকে পরিবারের বাজার-খরচ যখন দরকারি হয়ে পড়ে রাস্তায় বের হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এবারের লকডাউনে রিকশা চালাতে রাস্তায় কোনও বাধার সম্মুখিন হচ্ছি না। কিন্তু রাস্তায় মানুষ না থাকায় উপার্জন নেই বললেই চলে। সকালে রাস্তায় বেরিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাদল ৪শ’ টাকা আয় তার। সাধারণ সময়ে অন্তত ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা উপার্জন হতো।’

মিরপুর উত্তর কাজিপাড়ার কবরস্থান রোডে বস্তিতে থাকেন সিরাজ। তার দাবি ত্রাণের ছিটেফোঁটাও পাননি ৩ দিনে।তিনি বলেন, ‘লকডাউনে না খেয়েই মনে হয় মরবো। দিন শেষে পারিবারিক খরচ সাতশ টাকা।সারাদিন রিকশা চালিয়ে এখন তিনশ টাকাও উপার্জন হয় না।বউ মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করে। কোনওভাবে সংসার টেনে নিতাম। করোনার কারণে বাসা বাড়ির কাজও বন্ধ। বেঁচে থাকবো কিভাবে আল্লাহই ভালো জানেন।’

সিরাজ বলেন, ‘লকডাউনের আগে পত্র-প্রত্রিকা ও টেলিভিশনের খবরে দেখেছি, মানুষের মুখে মুখে শুনেছি রাজনেতিক দলের নেতারা দিনমজুর, অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকবেন। ত্রাণ সহায়তা দেবেন তারা। কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও পাইনি।’

জরুরি সেবা ও তথ্য এবং ত্রাণ সহায়তার জন্য হট লাইন ৩৩৩-এতে কল করে ত্রাণ চাইতে পারেন এই পরামর্শ দিলে সিরাজ বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না। আমাদের কী এই দক্ষতা আছে?’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, যাদের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের জন্য আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ড বা ১০টি অঞ্চলের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। কারও সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বা সরাসরি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এই বরাদ্দ থেকে সহায়তা দেবেন। এছাড়া আমরা আড়াই লাখ মাস্ক, আড়াই লাখ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও আড়াই লাখ সাবান বরাদ্দ দিয়েছি। সূত্রঃবাংলা ট্রিবিউন