১৬ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা পৌর মেয়র মোশাররফ বরখাস্ত

  • Update Time : ০৯:২৮:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১
  • / 150
এস ইসলাম, নাটোর:
অবশেষে নানা অভিযোগে সাময়িকভাবে  বরখাস্ত হলেন ১৬ বছর ধরে একটানা দায়িত্ব পালন করা বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন।
.
পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা সর্বোপরি এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে মেয়র মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
.
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ শাখা থেকে উপ-সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত একটি পত্রে পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
.
পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ করা, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা, এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করায়, তার এহেন কর্মকান্ড স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর উপধারা ৩১(১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.
ওই পত্রে বলা হয়েছে, বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২(১) (খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের পক্ষে হানিকর, অসদাচারন তথা ক্ষমতার অপব্যবহার পযার্য়ভুক্ত। এছাড়া তার কারন দশার্নোর জবাব সন্তোষজনক নয় এবং এডিপি ব্যয়ে অনিয়মের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। যেহেতু  মেয়র মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও নাটোরের জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদনে পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা সর্বোপরি এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর উপধারা ৩২(১) (খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী অপসারনের জন্য প্রমানিত হয়েছে এবং তাকে পৌর মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেহেতু তাকে ৩১(১) ধারা অনুযায়ী  সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত।
.
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
.
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা সদরের পেড়াবাড়িয়া এলাকার মৃত মোহম্মাদ আলীর ছেলে মোশাররফ হোসেন  প্রথমে প্রশাসক এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৬ সালে প্রথম নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদে নিবার্চিত হন। এরপর ২০০৮ সালে পদবী পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন।
.
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পৌরসভার চেয়ারে তিনি অসীন রয়েছেন একটানা প্রায় ১৬ বছর ধরে। ২০০৬ সালে নিবার্চনের পর  ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে এখনও তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভা না রাখার পক্ষে ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তৎকালীন সাংসদ আবু তালহা বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দাখিল করেন।
.
এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধ মামলা করেন। ২০১০ সালে হাইকোর্টে মামলাটি দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


১৬ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা পৌর মেয়র মোশাররফ বরখাস্ত

Update Time : ০৯:২৮:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১
এস ইসলাম, নাটোর:
অবশেষে নানা অভিযোগে সাময়িকভাবে  বরখাস্ত হলেন ১৬ বছর ধরে একটানা দায়িত্ব পালন করা বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশাররফ হোসেন।
.
পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা সর্বোপরি এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে মেয়র মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে।
.
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-২ শাখা থেকে উপ-সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত একটি পত্রে পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
.
পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ করা, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা, এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করায়, তার এহেন কর্মকান্ড স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর উপধারা ৩১(১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.
ওই পত্রে বলা হয়েছে, বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২(১) (খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের পক্ষে হানিকর, অসদাচারন তথা ক্ষমতার অপব্যবহার পযার্য়ভুক্ত। এছাড়া তার কারন দশার্নোর জবাব সন্তোষজনক নয় এবং এডিপি ব্যয়ে অনিয়মের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। যেহেতু  মেয়র মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও নাটোরের জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদনে পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ, সরকারি দায়িত্ব পালন না করা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ গ্রহণ না করা সর্বোপরি এডিবির অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম স্থানীয় সরকার  (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর উপধারা ৩২(১) (খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী অপসারনের জন্য প্রমানিত হয়েছে এবং তাকে পৌর মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেহেতু তাকে ৩১(১) ধারা অনুযায়ী  সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা যুক্তিযুক্ত।
.
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের পত্র প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
.
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা সদরের পেড়াবাড়িয়া এলাকার মৃত মোহম্মাদ আলীর ছেলে মোশাররফ হোসেন  প্রথমে প্রশাসক এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৬ সালে প্রথম নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদে নিবার্চিত হন। এরপর ২০০৮ সালে পদবী পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন।
.
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পৌরসভার চেয়ারে তিনি অসীন রয়েছেন একটানা প্রায় ১৬ বছর ধরে। ২০০৬ সালে নিবার্চনের পর  ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে এখনও তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভা না রাখার পক্ষে ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তৎকালীন সাংসদ আবু তালহা বাগাতিপাড়া পৌরসভা বাতিল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দাখিল করেন।
.
এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধ মামলা করেন। ২০১০ সালে হাইকোর্টে মামলাটি দাখিল করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না।