খুবির তিন শিক্ষক বরখাস্ত-অপসারণ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ
- Update Time : ০১:৪১:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১
- / 146
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) একজন শিক্ষককে বরখাস্ত ও দুইজনকে অপসারণের ঘটনায় বিভিন্ন মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার অপরাধে বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। গত শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১২তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, অবাধ্যতা, গুরুতর অসদাচরণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনবিরোধী কার্যক্রম ছাড়াও একাধিক অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, তিনজন শিক্ষক জবাব দিলেও তারা কোনো রকম দুঃখ বা ক্ষমা প্রকাশ করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, কল্পনা করা যায় যে এই (খুবি) ভিসি এটি (শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া) করতে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য আইন ব্যবহার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন পর্যায়ে নামিয়েছেন একবার ভাবুন! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি কর্মকর্তা নয়। তারা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রযোজ্য সুযোগ সুবিধা পায় না আর পেতেও চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এইসবের উর্ধে!
‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শিক্ষকদের নৈতিক দায়িত্ব’ শীর্ষক ফেসবুক লাইভে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন এ ঘটনাকে মুক্তমত প্রকাশে কন্ঠরোধের অপচেষ্টা উল্লেখ করে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের অপর অতিথি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এন এম রবিউল আউয়াল চোধুরীও তার সাথে সহমত পোষণ করেন।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মানস চৌধুরী এ ঘটনাকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার আর্থিক ও অন্যান্য অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলাই এই শিক্ষকদের প্রতি প্রতিহিংসার কারণ উল্লেখ করে ফেসবুকে লিখেছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে হাঁটলেই শিক্ষক ফজলের শিক্ষকতার ধরন ও ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। শাকিলা ও হৈমন্তী ফজলের তুলনায় নবীন শিক্ষক। নিজ নিজ বিভাগে তারা অত্যন্ত মনোযোগী, গুণী আর শিক্ষার্থী-সংসর্গে কাটানো শিক্ষক।
‘অবাধ্যতা’ শব্দটি লক্ষ্য করবেন। ওই শব্দের মধ্যেই এই প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডটি বুঝলে ঠিক বুঝবেন। ‘অসদাচরণ’ আর ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ..’ এইসব ভুংভাং হলো অজুহাত যা বাংলাদেশে অপরিচিত নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সৌভাগ্য ফজলের মতো শিক্ষক পাওয়া। তার বরখাস্তের সাথে জড়িত সবাইকে ধিক্কার জানাই। ফজলের বরখাস্ত রোধ হোক, তার বরখাস্তের সাথে জড়িত সবার চাকরি যাক। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যধি।
এছাড়াও আরো অনেক শিক্ষকেরা বিভিন্ন মাধ্যমে খুবি শিক্ষকদের বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রশাসনের দাবি, তারা মূল ঘটনা বিশদভাবে না জেনে বিভিন্ন বিবৃতি প্রদান করছেন, যা অনাকাঙ্খিত।
প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা আন্দোলনের সময় দুজন শিক্ষকের সাথে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী তাদের এ বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে ৬ দিন ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দুজনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।