সরকারি সহযোগিতা পেলে নকশিকাঁথায় সফল উদ্দোক্তা হতেন শাহনাজ

  • Update Time : ০৪:৪৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ জানুয়ারী ২০২১
  • / 151

এস ইসলাম,নাটোর:

রঙিন কাপড়রের পরতে পরতে সু-নিপুণ হাতের কাজে একেকটি নকশী কাঁথা ফুটে উঠলেও, নাটোরের বাগাতিপাড়ার যোগিপাড়া গ্রামের শাহনাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেসিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়েই তৈরি করেছে এসব নকশী কাঁথা। অবসরে সংসার ও পড়াশোনার ফাঁকে এ কাজের সাথে জড়িয়ে সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। পুঁজির যোগান পেতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় থেকে ঋণ সহায়তা নেয়ায় সিমীত পরিশরে চলছে তার এই কাজ। তাই আত্মনির্ভরশীল এই নারীকে সহজ শর্তে ঋণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, রাজশাহীর আর ডি এ মার্কেটের ব্লক বাটিকের দোকানে ডাইস দেখে নকশী কাঁথার তৈরীতে আগ্রহর সৃষ্টি হয় তার । মাত্র ১৭০০ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯ সালে পুরাতন কাপড়, সুই আর সুতা কিনে নকশী কাঁথা তৈরী করে বিক্রি শুরু করে। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিদিন নকশী কাঁথায় ফুলের ছাপ ও সেলাই এ কর্মব্যস্ততা বেড়েছে শাহনাজের।

কখনো লাল কখনো সাদা কাঁথার জমিনের উপর রঙিন সুতোতে ফুটিয়ে তোলা হয় সূক্ষ্ম নকশা। সুই সুতোর এফোঁড়-ওফোঁড়ে এক একটি নকশী কাঁথা যেন ফুটে ওঠে জীবন্ত প্রতিচ্ছবিতে। মজুরির ওপর নির্ভর করে নান্দনিক এসব কাঁথা সেলাই মেশিনে তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহ খানেক। সংসারের কাজ ও পড়া শোনার ফাঁকে বাড়তি আয় তাকে করেছে স্বনির্ভর। সেই সঙ্গে হয়েছে ভাগ্যেরও বদল।

এখন সে বাড়িতে বসেই এই কাঁথার অর্ডার পান। কাঁথা বিক্রি করেই এখন তার মাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা আয় হয়। একদিন সমাজে মাথা নিচু করে থাকতে হতো, দিন কাটতো অনাহারে। নকশী কাঁথার টাকা তাদের উন্নয়নের চাবিকাঠি । এখন সবাই ডেকে কথা বলে, সমাদর করে, প্রসংশা করে শাহনাজের কাজের অবসরে এই কাঁথা তৈরীতে গ্রামের অন্যান্য নারীরা ধীরে ধীরে কাজ শিখতে ছুটে আসছে।

শাহনাজ দাবী করেন, মফস্বল এলাকা হওয়ায় পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি ও কাজের অর্ডার অনেক কম। ইতি পূর্বে প্রচার না হওয়ায় আমার এ কাজের তেমন প্রসার ঘটেনি । ফলে কাজ করে যে টাকা পাই সেটা খুব বেশি না। সরকারী সহযোগিতা নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারলে নিজের কাজের পরিধি আরও বাড়বে পাশাপাশি এলাকার আরও অনেকেরই মেশিনে কাঁথা তৈরী ও ছাপ দেওয়া কাজের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হবে।

সম্প্রতি শাহনাজের নকশী কাঁথা তৈরী অর্ডার দিতে এসে হাপসা খাতুন এই কাজের ভুয়সী প্রসংশা করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেলাই মেশিনে তৈরী কাঁথার কদর বাড়ছে। এই নকশী কাঁথা বাংলাদেশকে আলাদাভাবে পরিচিত এনে দেবে বিশ্বে।

শাহনাজকে সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন আখতার বলেন, যদি বাণিজ্যিক ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেসিনের সাহায্যে এসব নকশী কাঁথা তৈরী করা যায় তবে তৃণমূল পর্যায়ের নারী কারিগরদের সরকারি সেবার আওতায় আনাসহ উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন তিনি ।

সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে তাকে যদি আমরা বৃহৎ পরিসরে কাজ করাতে পারি, তবে সে উপজেলা ব্র্যান্ডিং হতে পারে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সরকারি সহযোগিতা পেলে নকশিকাঁথায় সফল উদ্দোক্তা হতেন শাহনাজ

Update Time : ০৪:৪৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ জানুয়ারী ২০২১

এস ইসলাম,নাটোর:

রঙিন কাপড়রের পরতে পরতে সু-নিপুণ হাতের কাজে একেকটি নকশী কাঁথা ফুটে উঠলেও, নাটোরের বাগাতিপাড়ার যোগিপাড়া গ্রামের শাহনাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেসিনের সাহায্যে খুব অল্প সময়েই তৈরি করেছে এসব নকশী কাঁথা। অবসরে সংসার ও পড়াশোনার ফাঁকে এ কাজের সাথে জড়িয়ে সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। পুঁজির যোগান পেতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় থেকে ঋণ সহায়তা নেয়ায় সিমীত পরিশরে চলছে তার এই কাজ। তাই আত্মনির্ভরশীল এই নারীকে সহজ শর্তে ঋণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, রাজশাহীর আর ডি এ মার্কেটের ব্লক বাটিকের দোকানে ডাইস দেখে নকশী কাঁথার তৈরীতে আগ্রহর সৃষ্টি হয় তার । মাত্র ১৭০০ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯ সালে পুরাতন কাপড়, সুই আর সুতা কিনে নকশী কাঁথা তৈরী করে বিক্রি শুরু করে। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত জনদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়ে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রতিদিন নকশী কাঁথায় ফুলের ছাপ ও সেলাই এ কর্মব্যস্ততা বেড়েছে শাহনাজের।

কখনো লাল কখনো সাদা কাঁথার জমিনের উপর রঙিন সুতোতে ফুটিয়ে তোলা হয় সূক্ষ্ম নকশা। সুই সুতোর এফোঁড়-ওফোঁড়ে এক একটি নকশী কাঁথা যেন ফুটে ওঠে জীবন্ত প্রতিচ্ছবিতে। মজুরির ওপর নির্ভর করে নান্দনিক এসব কাঁথা সেলাই মেশিনে তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহ খানেক। সংসারের কাজ ও পড়া শোনার ফাঁকে বাড়তি আয় তাকে করেছে স্বনির্ভর। সেই সঙ্গে হয়েছে ভাগ্যেরও বদল।

এখন সে বাড়িতে বসেই এই কাঁথার অর্ডার পান। কাঁথা বিক্রি করেই এখন তার মাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা আয় হয়। একদিন সমাজে মাথা নিচু করে থাকতে হতো, দিন কাটতো অনাহারে। নকশী কাঁথার টাকা তাদের উন্নয়নের চাবিকাঠি । এখন সবাই ডেকে কথা বলে, সমাদর করে, প্রসংশা করে শাহনাজের কাজের অবসরে এই কাঁথা তৈরীতে গ্রামের অন্যান্য নারীরা ধীরে ধীরে কাজ শিখতে ছুটে আসছে।

শাহনাজ দাবী করেন, মফস্বল এলাকা হওয়ায় পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি ও কাজের অর্ডার অনেক কম। ইতি পূর্বে প্রচার না হওয়ায় আমার এ কাজের তেমন প্রসার ঘটেনি । ফলে কাজ করে যে টাকা পাই সেটা খুব বেশি না। সরকারী সহযোগিতা নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারলে নিজের কাজের পরিধি আরও বাড়বে পাশাপাশি এলাকার আরও অনেকেরই মেশিনে কাঁথা তৈরী ও ছাপ দেওয়া কাজের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হবে।

সম্প্রতি শাহনাজের নকশী কাঁথা তৈরী অর্ডার দিতে এসে হাপসা খাতুন এই কাজের ভুয়সী প্রসংশা করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেলাই মেশিনে তৈরী কাঁথার কদর বাড়ছে। এই নকশী কাঁথা বাংলাদেশকে আলাদাভাবে পরিচিত এনে দেবে বিশ্বে।

শাহনাজকে সাধুবাদ জানিয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিরিন আখতার বলেন, যদি বাণিজ্যিক ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মেসিনের সাহায্যে এসব নকশী কাঁথা তৈরী করা যায় তবে তৃণমূল পর্যায়ের নারী কারিগরদের সরকারি সেবার আওতায় আনাসহ উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও আশ্বাস দেন তিনি ।

সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে তাকে যদি আমরা বৃহৎ পরিসরে কাজ করাতে পারি, তবে সে উপজেলা ব্র্যান্ডিং হতে পারে।