কেমন কাটবে গরীবের ঈদ আনন্দ

  • Update Time : ০১:২১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
  • / 727
এনামুল হকঃ
ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। আমরা প্রতি বছরে দুটি ঈদ পালন করে থাকি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।আর এই ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই খুশি এই আনন্দের অধিকার ধনী-গরীব সবার কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। গরীবের আনন্দ নিহিত ধনীদের দানে।মহান আল্লাহ ধনীদের সম্পদের মাঝেই গরীবের সম্পদ রেখেছেন। গরীবের আনন্দকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার মাঝেই ধনীদের প্রকৃত আনন্দ।
.
ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর।অথচ বর্তমানে সমাজের চিত্র কেমন জানি পাল্টে গেছে।
.
বর্তমানে  গরীব-দুঃখীদের ঈদ আর ধনীদের ঈদ এক সমান নয়। ধনীদের ঈদে বড় ধরনের বাজেট থাকে। তাদের কেনাকাটার ধরন আলাদা, দামি দামি বস্ত্র। কে কার চাইতে মূল্যবান শাড়ি, কাপড়, পাঞ্জাবি পরিধান করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে এমনকি ছেলে-মেয়েদের কেনাকাটার জন্য আলাদা আলাদা বাজেট রাখে। খাবারের ব্যবস্থা যে কত পদের তা হিসাবের বাইরে। মজার মজার খাবার তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। কত আনন্দ, কত মজা, কত উল্লাস, কত খুশি। তার কোন শেষ নেই। অথচ গরীবের ঈদ ভাঙাচুরা ঈদ। স্বল্প আয়, দুবেলা খাবার জুটে না ঠিকমতো পরিধানের পোশাক যোগান কঠিন হয়ে পড়ে। আর ঈদের আয়োজন কী করে করবে তারা? তাই এদের ভাগ্যে নতুন কাপড় জুটে না। পুরাতন কাপড় পরে ঈদগায় মাঠে  উপস্থিত হতে হয়। সন্তানেরা মা- বাবার কাছে বারবার আবদার করে ব্যর্থ হয়। নিম্নমানের খাবার কিছু গুড়া দুধ আর সেমাই তাও ব্যবস্থা করতেও তাদের কত কষ্ট। এ ধরনের গরীব অসহায় মানুষদের প্রতি নজর দেওয়া বিত্তবান ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন।
.
কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেটা শুধুমাত্র চোখে পরার মত, কিন্তু মুখে বলার মত সাহস কিংবা মানসিকতা, ইচ্ছা কোনটাই কারও নেই। যেমন ধরুন আমাদের সমাজে এমন কিছু উচ্চবিত্ত পরিবার আছে যা কেবলমাত্র নিজেদের বিলাসিতার জন্য দুহাতে হাজার হাজার  টাকা খরচ করে। বরং তার হাতের কাছে, তারই পাশে এমনও এক পরিবার আছে, যারা হাজার টাকা তো দুরের কথা একশ টাকা খরচ করতে পারেনা, এমনও অনেক পরিবার আছে যারা ঈদ উপলক্ষে নিজেদের বিলাসিতার জন্য তো করেই, এমনকি ঘরের আসবাবপত্রও পরিবর্তন করে।
.
ঘর সাজাতে দামি দামি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ফুলের টপ, ফুলদানি ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্র কিনে থাকে। কিন্তু তারই পাশে বসবাসরত এমন পরিবার আছে যারা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে নিজেদের সন্তানের জন্য একটা জামা কিনার ক্ষমতা তাদের নেই।কিন্তু  কেন এই ভেদাভেদ  আমাদের সমাজে অথচ এই যে ভেদাভেদ , এটাকে আমরা কেবল ফুটিয়ে তুলতে পারি সবার সামনে। কিন্তু এই ভেদাভেদ  ভেঙে ফেলতে পারিনা। বর্তমানে দেখা যায় গরীবের এই কষ্টটাকে উপহাস করা হচ্ছে। যেমন দেখা যায় ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল নানা রকমের অনুষ্ঠান হচ্ছে গরীবদের ঈদ নিয়ে। তারা কিভাবে ঈদের সময় কাটালো সেই চিত্রটি ফুটিয়ে তুলছে ক্যামেরার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের সামনে ।আবার ক্যামেরার সামনেই গরীবদেরকে সহানুভুতি দেখাচ্ছে। যে উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা উপস্থাপনা করছে, সে নিজে গরীব বাচ্চাটাকে দেখিয়ে আফসোস করছে। অথচ তার বিবেকে এতটুকু প্রশ্ন জাগেনি যে, তার পরনে হাজার টাকার দামে পোষাক। আর যাকে নিয়ে আফসোস করা হচ্ছে সে হয়ত বা খালি গায়ে, না হয়, সে ছেড়াঁ গেঞ্জি বা ময়লা একটা শার্ট পরা কিন্তু  এই তফাৎ কেন? হাজার টাকার দামি পোষাক না পরে ওখান থেকে কিছু তাদের সাহায্য করলে তো তারা খুশি হত। আমরা ভেবেছি ক্যামেরার সামনে গরীবদের নিয়ে প্রতিবেদন দেখিয়ে তাদের প্রতি সহানুভুতি করছি। কিন্তু এতে সহানুভুতিটা প্রমান হয় নাকি স্বার্থপরতা। তারা কি প্রমান করতে চায় তাদের মুখের মহানুভবতা।আচ্ছা  এটাকে কি মহানুভবতা বলে নাকি এটা কে উপহাস বলে।
.
উপস্থাপক উপস্থাপিকারা উপস্থাপনা করে যাতে গরীবের এই দুঃখটা ধনীদের চোখে পড়ে।কিন্তু তারা জানেনা সম্পদের লোভে ধনীদের চোখে পর্দা পড়ে গেছে। তারা মুখ দিয়েই শুধু আফসোস করবে। তারা শুধুমাত্র মুখের ব্যবহার করবে, কিন্তু অন্তরের ব্যবহার করবে না। এই ধরুন এই সমাজে কেউ কোটি কোটি টাকা পয়সা,বাড়ি গাড়ী,শিল্পকারখানা,ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক আবার কেউ একেবারে নিঃস্ব। একজন কোটিপতি মানুষ যদি মাসে ১০-১৫ লক্ষ টাকা আয় করে এবং তিনি যদি ঐ আয়কৃত টাকা থেকে তার একজন গরীব কর্মচারীকে বিশ  হাজার টাকা দেয়। তবে পরের দিন সেই গরীব কর্মচারী আর গরীব থাকবে না। আর শুধুমাত্র এই ব্যবস্থা সম্ভব হবে যাকাত প্রথা চালু করার মাধ্যমে। এত কিছু পরখ করে বুঝা যায় বাংলাদেশের ধনীদের শুধু ধন আছে প্রকৃত  মন কারো নাই‌। আর যে ধনীর ধন আছে কিন্তু মন নাই, সে প্রকৃতপক্ষে অভাবমুক্ত নয়।
.
প্রকাশ থাকে যে, সকল ধনী যদি সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করে তাহলে গরীবদের সংখ্যা কমতে থাকবে। কারণ যাকাতের অর্থ থেকে একজন গরীবকে কিছু বেশি পরিমাণে দান করে তাকে ছোট খাট একটি ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিলে হয়তবা সেও একদিন ইনশাআল্লাহ যাকাত প্রদান করতে সক্ষম হবে।
.
রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস-
১. হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সা.-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ (যাকাত) প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্চা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী: ১৪১১, সহীহ্ মুসলিম: ১০১১)
 
২. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহীহ্ বুখারী: ১৪০৩)
 
৩. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ্ বুখারী: ১৪৪২, সহীহ্ মুসলিম: ১০১০)
 
৪. হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯)
 
৫. হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনি ‘উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যেসব জমিতে বৃষ্টি ও ঝরনার পানিতে সেচ হয়, অথবা যেসব জমিতে উপরিভাগ থেকে সেচ করা হয়, সেসব জমির ফসলে যাকাতের পরিমাণ এক দশমাংশ। আর যেসব জমিতে কূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জমির ফসলের বিশ ভাগের একাংশ যাকাত (উশর) দিতে হবে। (সীহ। বুখারী: ১৪৮৩)
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কেমন কাটবে গরীবের ঈদ আনন্দ

Update Time : ০১:২১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
এনামুল হকঃ
ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। আমরা প্রতি বছরে দুটি ঈদ পালন করে থাকি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।আর এই ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই খুশি এই আনন্দের অধিকার ধনী-গরীব সবার কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। গরীবের আনন্দ নিহিত ধনীদের দানে।মহান আল্লাহ ধনীদের সম্পদের মাঝেই গরীবের সম্পদ রেখেছেন। গরীবের আনন্দকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার মাঝেই ধনীদের প্রকৃত আনন্দ।
.
ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর।অথচ বর্তমানে সমাজের চিত্র কেমন জানি পাল্টে গেছে।
.
বর্তমানে  গরীব-দুঃখীদের ঈদ আর ধনীদের ঈদ এক সমান নয়। ধনীদের ঈদে বড় ধরনের বাজেট থাকে। তাদের কেনাকাটার ধরন আলাদা, দামি দামি বস্ত্র। কে কার চাইতে মূল্যবান শাড়ি, কাপড়, পাঞ্জাবি পরিধান করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে এমনকি ছেলে-মেয়েদের কেনাকাটার জন্য আলাদা আলাদা বাজেট রাখে। খাবারের ব্যবস্থা যে কত পদের তা হিসাবের বাইরে। মজার মজার খাবার তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। কত আনন্দ, কত মজা, কত উল্লাস, কত খুশি। তার কোন শেষ নেই। অথচ গরীবের ঈদ ভাঙাচুরা ঈদ। স্বল্প আয়, দুবেলা খাবার জুটে না ঠিকমতো পরিধানের পোশাক যোগান কঠিন হয়ে পড়ে। আর ঈদের আয়োজন কী করে করবে তারা? তাই এদের ভাগ্যে নতুন কাপড় জুটে না। পুরাতন কাপড় পরে ঈদগায় মাঠে  উপস্থিত হতে হয়। সন্তানেরা মা- বাবার কাছে বারবার আবদার করে ব্যর্থ হয়। নিম্নমানের খাবার কিছু গুড়া দুধ আর সেমাই তাও ব্যবস্থা করতেও তাদের কত কষ্ট। এ ধরনের গরীব অসহায় মানুষদের প্রতি নজর দেওয়া বিত্তবান ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন।
.
কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেটা শুধুমাত্র চোখে পরার মত, কিন্তু মুখে বলার মত সাহস কিংবা মানসিকতা, ইচ্ছা কোনটাই কারও নেই। যেমন ধরুন আমাদের সমাজে এমন কিছু উচ্চবিত্ত পরিবার আছে যা কেবলমাত্র নিজেদের বিলাসিতার জন্য দুহাতে হাজার হাজার  টাকা খরচ করে। বরং তার হাতের কাছে, তারই পাশে এমনও এক পরিবার আছে, যারা হাজার টাকা তো দুরের কথা একশ টাকা খরচ করতে পারেনা, এমনও অনেক পরিবার আছে যারা ঈদ উপলক্ষে নিজেদের বিলাসিতার জন্য তো করেই, এমনকি ঘরের আসবাবপত্রও পরিবর্তন করে।
.
ঘর সাজাতে দামি দামি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ফুলের টপ, ফুলদানি ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্র কিনে থাকে। কিন্তু তারই পাশে বসবাসরত এমন পরিবার আছে যারা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে নিজেদের সন্তানের জন্য একটা জামা কিনার ক্ষমতা তাদের নেই।কিন্তু  কেন এই ভেদাভেদ  আমাদের সমাজে অথচ এই যে ভেদাভেদ , এটাকে আমরা কেবল ফুটিয়ে তুলতে পারি সবার সামনে। কিন্তু এই ভেদাভেদ  ভেঙে ফেলতে পারিনা। বর্তমানে দেখা যায় গরীবের এই কষ্টটাকে উপহাস করা হচ্ছে। যেমন দেখা যায় ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল নানা রকমের অনুষ্ঠান হচ্ছে গরীবদের ঈদ নিয়ে। তারা কিভাবে ঈদের সময় কাটালো সেই চিত্রটি ফুটিয়ে তুলছে ক্যামেরার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের সামনে ।আবার ক্যামেরার সামনেই গরীবদেরকে সহানুভুতি দেখাচ্ছে। যে উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা উপস্থাপনা করছে, সে নিজে গরীব বাচ্চাটাকে দেখিয়ে আফসোস করছে। অথচ তার বিবেকে এতটুকু প্রশ্ন জাগেনি যে, তার পরনে হাজার টাকার দামে পোষাক। আর যাকে নিয়ে আফসোস করা হচ্ছে সে হয়ত বা খালি গায়ে, না হয়, সে ছেড়াঁ গেঞ্জি বা ময়লা একটা শার্ট পরা কিন্তু  এই তফাৎ কেন? হাজার টাকার দামি পোষাক না পরে ওখান থেকে কিছু তাদের সাহায্য করলে তো তারা খুশি হত। আমরা ভেবেছি ক্যামেরার সামনে গরীবদের নিয়ে প্রতিবেদন দেখিয়ে তাদের প্রতি সহানুভুতি করছি। কিন্তু এতে সহানুভুতিটা প্রমান হয় নাকি স্বার্থপরতা। তারা কি প্রমান করতে চায় তাদের মুখের মহানুভবতা।আচ্ছা  এটাকে কি মহানুভবতা বলে নাকি এটা কে উপহাস বলে।
.
উপস্থাপক উপস্থাপিকারা উপস্থাপনা করে যাতে গরীবের এই দুঃখটা ধনীদের চোখে পড়ে।কিন্তু তারা জানেনা সম্পদের লোভে ধনীদের চোখে পর্দা পড়ে গেছে। তারা মুখ দিয়েই শুধু আফসোস করবে। তারা শুধুমাত্র মুখের ব্যবহার করবে, কিন্তু অন্তরের ব্যবহার করবে না। এই ধরুন এই সমাজে কেউ কোটি কোটি টাকা পয়সা,বাড়ি গাড়ী,শিল্পকারখানা,ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক আবার কেউ একেবারে নিঃস্ব। একজন কোটিপতি মানুষ যদি মাসে ১০-১৫ লক্ষ টাকা আয় করে এবং তিনি যদি ঐ আয়কৃত টাকা থেকে তার একজন গরীব কর্মচারীকে বিশ  হাজার টাকা দেয়। তবে পরের দিন সেই গরীব কর্মচারী আর গরীব থাকবে না। আর শুধুমাত্র এই ব্যবস্থা সম্ভব হবে যাকাত প্রথা চালু করার মাধ্যমে। এত কিছু পরখ করে বুঝা যায় বাংলাদেশের ধনীদের শুধু ধন আছে প্রকৃত  মন কারো নাই‌। আর যে ধনীর ধন আছে কিন্তু মন নাই, সে প্রকৃতপক্ষে অভাবমুক্ত নয়।
.
প্রকাশ থাকে যে, সকল ধনী যদি সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করে তাহলে গরীবদের সংখ্যা কমতে থাকবে। কারণ যাকাতের অর্থ থেকে একজন গরীবকে কিছু বেশি পরিমাণে দান করে তাকে ছোট খাট একটি ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিলে হয়তবা সেও একদিন ইনশাআল্লাহ যাকাত প্রদান করতে সক্ষম হবে।
.
রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস-
১. হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সা.-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ (যাকাত) প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্চা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী: ১৪১১, সহীহ্ মুসলিম: ১০১১)
 
২. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহীহ্ বুখারী: ১৪০৩)
 
৩. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ্ বুখারী: ১৪৪২, সহীহ্ মুসলিম: ১০১০)
 
৪. হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯)
 
৫. হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনি ‘উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যেসব জমিতে বৃষ্টি ও ঝরনার পানিতে সেচ হয়, অথবা যেসব জমিতে উপরিভাগ থেকে সেচ করা হয়, সেসব জমির ফসলে যাকাতের পরিমাণ এক দশমাংশ। আর যেসব জমিতে কূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জমির ফসলের বিশ ভাগের একাংশ যাকাত (উশর) দিতে হবে। (সীহ। বুখারী: ১৪৮৩)