দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যু

  • Update Time : ০১:৪২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১
  • / 169

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন ওই রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, দেশে প্রথম কালো ছত্রাকে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে একজন মারা গেলেন। যিনি মারা গেছেন, তার অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, কিডনির সমস্যা ছিল। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি সুস্থও হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলেন বলে বোঝা গেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, অন্য যে রোগী ভর্তি ছিলেন, তার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। তাকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ওষুধের দাম অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওষুধের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে।

শনাক্ত হওয়া রোগীর বয়স ৫৫। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এক মাস আগে তার করোনা শনাক্ত হয়। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেলেন, তবে জ্বর দেখা দিলে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার বারডেমে পাঠান।

ওই রোগী চার-পাঁচ বছর ধরে ডায়বেটিসে ভুগছেন। জ্বর ও কাশি কমে না যাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে যক্ষ্মার ওষুধ দেন। পরে দেখা গেছে তিনি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত বলে জানান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশেও শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গবেষকরা বলছেন, সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝেই দেখা গেছে এই ছত্রাকের উপস্থিতি। এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকেও আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

করোনাভাইরাসের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। আর তা থেকেই কালো ছত্রাক বিস্তার লাভ করে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন গবেষকরা।

উপসর্গ

কালো ছত্রাকে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে : নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, যার থেকে পরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়, এবং নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া।

প্রতিরোধ

চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯’র রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে কিনা তবেই এ ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এ জন্য রোগী সুস্থ হওয়ার পর বা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তার রক্তে শর্করার মাত্রা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা জরুরি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকে তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা কোনো কোনো ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

ভারতে মিউকরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media


দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যু

Update Time : ০১:৪২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন ওই রোগী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, দেশে প্রথম কালো ছত্রাকে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে একজন মারা গেলেন। যিনি মারা গেছেন, তার অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, কিডনির সমস্যা ছিল। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি সুস্থও হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলেন বলে বোঝা গেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, অন্য যে রোগী ভর্তি ছিলেন, তার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। তাকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ওষুধের দাম অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওষুধের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে।

শনাক্ত হওয়া রোগীর বয়স ৫৫। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এক মাস আগে তার করোনা শনাক্ত হয়। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেলেন, তবে জ্বর দেখা দিলে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার বারডেমে পাঠান।

ওই রোগী চার-পাঁচ বছর ধরে ডায়বেটিসে ভুগছেন। জ্বর ও কাশি কমে না যাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে যক্ষ্মার ওষুধ দেন। পরে দেখা গেছে তিনি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত বলে জানান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশেও শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গবেষকরা বলছেন, সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝেই দেখা গেছে এই ছত্রাকের উপস্থিতি। এ ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকেও আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

করোনাভাইরাসের জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। আর তা থেকেই কালো ছত্রাক বিস্তার লাভ করে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন গবেষকরা।

উপসর্গ

কালো ছত্রাকে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে : নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, যার থেকে পরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায়, এবং নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া।

প্রতিরোধ

চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড-১৯’র রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে কিনা তবেই এ ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এ জন্য রোগী সুস্থ হওয়ার পর বা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তার রক্তে শর্করার মাত্রা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা জরুরি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকে তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা কোনো কোনো ব্যক্তিও এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

ভারতে মিউকরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮০০ জন এই ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছে।