শ্রীলঙ্কার তরুণ দলটিকে ২৫৮ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি সহজেই জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, ১৪৯ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মিরাজ-সাকিবরা। এরপরেও বাংলাদেশের সামনে একাই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। কঠিন পরিস্থিতিতে লঙ্কানদের জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়নি। কষ্ট করে প্রথম ওয়ানডে ৩৩ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। তাতে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।
অথচ শুরুর আগে এই ম্যাচ হওয়া নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। লঙ্কান শিবিরে করোনা পজিটিভ হয়েছেন একজন। এরপরেও মাঠে ম্যাচ গড়িয়েছে নির্ধারিত সময়ে। সেই ম্যাচে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। টস জিতে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করে ২৫৭ রান। তামিমের ৫২ রানের পর স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয় মূলত মুশফিকুর রহিমের ৮৪ ও মাহমুদউল্লাহর ৫৪ রানের কল্যাণে।
মিরপুরের ধীরগতির পিচে এমন লক্ষ্য পেয়েও তুলনায় আত্মবিশ্বাসী সূচনা ছিল শ্রীলঙ্কার। শুরুর ৫ ওভারেই তারা তুলে ফেলেছিল ৩০ রান। কিন্তু লঙ্কানদের আত্মবিশ্বাসী সূচনায় আঘাত হেনেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
মেহেদী মিরাজ শুরুতে সাফল্য পাননি যদিও। শুরুতে মেরে খেলার দিকে মনোযোগী ছিলেন ওপেনার গুনাথিলাকা। ১৯ বলে ৫টি চারে ২১ রান তুলেছিলেন। অধিনায়ক কুশল পেরেরা অবশ্য ধীরে চলো নীতিতে খেলতে থাকেন। আক্রমণাত্মক গুনাথিলাকা শেষ পর্যন্ত মেরে খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। মিরাজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে লঙ্কান ওপেনার ফেরেন ২১ রানে।
এরপর বল করতে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে বোলিংয়ে নেমে উইকেটও তুলে নেন কাটার মাস্টার। নিসাঙ্কাকে আফিফের ক্যাচ বানান তিনি।
তাৎক্ষণিক দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় লঙ্কানদের এগিয়ে নেন ওপেনার কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। ৪১ রান তুলে ফেলেছিল এই জুটি। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো জুটিটি-ই ভেঙেছেন সাকিব। ১৯তম ওভারে তালুবন্দি করান মেন্ডিসকে (২৪)। অবশ্য নিজের প্রথম ওভারেই পেরেরাকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তার বলে ক্যাচ উঠলেও সেটি পড়েছিল কিঞ্চিত বাইরে।
তখন সাকিব না পারলেও বিপজ্জনক পেরেরাকে পরে ঠিকই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ৩০ রান করা লঙ্কান অধিনায়ককে বোল্ড করেছেন তিনি। এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও আঘাত হানেন এই অফস্পিনার। ফেরান ৯ রান করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। মিরাজের ঘূর্ণিতে বল প্যাডে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। এরপর আশেন বান্দারাকে বোল্ড করে লঙ্কানদের সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন তিনি।
অথচ এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝে থেকেও ব্যাট চালিয়ে লঙ্কানদের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দাসুন শানাকা কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে সাইফের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেও থেমে থাকেননি হাসারাঙ্গা। ৩০ বলে ঝড়ো ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার জয়টাই বুঝি সম্ভাব্য। ৬০ বলে ৭৪ রান করে ফেলা এই বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানকেই বিদায় দিয়েছেন সাইফ। ৪৪তম ওভারে মেরে খেলতে গিয়ে আফিফের বলে তালুবন্দি হন তিনি। তাতে সব সম্ভাবনার ইতি ঘটে শ্রীলঙ্কার। হাসারাঙ্গার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৫টি ছয়ের মার। এরপর উদানাকে (২১) ফিরিয়ে জয়টাকে আরও কাছে নিয়ে আসেন মোস্তাফিজুর। দুষ্মন্থ চামিরার উইকেটটি তুলে নিয়ে লেজও ছেঁটে দেন তিনি। তাতে শ্রীলঙ্কা ৪৮.১ ওভারে গুটিয়ে গেছে ২২৪ রানে।
মেহেদী মিরাজ ৩০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৩৪ রানে ৩টি নিয়েছেন মোস্তাফিজুর। ৪৯ রানে দুটি নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও ৪৪ রানে একটি নিয়েছেন সাকিব। সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুশফিক।