জনগণের জন্য কী করেছি, তা হিসাব করার সময় এখন: রাষ্ট্রপতি
- Update Time : ০৭:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / 189
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এখন রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থের কথা আগে ভাবেন দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, জনগণের জন্য রাজনৈতিক নেতারা কী করেছে, তার হিসেব করার সময় এখন।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বরিশাল রাডার ইউনিট এবং হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু তার সমাপনী ভাষণে মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন,‘যারা তোমায় মাহিনা দেয়, তোমার সংসার চালায়, ট্যাক্স দেয়, তার কাছে তুমি আবার পয়সা খাও! মেন্টালিটি চেঞ্জ করতে হবে। সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট-আমরা জনগণের সেবক, আমরা জনগণের মাস্টার নই। এই মেন্টালিটি আমাদের চেঞ্জ করতে হবে। আর যাদের পয়সায় আমাদের সংসার চলে, যাদের পয়সায় আমাদের রাষ্ট্র চলে, যাদের পয়সার আমরা গাড়ি চড়ি, আমরা কার্পেট ব্যবহার করি, তাদের জন্য কী করলাম- সেটাই আজ বড় জিনিস’।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুল হামিদ বলেন, “দেশের জনগণ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, সর্বোপরি দেশের যে কোনো প্রয়োজনে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এখন সময় এসেছে আমরা তাদের জন্য কতটুকু করেছি বা করছি, তা হিসেব করার।
“কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ আমরা বলি, আমরা কী পেলাম। বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে সবসময়ই দেখেছি, তিনি নিজে যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন। নিজের বা পরিবারের কথা না ভেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণই ছিল তার সকল চিন্তা-চেতনায়।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ বলেন, “মনে রাখবেন, আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হলেও এদেশেরই সন্তান। দেশের জনগণেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আপনারাও দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার সমান অংশীদার। তাই পেশাদারিত্বের নিপুণতা বজায় রাখার পাশাপাশি জনগণের প্রয়োজনে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
“এবছর আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী পালন করছি। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটাই হোক সকলের চাওয়া পাওয়া।”
বরিশালে রাডার ইউনিটের গুরুত্ব তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থান, বিশাল সমুদ্রসীমার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিরাপত্তা বিধান, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা দ্রুত ও সহজতর করতে এবং এই অঞ্চলের আকাশসীমা পর্যবেক্ষণে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বরিশাল রাডার ইউনিট স্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমি আশা করি, নতুন অন্তর্ভুক্ত রাডার বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রাঞ্চল তথা সমগ্র মহীসোপান এলাকায় টহলরত বিমানসমূহকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে এবং তাদের চলাচল ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।”
সিমুলেটর ইন্সটিটিউট প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, “উন্নত দেশগুলোতে বৈমানিকদের প্রকৃত উড্ডয়নের পূর্বে সিমুলেটরের মাধ্যমে উড্ডয়ন করানো হয়। এতদিন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কোনো সিমুলেটর ট্রেনিং ইন্সটিটিউট না থাকায় হেলিকপ্টারের সমগ্র উড্ডয়ন প্রশিক্ষণই বাস্তব উড্ডয়নের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হত, যা ছিল ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। নবনির্মিত হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আমাদের বৈমানিকগণের উড্ডয়নের একটি অংশ সিমুলেটরের মাধ্যমে সম্পন্ন করবে। ফলে প্রশিক্ষণ ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।
“ এছাড়া সিমুলেটর ফ্লাইং একটি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা হওয়ায় এর উপর আবহাওয়ার কোনো প্রভাব পড়ে না। ফলে বছরের যে-কোনো সময়, যে-কোনো আবহাওয়ায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব। এই সিমুলেটর সংযোজনের মাধ্যমে হেলিকপ্টার পাইলটগণকে অত্যন্ত কার্যকর ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান সহজতর হবে।”
বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মনে রাখবেন, পরিশ্রম ও সততার কোনো বিকল্প নেই। সুদৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও দেশপ্রেমই আপনাদেরকে পেশাগত জীবনে উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
“পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগের স্বার্থকতা আসবে আপনাদের একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে। দেশসেবা এবং জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন – আপনাদের কাছে দেশবাসীর এটাই প্রত্যাশা।”
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফলক উন্মোচন করেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।