আগে নিবন্ধন পরে টিকা

  • Update Time : ০২:৪৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 224

দেশে জাতীয়ভাবে রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস রোধকারী টিকাদান কর্মসূচি। সারাদেশে প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। আর দ্বিতীয় দিন সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টিকা নিয়েছেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। তবে দ্বিতীয় দিন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ, তারা নিবন্ধনের বিষয়টি সঠিকভাবে জানেন না। তাছাড়া মানুষের কাছে নানান কথা শুনেছেন। ফলে টিকা গ্রহণের বিষয়ে এখনও  সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল—করোনার টিকা নিতে হলে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে আগে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ‘সুরক্ষা’ নামের ওয়েবসাইটে  নিবন্ধনের পর তার মোবাইল ফোনে সরকারিভাবে এসএমএস যাবে। সেখানে তার টিকা নেওয়ার তারিখ এবং কেন্দ্রের নামও জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘নিবন্ধন পরে হলেও চলবে, কিন্তু টিকা নিতে হবে আগে। নিবন্ধন জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও জরুরি টিকা নেওয়া।’ শনিবার টিকার উদ্বোধনী দিনেও তিনি বলেছেন, ‘টিকা নিতে হলে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হচ্ছে। যদি ওই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে কষ্ট হয়, আমাদের  নির্দেশনা আছে, ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ের তথ্যসেন্টারে তারা নিবন্ধিত হয়ে টিকা নিতে পারবেন। তাও যদি না পারেন, তাহলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ফরম ফিলাপ করবেন,টিকা নেবেন এবং পরবর্তীতে  ফরমটিকে অ্যান্ট্রি করে নেওয়া হবে। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন না নিয়ে কেউ ফেরত যাবেন না। এটাই আমাদের  লক্ষ্য।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এখনও এ বিষয়ে কর্মকৌশল ঠিক করতে পারেনি। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার কাছে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। তবে নিবন্ধনের আগে টিকা দিলে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে, সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ নিবন্ধন করেই টিকা দিতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে টিকা দিতে চাই, না হলে সমস্যা হবে। যদিও আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে টিকা নিতে এসে কেউ যেন ফিরে না যায়। তবে কবে নাগাদ  অনস্পট রেজিস্ট্রেশন হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

অনেকেই মনে করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতর, কিংবা সরকারি মহলের এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণেই মূলত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার দেখা গেছে, অনেকেই এসেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে। তারা তখনই সেখানে নিবন্ধন করিয়ে টিকা নিতে চাচ্ছেন। আবার কেউ এসেছেন মোবাইলে এসএমএস পেয়ে। যদিও এদের কারও ভাগ্যেই টিকা জুটেনি।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আব্দুল মুসাব্বিরের বয়স ৭৮ বছর। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসছেন  টিকা নিতে। বললেন, ‘কাছাকাছি থাকি, ভেবেছিলাম এখানে এসে রেজিস্ট্রশন করে টিকা নেবো,কিন্তু হলো না।’

সরকার তো বলেছে,আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, রেজিস্ট্রেশন না করে কেন এলেন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘আমি জানতাম না। কোথাও তো এটা প্রচারও করা হয়নি। এতবড় কাজের যদি  প্রচার না থাকে, তাহলে মানুষ জানবে কী করে।’

গত ৩০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।মোবাইল ফোনে এখনও এসএমএস পাননি। তিনি বলেন,  ‘শনিবার বলা হলো, টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা দেওয়া যাবে।সেজন্যই এসেছি।’ এ কথা কে বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী সাহেব ( স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক)  বলেছেন, ‘৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা আইডি কার্ড নিয়ে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে টিকা দেওয়া হবে।’ কিন্তু  কই, তার তো কোনও কার্যকর প্রতিফলন দেখতেছি না এখানে।’’

পরে দেখা গেলো, মহিউদ্দিন আহমদের মোবাইলে  রেজিস্ট্রেশন পুরোটা সম্পন্ন হয়নি।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল নিজেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেননি। রেজিস্ট্রেশন না করতে পেরে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরে ই-মেইল করেন। এরপর অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা তার রেজিস্ট্রেশন করে দেন।

অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য হয়েও যদি জটিলতায় পড়তে হয়,তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য তা কতটা কঠিন— এমন প্রশ্নে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘‘এটা আসলেই খুব কঠিন। আমিতো জানতামই না ওটিপি কী জিনিস। যখন নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দেই, তখন বলা হলো— একটি ওটিপি নম্বর যাবে মোবাইলে। ফোন দিলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরে। কর্মকর্তা জানালেন, ‘এটা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড।’ সেটা দিলাম। পরে আরও একবার দিতে হলো। এই যে ওটিপি দু’বার আসতে পারে, এটা বুঝতে পারাও কি সহজ?’’

আবু জামিল ফয়সালের মতো অনেকেই রেজিস্ট্রেশনের জটিলতায় পড়েছেন নিবন্ধন করতে গিয়ে। মো. নুরুল ইসলাম মিয়া তাদের একজন। ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট লেকচারার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মতো মানুষ যখন রেজিস্ট্রেশন করতে ফেল করে, তখন আর এই সিস্টেম সম্পর্কে কিছু বলার থাকে না। ’

নুরুল ইসলামের  জন্ম তারিখ ১৬ অক্টোবর,১৯৫২। কিন্তু অ্যাপের ফরমে ৫২ লিখলেই সেটা নিচ্ছে না, জানান তিনি। গত ৩ দিন ধরে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছেন,না পেরে অবশেষে এই হাসপাতালে এসেছেন,বলেন তিনি।

স্পটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে,টিকা নেওয়া যাবে— শনিবারও টেলিভিশনে এ কথা বলেছেন  স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সে কথা শুনেই হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না, টিকাও দিতে পারছি না— বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন ধানমন্ডি থেকে আসা আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাকে যদি তারিখ দিয়ে বলতো— ১৫ দিন পরে আসেন। তাহলে আমি একদিন আগেও আসতাম না। এই যে ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের, আমারতো টিকা নেওয়ার প্রতি আগ্রহই চলে যাচ্ছে। কেবল ভিআইপিদেরই না, সাধারণ মানুষেরও সময়ের দাম আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা  বুঝলো না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সোমবার বিকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ১২ হাজার ৫ জন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের থেকে পাঠানো দুই দিনের করোনা টিকা গ্রহীতাদের তালিকায় দেখা যায়, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে টিকা নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে টিকা নিয়েছেন প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আগে নিবন্ধন পরে টিকা

Update Time : ০২:৪৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

দেশে জাতীয়ভাবে রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস রোধকারী টিকাদান কর্মসূচি। সারাদেশে প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। আর দ্বিতীয় দিন সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টিকা নিয়েছেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। তবে দ্বিতীয় দিন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ, তারা নিবন্ধনের বিষয়টি সঠিকভাবে জানেন না। তাছাড়া মানুষের কাছে নানান কথা শুনেছেন। ফলে টিকা গ্রহণের বিষয়ে এখনও  সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল—করোনার টিকা নিতে হলে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে আগে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ‘সুরক্ষা’ নামের ওয়েবসাইটে  নিবন্ধনের পর তার মোবাইল ফোনে সরকারিভাবে এসএমএস যাবে। সেখানে তার টিকা নেওয়ার তারিখ এবং কেন্দ্রের নামও জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘নিবন্ধন পরে হলেও চলবে, কিন্তু টিকা নিতে হবে আগে। নিবন্ধন জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও জরুরি টিকা নেওয়া।’ শনিবার টিকার উদ্বোধনী দিনেও তিনি বলেছেন, ‘টিকা নিতে হলে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হচ্ছে। যদি ওই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে কষ্ট হয়, আমাদের  নির্দেশনা আছে, ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ের তথ্যসেন্টারে তারা নিবন্ধিত হয়ে টিকা নিতে পারবেন। তাও যদি না পারেন, তাহলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ফরম ফিলাপ করবেন,টিকা নেবেন এবং পরবর্তীতে  ফরমটিকে অ্যান্ট্রি করে নেওয়া হবে। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন না নিয়ে কেউ ফেরত যাবেন না। এটাই আমাদের  লক্ষ্য।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর এখনও এ বিষয়ে কর্মকৌশল ঠিক করতে পারেনি। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার কাছে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। তবে নিবন্ধনের আগে টিকা দিলে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে, সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ নিবন্ধন করেই টিকা দিতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে টিকা দিতে চাই, না হলে সমস্যা হবে। যদিও আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে টিকা নিতে এসে কেউ যেন ফিরে না যায়। তবে কবে নাগাদ  অনস্পট রেজিস্ট্রেশন হবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’

অনেকেই মনে করেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতর, কিংবা সরকারি মহলের এ ধরনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কারণেই মূলত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোমবার দেখা গেছে, অনেকেই এসেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে। তারা তখনই সেখানে নিবন্ধন করিয়ে টিকা নিতে চাচ্ছেন। আবার কেউ এসেছেন মোবাইলে এসএমএস পেয়ে। যদিও এদের কারও ভাগ্যেই টিকা জুটেনি।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আব্দুল মুসাব্বিরের বয়স ৭৮ বছর। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসছেন  টিকা নিতে। বললেন, ‘কাছাকাছি থাকি, ভেবেছিলাম এখানে এসে রেজিস্ট্রশন করে টিকা নেবো,কিন্তু হলো না।’

সরকার তো বলেছে,আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, রেজিস্ট্রেশন না করে কেন এলেন প্রশ্নে তিনি বলেন,‘আমি জানতাম না। কোথাও তো এটা প্রচারও করা হয়নি। এতবড় কাজের যদি  প্রচার না থাকে, তাহলে মানুষ জানবে কী করে।’

গত ৩০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।মোবাইল ফোনে এখনও এসএমএস পাননি। তিনি বলেন,  ‘শনিবার বলা হলো, টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা দেওয়া যাবে।সেজন্যই এসেছি।’ এ কথা কে বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী সাহেব ( স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক)  বলেছেন, ‘৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা আইডি কার্ড নিয়ে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে টিকা দেওয়া হবে।’ কিন্তু  কই, তার তো কোনও কার্যকর প্রতিফলন দেখতেছি না এখানে।’’

পরে দেখা গেলো, মহিউদ্দিন আহমদের মোবাইলে  রেজিস্ট্রেশন পুরোটা সম্পন্ন হয়নি।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল নিজেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেননি। রেজিস্ট্রেশন না করতে পেরে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরে ই-মেইল করেন। এরপর অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা তার রেজিস্ট্রেশন করে দেন।

অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য হয়েও যদি জটিলতায় পড়তে হয়,তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য তা কতটা কঠিন— এমন প্রশ্নে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘‘এটা আসলেই খুব কঠিন। আমিতো জানতামই না ওটিপি কী জিনিস। যখন নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দেই, তখন বলা হলো— একটি ওটিপি নম্বর যাবে মোবাইলে। ফোন দিলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরে। কর্মকর্তা জানালেন, ‘এটা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড।’ সেটা দিলাম। পরে আরও একবার দিতে হলো। এই যে ওটিপি দু’বার আসতে পারে, এটা বুঝতে পারাও কি সহজ?’’

আবু জামিল ফয়সালের মতো অনেকেই রেজিস্ট্রেশনের জটিলতায় পড়েছেন নিবন্ধন করতে গিয়ে। মো. নুরুল ইসলাম মিয়া তাদের একজন। ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট লেকচারার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মতো মানুষ যখন রেজিস্ট্রেশন করতে ফেল করে, তখন আর এই সিস্টেম সম্পর্কে কিছু বলার থাকে না। ’

নুরুল ইসলামের  জন্ম তারিখ ১৬ অক্টোবর,১৯৫২। কিন্তু অ্যাপের ফরমে ৫২ লিখলেই সেটা নিচ্ছে না, জানান তিনি। গত ৩ দিন ধরে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছেন,না পেরে অবশেষে এই হাসপাতালে এসেছেন,বলেন তিনি।

স্পটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে,টিকা নেওয়া যাবে— শনিবারও টেলিভিশনে এ কথা বলেছেন  স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সে কথা শুনেই হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছি না, টিকাও দিতে পারছি না— বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন ধানমন্ডি থেকে আসা আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাকে যদি তারিখ দিয়ে বলতো— ১৫ দিন পরে আসেন। তাহলে আমি একদিন আগেও আসতাম না। এই যে ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের, আমারতো টিকা নেওয়ার প্রতি আগ্রহই চলে যাচ্ছে। কেবল ভিআইপিদেরই না, সাধারণ মানুষেরও সময়ের দাম আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা  বুঝলো না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সোমবার বিকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত করোনা টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ১২ হাজার ৫ জন। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের থেকে পাঠানো দুই দিনের করোনা টিকা গ্রহীতাদের তালিকায় দেখা যায়, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে টিকা নেওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে টিকা নিয়েছেন প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।