যে কারণে বেজোড় সংখ্যায় ইবাদত করবেন মুমিন
- Update Time : ০৫:২০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০২০
- / 252
বেজোড় ইবাদত আল্লাহর একত্ববাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তায় এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি তাঁর জাত, গুণাবলী এবং কর্তৃত্বেও একক সত্ত্বার অধিকারী। আল্লাহ তাআলা বেজোড়কে বিশেষভাবে ভালোবাসেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বেজোড়; তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম)
তাই ইবাদত যদি বেজোড় হয় তবে তা আল্লাহ তাআলার কাছেও অধিক গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ তাআলা এ দুনিয়াতে মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষের উচিত ইবাদতের ক্ষেত্রে বেজোড়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া।
দিনভর অন্যায়-অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থেকে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকির-আজকার ইত্যাদি আদায় করার নাম ইবাদত নয়। বরং নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত-জিকির-আজকার ইত্যাদির সঙ্গে পরিশুদ্ধ নিয়তে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ভাল কাজই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে পরিগণ্য।
যেহেতু মহান আল্লাহ তাআলা এক। আর তা হচ্ছে বিজোড় সংখ্যা। আবার এ বেজোড়ের সঙ্গে ইসলামের বিশেষ কিছু নিদর্শনও রয়েছে।
সে আলোকে ইবাদতের ক্ষেত্রেও বেজোড়কে গ্রহণ করাও কল্যাণের। কেননা হাদিসেই এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে বেজোড় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাহলো-
– প্রতিদিন বেজোড় সংখ্যা ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করেছেন।
– নামাজের রুকু ও সেজদার তাসবিহ পড়তে ৩/৫/৭ সংখ্যার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
– সপ্তাহিক রোজা সোমবার পালন করে মধ্যে গ্যাপ দিয়ে আবার বৃহস্পতিবার রোজা পালনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যা আলাদা আলাদা ভাবে উভয়টি বেড়োজ।
– প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিন দিন আইয়্যামের বিজের রোজা রাখার ব্যাপারে নসিহত পেশ করেছেন। এ রোজাও বেজোড় ইবাদত।
– মাসব্যাপী ফরজ রোজা ৩০ দিনের পূর্ণ হবে এমন নয়। কোনো কোনো মাস ২৯ দিনে পূর্ণ করেও বেজোড়ের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
– পবিত্র অর্জনের জন্য ওজু করা ইসলামের বিধান। ওজুতে প্রতি অঙ্গ বেজোড় সংখ্যায় ৩ বার ধোয়ার তাগিদও দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
– হজ ও ওমরার আবশ্যক কাজগুলো বেজোড়।
– কাবা শরিফও বেজোড় সংখ্যায় ৭ বার তাওয়াফ করতে হয়।
– ঐতিহাসিক সাফা-মারওয়া পাহাড়ের সাঈকেও বেজোড় সংখ্যা ৭ বার নির্ধারণ করা হয়েছে।
– মিনা প্রান্তরে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপেও রয়েছে বেজোড় সংখ্যার নির্দেশ।
– আইয়ামে তাশরিকে আবশ্যকভাবে ৫ বেজোড় দিন ও বেজোড় ২৩ ওয়াক্ত নামাজে তাকবির পড়ার নির্দেশনা এসেছে।
– – কুরবানি পালনে ১ কিংবা সর্বোচ্চ ৭ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
– পবিত্রতার দিকে গুরুত্বারোপ করে কুলুপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে বেজোড় ৩ সংখ্যার নির্দেশনা।
– নবজাতকের জন্মের পর বেজোড় ৭দিনের মাথায় শিশুর মাথামুণ্ডন ও আকিকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
– মানুষের মৃত্যুর পর কাফনের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য ৩ কাপড় এবং নারীর জন্য ৫ কাপড়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, আল্লাহ তাআলা যে বেজোড়কে পছন্দ করেন, তাঁর বিশাল সৃষ্টির মাঝেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি বেজোড় সংখ্যায় ৭ আসমান, ৭ জমিন সৃষ্টি করেছেন। দিন ও বারের ক্ষেত্রে তিনি ৭কে নির্দিষ্ট করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির ধাপে ধাপে তিনি বেজোড়কে তুলে ধরেছেন। আর এতে রয়েছে চিন্তাশীল মানুষের জন্য গবেষণা ও উপলব্দির জন্য সহায়ক। আল্লাহ তাআলা বার বার কুরআনে এ মর্মে সতর্ক করেছেন-
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর; তাঁর সঙ্গে কাউকে সৃষ্টি কর না।’ অথ্যাৎ বেজোড় সংখ্যায় আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন ও ইবাদত-বন্দেগির নির্দেশনা দিয়েছেন।
সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেজোড় ইবাদতের প্রতি গুরুত্বরোপ করে রাতের ইবাদত বেজোড় নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন-
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বেজোড়; তিনি বেজোড়কে পছন্দ করেন। হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা (বিতর/বেজোড় নামাজ) আদায় কর।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ রাতের গুরুত্বপূর্ণ সময় ইশা এবং ফজরের মধ্যে বিতর নামাজ বেজোড় পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাওহিদ তথা একত্ববাদের ঘোষণার প্রতি খেয়াল রেখে বেজোড় ইবাদতের দিকে ধাবিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ইবাদতেও তাঁর একত্ববাদের প্রতি অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।