১৫ আগস্টের ঘাতকদের বিদেশে চাকরি দেয়া হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

  • Update Time : ০৮:৪৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০
  • / 188

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বঙ্গবন্ধুসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী, শিশু ও রাষ্ট্রপতি হত্যাকারীদের বিদেশ ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হযয়েছিল।

শুক্রবার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সম্পন্ন ৫০ হাজার বার কোরআন খতম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ভিডিও করফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ অধিদফতর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিভিন্ন এতিমখানা ও সরকারি শিশুপল্লী থেকে শিশুরা মোনাজাতে অংশগ্রহণ নেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) এতিম ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে তার মা তাকে রেখে যান। এরপর পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান। এরপর তিনি দাদার কাছে থাকেন। সাত বছর বয়সে দাদাও মারা যান। এরপর আমার দাদি আমার মাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। পরে আমার বাবার সাথে বিয়ে দেন। তখন তার বয়স খুব কম ছিল। আমি আমার মায়ের বড় সন্তান। মায়ের কষ্ট, তার বাবা-মা হারানোর ব্যথা আমি বুঝতাম।

তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখনও তিনি রাষ্ট্রপতি। আমার মা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছায়ার মতো বাবার পাশে ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে যখন আমার বাবা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তখন আমার মা তার পাশাপাশি ছিলেন। পঁচাত্তরের ঘাতকরা আমার বাবা-মা এবং পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যার পর আমার আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৫ আগস্ট এইভাবে তারা আমাদের পরিবারের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম। ৬ বছর আমাদের দেশে আসতে দেয়া হয়নি। আমার বাবার লাশ দেখতে পারিনি, কবর জিয়ারত করতে পারিনি। আমাদেরকে বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে পড়ে থাকা কী যে কষ্ট এটা যারা আমাদের মত হয়েছিল একমাত্র তারাই জানে। ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবেই আমার চিন্তা ছিল আমার বাবা এ দেশের মানুষের জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন, অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। দেশে আশার পর ভাবলাম মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কিছু করে যাব। এখন একটা হত্যাকাণ্ড হোটেলে তারা বিচার চাইতে পারে। আমরা ১৫ আগস্টে বাবা-মাসহ যাদের হারিয়েছিলাম আমাদের মামলা করা বা বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। নারী হত্যাকারী শিশু হত্যাকারী এবং রাষ্ট্রপতি হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়ে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আমরা সে অবস্থা থেকে পরিবর্তন আনতে চাই। এ দেশের মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বিচার পাওয়ার অধিকার থাকে, সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি ।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর সমাজকল্যাণে অনেক অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সংবিধানেও আমাদের শিশুদের অধিকারের কথা বলে গিয়েছেন। আগে শিশু পরিবারগুলোতে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারতো। কিন্তু এখন যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে তারা শিক্ষা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে তারা থাকতে পারবে।

তিনি বলেন, পুরনো প্রতিটি জেলায় জাতির পিতা জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক তাদের জন্য শান্তিনিবাস এবং এতিম শিশুদের যাতে পাশাপাশি থাকতে পারে সেজন্য একটা প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম। এসব প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছাও আমাদের আছে। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই যতটুকু সাধ্য এ দেশের মানুষের জন্য করে যাব, যাতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


১৫ আগস্টের ঘাতকদের বিদেশে চাকরি দেয়া হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

Update Time : ০৮:৪৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বঙ্গবন্ধুসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী, শিশু ও রাষ্ট্রপতি হত্যাকারীদের বিদেশ ও বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হযয়েছিল।

শুক্রবার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ইতোমধ্যে সম্পন্ন ৫০ হাজার বার কোরআন খতম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে ভিডিও করফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ অধিদফতর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিভিন্ন এতিমখানা ও সরকারি শিশুপল্লী থেকে শিশুরা মোনাজাতে অংশগ্রহণ নেয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) এতিম ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে তার মা তাকে রেখে যান। এরপর পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান। এরপর তিনি দাদার কাছে থাকেন। সাত বছর বয়সে দাদাও মারা যান। এরপর আমার দাদি আমার মাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। পরে আমার বাবার সাথে বিয়ে দেন। তখন তার বয়স খুব কম ছিল। আমি আমার মায়ের বড় সন্তান। মায়ের কষ্ট, তার বাবা-মা হারানোর ব্যথা আমি বুঝতাম।

তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখনও তিনি রাষ্ট্রপতি। আমার মা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছায়ার মতো বাবার পাশে ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে যখন আমার বাবা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তখন আমার মা তার পাশাপাশি ছিলেন। পঁচাত্তরের ঘাতকরা আমার বাবা-মা এবং পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যার পর আমার আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৫ আগস্ট এইভাবে তারা আমাদের পরিবারের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা বিদেশে ছিলাম। ৬ বছর আমাদের দেশে আসতে দেয়া হয়নি। আমার বাবার লাশ দেখতে পারিনি, কবর জিয়ারত করতে পারিনি। আমাদেরকে বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে পড়ে থাকা কী যে কষ্ট এটা যারা আমাদের মত হয়েছিল একমাত্র তারাই জানে। ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবেই আমার চিন্তা ছিল আমার বাবা এ দেশের মানুষের জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন, অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। দেশে আশার পর ভাবলাম মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কিছু করে যাব। এখন একটা হত্যাকাণ্ড হোটেলে তারা বিচার চাইতে পারে। আমরা ১৫ আগস্টে বাবা-মাসহ যাদের হারিয়েছিলাম আমাদের মামলা করা বা বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। নারী হত্যাকারী শিশু হত্যাকারী এবং রাষ্ট্রপতি হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়ে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আমরা সে অবস্থা থেকে পরিবর্তন আনতে চাই। এ দেশের মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বিচার পাওয়ার অধিকার থাকে, সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি ।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর সমাজকল্যাণে অনেক অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সংবিধানেও আমাদের শিশুদের অধিকারের কথা বলে গিয়েছেন। আগে শিশু পরিবারগুলোতে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারতো। কিন্তু এখন যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে তারা শিক্ষা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে তারা থাকতে পারবে।

তিনি বলেন, পুরনো প্রতিটি জেলায় জাতির পিতা জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক তাদের জন্য শান্তিনিবাস এবং এতিম শিশুদের যাতে পাশাপাশি থাকতে পারে সেজন্য একটা প্রকল্প আমরা নিয়েছিলাম। এসব প্রতিষ্ঠান করার ইচ্ছাও আমাদের আছে। আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই যতটুকু সাধ্য এ দেশের মানুষের জন্য করে যাব, যাতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পায়।