বন্যায় ১৬ শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু

  • Update Time : ০৮:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
  • / 145

বন্যায় সারাদেশে ১৬ শিশুসহ ২১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নয়জনের মৃত্যু জামালপুরে, কুড়িগ্রামে ছয়জন। দুই জেলায় সমানসংখ্যক ১০ জন শিশুর সলিল সমাধি ঘটেছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে তিন, লালমনিরহাট, সিলেট ও টাঙ্গাইলে একজন করে শিশু মারা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী তাসমীন আরা আজমিরী এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ এখনও পানির নিচে। প্রধান নদনদীগুলোর পানি কমতে শুরু করলেও প্রায় সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে। দেশের ১৮টি জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ঘরে ঘরে বাড়ছে হাহাকার। বন্যার পানিতে ডুবে আরও মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, উজান থেকে পানি ক্রমশই নামতে শুরু করেছে। তবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ এখনও পানির নিচে। মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়ও একই অবস্থা। তবে বন্যার চোখরাঙানি এখন ঢাকার দিকে। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর পানি প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। যে কোনো সময় দু’কূল উপচে তলিয়ে যেতে পারে নিন্মাঞ্চল।

সরকারি হিসেবে, রোববার পর্যন্ত দেশের ১৮টি জেলা বন্যাদুর্গত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৫। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ জন। এক হাজার ৪৪৩ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজার গবাদিপশু প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সারা দেশে কাজ করছে ২১২টি মেডিকেল টিম।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদীর পানি আরও কমে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এ মুহূর্তে বড় বিপদের কারণ হতে পারে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো। দুয়েকদিনের মধ্যে এসব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যার পানি নামার আগে আরেকদফা ফুলে উঠতে পারে ব্রহ্মপুত্র। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সহসাই কাটছে না ওই জনপদে।

রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণাধীন নদনদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে ৫৬টিতে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩৯টিতে। ১৩টি নদ-নদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একইভাবে যমুনা, সুরমা এবং ঘাঘটের পানিও কমেছে। তবে এ তিনটি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক ওপরে। ২৪ ঘণ্টায় ২৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে কালীগঙ্গার পানি। এর প্রভাবে মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বেড়েছে পদ্মা-মেঘনায়ও। মেঘনার চাঁদপুর যোগ হয়েছে বিপদসীমার তালিকায়।

বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। এসব জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় প্রত্যেক নদনদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপরে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বন্যায় ১৬ শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু

Update Time : ০৮:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০

বন্যায় সারাদেশে ১৬ শিশুসহ ২১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নয়জনের মৃত্যু জামালপুরে, কুড়িগ্রামে ছয়জন। দুই জেলায় সমানসংখ্যক ১০ জন শিশুর সলিল সমাধি ঘটেছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে তিন, লালমনিরহাট, সিলেট ও টাঙ্গাইলে একজন করে শিশু মারা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী তাসমীন আরা আজমিরী এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ এখনও পানির নিচে। প্রধান নদনদীগুলোর পানি কমতে শুরু করলেও প্রায় সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে। দেশের ১৮টি জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। ঘরে ঘরে বাড়ছে হাহাকার। বন্যার পানিতে ডুবে আরও মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, উজান থেকে পানি ক্রমশই নামতে শুরু করেছে। তবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ এখনও পানির নিচে। মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলায়ও একই অবস্থা। তবে বন্যার চোখরাঙানি এখন ঢাকার দিকে। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর পানি প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে। যে কোনো সময় দু’কূল উপচে তলিয়ে যেতে পারে নিন্মাঞ্চল।

সরকারি হিসেবে, রোববার পর্যন্ত দেশের ১৮টি জেলা বন্যাদুর্গত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৫। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ জন। এক হাজার ৪৪৩ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজার গবাদিপশু প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সারা দেশে কাজ করছে ২১২টি মেডিকেল টিম।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদীর পানি আরও কমে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এ মুহূর্তে বড় বিপদের কারণ হতে পারে ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো। দুয়েকদিনের মধ্যে এসব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যার পানি নামার আগে আরেকদফা ফুলে উঠতে পারে ব্রহ্মপুত্র। ফলে বন্যা পরিস্থিতি সহসাই কাটছে না ওই জনপদে।

রোববার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণাধীন নদনদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে ৫৬টিতে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩৯টিতে। ১৩টি নদ-নদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একইভাবে যমুনা, সুরমা এবং ঘাঘটের পানিও কমেছে। তবে এ তিনটি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক ওপরে। ২৪ ঘণ্টায় ২৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে কালীগঙ্গার পানি। এর প্রভাবে মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বেড়েছে পদ্মা-মেঘনায়ও। মেঘনার চাঁদপুর যোগ হয়েছে বিপদসীমার তালিকায়।

বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। এসব জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় প্রত্যেক নদনদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপরে।