করোনাভাইরাস পরীক্ষার জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১২ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। ডিএমপির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুবায়েত জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রুবায়েত জামান জানান, ডা. সাবরিনাকে করোনা টেস্টের জালিয়াতির মামলায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গত ২৩ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেকেজি হেলথ কেয়ারের নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ূন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, তারা করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়। তাদের গ্রেফতারের পর জানা যায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারে তানজিনার বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা কামানো দেখে তানজিনা প্রতিষ্ঠানটির কাছে আরও বেশি বেতন দাবি করে। বিষয়টি জেকেজির কর্ণধার আরিফ চৌধুরী জেনে তানজিনা ও তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করে। পরে তারা দুজন বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া টেস্ট করে মানুষকে রিপোর্ট দেওয়া শুরু করে। তানজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতো, আর ঘরে বসে তার স্বামী রিপোর্ট তৈরি করতো।
গত ২৩ জুন রাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তানজিনা ও তার স্বামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব বলে দেয়। এরপর ২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আরিফসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জেকেজির কার্যালয় থেকে ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে। ওই দিনই প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মী আরিফকে ছাড়িয়ে নিতে তেজগাঁও থানায় জড়ো হয়। তারা থানার বাইরে হট্টগোল করতে থাকে। এ ঘটনায় পৃথক একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে।
জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতো। প্রতি রিপোর্টে পরীক্ষার কথা বলে ৫-১০ হাজার টাকা নিতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নিতো ৮০ থেকে ১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।