১৫ কোটি টাকা বকেয়া, চিনিকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ

  • Update Time : ০৪:২০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • / 204
জয়পুরহাট প্রতিনিধ:

করোনাকালে তিন মাসের বেতন না পেয়ে জয়পুরহাট চিনিকলে শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। বেতন না পেয়ে কেউ চালাচ্ছেন রিকশা, কেউ দিচ্ছেন দিন মজুরি। মানবেতর জীবন কাটছে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারিদের। বেতনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছেন চিনি বিক্রি হলে শ্রমিক কর্মচারিদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।

চিনিকল সূত্রে জানা যায়, এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারি কাজ করেন জয়পুরহাট চিনিকলে। গেল মাড়াই মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকলে আঁখের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে আঁখ কেনা হয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। এগুলো থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন চিনি ও দুই হাজার মেট্রিক টন চিটাগুড় উৎপাদন হয়। মৌসুম শেষে এখন পর্যন্ত ১১ কোটি টাকার চিনি পাঁচ কোটি টাকার চিটাগুড় মজুদ থাকলেও গেল তিন মাস থেকে বেতন দেয়া হয়নি শ্রমিক-কর্মচারিদের। বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা এসব শ্রমিক।

বেতন না পাওয়া রমজান আলী জানান, সাতজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। তিন মাস থেকে বেতন না পেয়ে তরকারির অভাবে লবণ দিয়ে ভাত মেখে খেতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। তাও এক বেলার জন্য।

ফিরোজ হোসেন বলেন, বয়স্করা পরিস্থিতি বুঝতে পারলেও শিশুদের কোনোভাবে সামলানো যাচ্ছে না। তারা ভাত ও মাছ খেতে চায়। কিন্তু না পেয়ে কান্নাকাটি করে। পরিবারের কথা ভেবে রিকশা চালাচ্ছি।

এদিকে গত তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চিনিকলের সামনে রাস্তায় অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে চিনিকল চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আলী আক্তার, সহসভাপতি সমলেম হোসেন বিশ্বাস, সহসাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিম মাহমুদ, ইলিয়াস বিশ্বাস রিপন প্রমুখ।

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল বলেন, গেল তিন মাসের মূল বেতন, গ্রাচুইটি এরিয়া বিলসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক কর্মচারিদের শিগগির বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানালেন এই শ্রমিক নেতা।

জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, রিফাইনার চিনি বাজারে কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমে যাওয়ায় দেশীয় চিনির চাহিদা কম। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চিনি বিক্রি করেই বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাজারে চিনি বিক্রি হলেই শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন শিগগিরই পরিশোধ করা হবে।

করোনার এই সংকটকালে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে আন্তরিক হবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমন প্রত্যাশা জেলাবাসীর।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


১৫ কোটি টাকা বকেয়া, চিনিকল শ্রমিকদের বিক্ষোভ

Update Time : ০৪:২০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
জয়পুরহাট প্রতিনিধ:

করোনাকালে তিন মাসের বেতন না পেয়ে জয়পুরহাট চিনিকলে শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। বেতন না পেয়ে কেউ চালাচ্ছেন রিকশা, কেউ দিচ্ছেন দিন মজুরি। মানবেতর জীবন কাটছে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারিদের। বেতনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছেন চিনি বিক্রি হলে শ্রমিক কর্মচারিদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।

চিনিকল সূত্রে জানা যায়, এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারি কাজ করেন জয়পুরহাট চিনিকলে। গেল মাড়াই মৌসুমে জয়পুরহাট চিনিকলে আঁখের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে আঁখ কেনা হয়েছে প্রায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। এগুলো থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন চিনি ও দুই হাজার মেট্রিক টন চিটাগুড় উৎপাদন হয়। মৌসুম শেষে এখন পর্যন্ত ১১ কোটি টাকার চিনি পাঁচ কোটি টাকার চিটাগুড় মজুদ থাকলেও গেল তিন মাস থেকে বেতন দেয়া হয়নি শ্রমিক-কর্মচারিদের। বেতনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা এসব শ্রমিক।

বেতন না পাওয়া রমজান আলী জানান, সাতজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। তিন মাস থেকে বেতন না পেয়ে তরকারির অভাবে লবণ দিয়ে ভাত মেখে খেতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। তাও এক বেলার জন্য।

ফিরোজ হোসেন বলেন, বয়স্করা পরিস্থিতি বুঝতে পারলেও শিশুদের কোনোভাবে সামলানো যাচ্ছে না। তারা ভাত ও মাছ খেতে চায়। কিন্তু না পেয়ে কান্নাকাটি করে। পরিবারের কথা ভেবে রিকশা চালাচ্ছি।

এদিকে গত তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত এক সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চিনিকলের সামনে রাস্তায় অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে চিনিকল চত্বরে সমাবেশে বক্তব্য দেন জয়পুরহাট চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আলী আক্তার, সহসভাপতি সমলেম হোসেন বিশ্বাস, সহসাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিম মাহমুদ, ইলিয়াস বিশ্বাস রিপন প্রমুখ।

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহসাধারণ সম্পাদক জহুরুল হক জুয়েল বলেন, গেল তিন মাসের মূল বেতন, গ্রাচুইটি এরিয়া বিলসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। বেতন না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক কর্মচারিদের শিগগির বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানালেন এই শ্রমিক নেতা।

জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, রিফাইনার চিনি বাজারে কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমে যাওয়ায় দেশীয় চিনির চাহিদা কম। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চিনি বিক্রি করেই বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাজারে চিনি বিক্রি হলেই শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন শিগগিরই পরিশোধ করা হবে।

করোনার এই সংকটকালে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে আন্তরিক হবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমন প্রত্যাশা জেলাবাসীর।