প্রাচীন সেই গির্জাকে আবারও মসজিদ বানালো তুরস্ক

  • Update Time : ০৬:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুলাই ২০২০
  • / 136

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইস্তানবুলের বিশ্বখ্যাত হাজিয়া সোপিয়া জাদুঘরকে আবারও মসজিদ বানানোর ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। আদালতে এটির জাদুঘর মর্যাদা প্রত্যাখ্যান হওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। আর তা অনুসরণ করে প্রায় ৮৬ বছর পর সেখানে প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় হয়েছে।

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, মসজিদ বানানো হলেও সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অর্থোডক্স খ্রিস্টান ক্যাথেড্রাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজিয়া সোপিয়া। তুরস্কের অটোমান শাসকেরা দখল করে ১৪৫৩ সালে এটিকে মসজিদে রুপান্তর করেন। ১৯৩৪ সালে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের সরকার এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।

শুক্রবার তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত কাউন্সিল অব স্টেট’র রায়ে বলা হয়েছে, ‘মসজিদ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত ১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভা নিয়েছিল তা আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’ রায়ে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনাটিকে মসজিদ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ফলে অন্যকিছু হিসেবে এর ব্যবহার আইনগতভাবে সম্ভব নয়।

ওই রায় ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে হাজিয়া সোপিয়াকে মসজিদে রুপান্তরের ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। টুইটারে ওই ঘোষণার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘এতে লাভও হতে পারে।’ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর হাজিয়া সোপিয়ায় প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় করা হয়। তুরস্কের মূলধারার সবগুলো চ্যানেল ওই নামাজ সম্প্রচার করে। তবে সাংস্কৃতিক স্থাপনা হাজিয়া সোপিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চ্যানেলটি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে।

তুরস্কের ইসলামপন্থীরা দীর্ঘদিন থেকেই হাজিয়া সোপিয়াকে আবারও মসজিদে পরিণত করার দাবি করে আসছেন। তবে সেক্যুলার অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারাও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।.

হাজিয়া সোপিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হাজিয়া সোপিয়ার জটিল ইতিহাসের শুরু ৫৩৭ সালে। ওই সময়ে গোল্ডেন হর্ন উপত্যকা তদারকি করতে বাইজানটাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান বিশালাকৃতির এই গির্জাটি নির্মাণ করেন। বিশালাকারের গম্বুজসহ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চার্চ ও ভবন বলে মনে করা হয়।

১২০৪ সালে ক্রুসেডারদের অভিযানকালে সামান্য কিছু সময় বাদ দিলে কয়েক শতাব্দী ধরেই ভবনটি বাইজানটাইনদের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। তবে ১৪৫৩ সালে বাইজানটাইন সম্রাটদের পরাজিত করে অটোমান শাসক দ্বিতীয় সুলতান মাহমুদ ইস্তানবুল (পুরনো কন্সটান্টিপোল) শহর দখল করে নেন। আর বিজয়ী শাসক হাজিয়া সোপিয়ার অভ্যন্তরে জুমার নামাজ আদায় করেন।

তার কিছু দিনের মধ্যেই অটোমান শাসকেরা ভবনটিকে মসজিদে পরিণত করেন। তখন এতে বহিরাবরণসহ চারটি মিনার যুক্ত করা হয়। ভবনটির গায়ে থাকা খ্রিষ্ট ধর্মের নানা প্রতিকৃতি ও স্বর্ণের মোজাইক ঢেকে দিয়ে আরবি ক্যালিগ্রাফি বসানো হয়।

পরের কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম অটোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্রে থাকার পর ১৯৩৪ সালে হাজিয়া সোপিয়াকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়। ওই সময়ে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক বেশ কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার উদ্যোগ নেয়।

আজকের দিনে তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হাজিয়া সোপিয়া। প্রতিবছর প্রায় ৩৭ লাখ পর্যটক বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রটিতে ভ্রমণ করে থাকেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


প্রাচীন সেই গির্জাকে আবারও মসজিদ বানালো তুরস্ক

Update Time : ০৬:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুলাই ২০২০

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে গির্জা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইস্তানবুলের বিশ্বখ্যাত হাজিয়া সোপিয়া জাদুঘরকে আবারও মসজিদ বানানোর ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। আদালতে এটির জাদুঘর মর্যাদা প্রত্যাখ্যান হওয়ার এই ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। আর তা অনুসরণ করে প্রায় ৮৬ বছর পর সেখানে প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় হয়েছে।

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, মসজিদ বানানো হলেও সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রায় দেড় হাজার বছর আগে অর্থোডক্স খ্রিস্টান ক্যাথেড্রাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজিয়া সোপিয়া। তুরস্কের অটোমান শাসকেরা দখল করে ১৪৫৩ সালে এটিকে মসজিদে রুপান্তর করেন। ১৯৩৪ সালে মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের সরকার এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য।

শুক্রবার তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত কাউন্সিল অব স্টেট’র রায়ে বলা হয়েছে, ‘মসজিদ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত ১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভা নিয়েছিল তা আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’ রায়ে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনাটিকে মসজিদ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ফলে অন্যকিছু হিসেবে এর ব্যবহার আইনগতভাবে সম্ভব নয়।

ওই রায় ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে হাজিয়া সোপিয়াকে মসজিদে রুপান্তরের ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। টুইটারে ওই ঘোষণার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘এতে লাভও হতে পারে।’ প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর হাজিয়া সোপিয়ায় প্রথমবারের মতো নামাজ আদায় করা হয়। তুরস্কের মূলধারার সবগুলো চ্যানেল ওই নামাজ সম্প্রচার করে। তবে সাংস্কৃতিক স্থাপনা হাজিয়া সোপিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চ্যানেলটি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে।

তুরস্কের ইসলামপন্থীরা দীর্ঘদিন থেকেই হাজিয়া সোপিয়াকে আবারও মসজিদে পরিণত করার দাবি করে আসছেন। তবে সেক্যুলার অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারাও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।.

হাজিয়া সোপিয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হাজিয়া সোপিয়ার জটিল ইতিহাসের শুরু ৫৩৭ সালে। ওই সময়ে গোল্ডেন হর্ন উপত্যকা তদারকি করতে বাইজানটাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান বিশালাকৃতির এই গির্জাটি নির্মাণ করেন। বিশালাকারের গম্বুজসহ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় চার্চ ও ভবন বলে মনে করা হয়।

১২০৪ সালে ক্রুসেডারদের অভিযানকালে সামান্য কিছু সময় বাদ দিলে কয়েক শতাব্দী ধরেই ভবনটি বাইজানটাইনদের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। তবে ১৪৫৩ সালে বাইজানটাইন সম্রাটদের পরাজিত করে অটোমান শাসক দ্বিতীয় সুলতান মাহমুদ ইস্তানবুল (পুরনো কন্সটান্টিপোল) শহর দখল করে নেন। আর বিজয়ী শাসক হাজিয়া সোপিয়ার অভ্যন্তরে জুমার নামাজ আদায় করেন।

তার কিছু দিনের মধ্যেই অটোমান শাসকেরা ভবনটিকে মসজিদে পরিণত করেন। তখন এতে বহিরাবরণসহ চারটি মিনার যুক্ত করা হয়। ভবনটির গায়ে থাকা খ্রিষ্ট ধর্মের নানা প্রতিকৃতি ও স্বর্ণের মোজাইক ঢেকে দিয়ে আরবি ক্যালিগ্রাফি বসানো হয়।

পরের কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম অটোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্রে থাকার পর ১৯৩৪ সালে হাজিয়া সোপিয়াকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়। ওই সময়ে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক বেশ কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার উদ্যোগ নেয়।

আজকের দিনে তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হাজিয়া সোপিয়া। প্রতিবছর প্রায় ৩৭ লাখ পর্যটক বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রটিতে ভ্রমণ করে থাকেন।