নাফিসা সাদিক নাহিন:
পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ চীন। বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দেশটি। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ গুলোর দিকে নজর দিলে আমার দেখতে পাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশকে পেছনে ফেলে সম্প্রতি চীন বিশ্বে সর্ববৃহৎ আমদানি-রপ্তানিকারক এবং বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় সঞ্চয়কারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
.
ষোড়শ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অন্যান্য দেশের সাথে চীনের কোনো বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। খুব বেশি সময়ের ব্যবধান নয়, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৯৭৮ সালের পর থেকে বিংশ শতাব্দীর বর্তমান সময় পর্যন্ত, এই অল্প সময়েই চীন অর্থনৈতিক ভাবে বহুলাংশে এগিয়ে গিয়েছে। অর্থনীতিতে চীনের এই উত্তরোত্তর অগ্রগতির মূলে রয়েছে ব্যাপক শিল্পায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসার ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন।
.
অল্প সময়ের ব্যবধানেই চীন রপ্ত করেছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সেই সাথে অবলম্বন করেছে মুক্ত বাজার নীতি এবং দেশটিতে ঘটিয়েছে ব্যাপক শিল্পায়ন। সিল্ক রোড কে চীন একটি মহাপরিকল্পনা হিসেবে গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার,পাকিস্তান, মালয়েশিয়া,বাংলাদেশ সহ আফ্রিকার বেশ কিছু উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছে চীন।
.
চীন এসব দেশকে তার উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল হওয়ার জন্য সিল্ক রোড কে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে যা তার অর্থনীতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিবে। শুধু তাই নয়,গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার গবেষণা সংস্থা এর তথ্যমতে, সামরিক দিক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পরপরই চীনের অবস্থান। সমরাস্ত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার, নির্মাণ ও ব্যবহারের দিক বিবেচনায় চীন হতে চলেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক সমরাস্ত্রের দেশ।
.
ইতোমধ্যে অস্ত্র উৎপাদনে চীন ২য় দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অস্ত্র ও প্রযুক্তিখাতে দেশটি গোপনে এতো উন্নতি করেছে যা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। চীনের সামরিক বাহিনী “পিপলস লিবারেশন আর্মি” কে উন্নত ও বিশ্বের এক নম্বর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন।
.
সম্প্রতি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ৭০ বছর পূর্তিতে চীনের প্রদর্শিত সমরাস্ত্রের মধ্যে হাইপারসনিক রেলগান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওয়েভ রাইডার, সুপারক্ষমতা সম্পন্ন বৃহৎ বোমা যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া,ভারত ও অন্যান্য পরাশক্তি দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে। অস্ত্র উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলার চেষ্টা এবং সম্প্রতি চীন কর্তৃক ভারতের পূর্ব লাদাখে আগ্রাসী আক্রমণ, এসবই চীনের নতুন শক্তিতে আবির্ভাব হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে।
.
অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি দেশ গুলোকে ছাপিয়ে চীন এক নম্বর ও সর্বোচ্চ শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রয়াস নিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের নতুন অবস্থান তৈরি করে ভাবিয়ে তুলছে গোটা বিশ্বকে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।