কুতুবদিয়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা : থানায় মামলা দায়ের

  • Update Time : ০৭:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 36

//মুসলিম যুবক কর্তৃক হিন্দু মেয়ে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার
//কুতুবদিয়ায় ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা: সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েনের আশঙ্কা

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে। এরকম শিশু নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী মেয়েটি ধূরুং আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী চম্পা (ছদ্মনাম) । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (১৩ অক্টোবর) উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের খুইল্যার পাড়া গ্রামের অর্জুন দাশের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ের মা মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কুতুবদিয়া থানায় অভিযুক্ত এস্তাফ মাঝির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে মায়ের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে একা থাকা এক কিশোরীকে এস্তাপ মাঝি নামে এক যুবক ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা-মা, যারা চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে কর্মরত, থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী কিশোরী মায়ের ফুফুর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত। ছাত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।

খবর নিয়ে জানা যায়, মুসলিম যুবক কর্তৃক হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। 

ঐ ছাত্রীর আত্মীয় স্বজন পুলিশকে অবহিত করলে, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়।  

পুজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক সমীর কান্তি দাশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিনিধিকে বলেন, সমাজের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া ছাত্রীর আত্মীয় স্বজনকে আইনের আশ্রয় না নিতে নিষেধ করেছি। যেহেতু সবাইকে এলাকায় বসবাস করতে হবে তাই আমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে, মেম্বারকে সাথে নিয়ে স্থানীয় ভাবে সমাধান করেছি।
তারা সামাজিক ভাবে সমাধানের করে দিবে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কোথাও লেখালেখি না করারও অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয়রা দাবি করেন, ধর্ষন চেষ্টার মত একটি জঘন্য অপরাধ যদি সামজিক ভাবে সমাধান হয়, তাহলে অপরাধীরা দিনদিন আরও অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষণ চেষ্টাকারী এস্তাফ মাঝিকে দ্রুত গ্রেফতার করে তাকে আইনের আওতায় এনে উচিত শাস্থি দেওয়ার আহবান জানান।

র‍্যাপিস্টকে বাচাঁতে সামাজিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পূজা কমিটির নেতা শমীর সহ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 
জানা যায়,ধর্ষক এস্তাফ মাঝি সাবেক এক চেয়ারম্যানের আস্তাভাজন।  তাকে বাচাঁতে নানা অপচেষ্টা চালানো হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রীর এক নিকট আত্মীয় জানান, এস্তাপ মাঝি একজন চরিত্রহীন লোক এর আগেও সে হিন্দু মহিলার সাথে একই অপরাধ করেছে, তার বিচার না হওয়ায় সে বারবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই ছাত্রীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে জানান। 

মামলার বাদী লাকী দাশ জানান, আমার মেয়েকে একা পেয়ে এস্তাফ মাঝি ধর্ষণের চেষ্টা করেছে কুতুবদিয়া থানায় আমি দাবী হয়ে মামলা করেছি। আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রীর সাথে আমি কথা বলেছি, তাকে একা মেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে, এস্তাপ মাঝি এর আগেও এক হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। ভিকটিমের পরিবারকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। নিজে উপস্থিত হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করেছি বলে জানান তিনি।

উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার বলেন, ঘটনাটি গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে শুনার পর কুতুবদিয়া থানার ওসিকে অবহিত করেছি, ওসি পুলিশ পাঠিয়েছে, এটা হিন্দু নেতারাসহ স্থানীয়রা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে শুনেছি।

কুতুবদিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই মোজাম্মেল হক বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা ঘটনা স্থলে গিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এস্তাব মাঝি ছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তাকে আটকের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ভিকটিমের নানা অর্জুন দাশকে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছি।

কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরমান হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মা লাকী দাশ বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেছে, এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে আসামিকে আটকের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগীর পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

কুতুবদিয়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা : থানায় মামলা দায়ের

Update Time : ০৭:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

//মুসলিম যুবক কর্তৃক হিন্দু মেয়ে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার
//কুতুবদিয়ায় ছাত্রী ধর্ষণের চেষ্টা: সাম্প্রদায়িক টানাপোড়েনের আশঙ্কা

এরফান হোছাইন, চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে। এরকম শিশু নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী মেয়েটি ধূরুং আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী চম্পা (ছদ্মনাম) । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (১৩ অক্টোবর) উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের খুইল্যার পাড়া গ্রামের অর্জুন দাশের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়ের মা মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কুতুবদিয়া থানায় অভিযুক্ত এস্তাফ মাঝির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে মায়ের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে একা থাকা এক কিশোরীকে এস্তাপ মাঝি নামে এক যুবক ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা-মা, যারা চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে কর্মরত, থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী কিশোরী মায়ের ফুফুর বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করত। ছাত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।

খবর নিয়ে জানা যায়, মুসলিম যুবক কর্তৃক হিন্দু ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। 

ঐ ছাত্রীর আত্মীয় স্বজন পুলিশকে অবহিত করলে, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়।  

পুজা উদযাপন পরিষদের উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক সমীর কান্তি দাশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিনিধিকে বলেন, সমাজের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া ছাত্রীর আত্মীয় স্বজনকে আইনের আশ্রয় না নিতে নিষেধ করেছি। যেহেতু সবাইকে এলাকায় বসবাস করতে হবে তাই আমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে, মেম্বারকে সাথে নিয়ে স্থানীয় ভাবে সমাধান করেছি।
তারা সামাজিক ভাবে সমাধানের করে দিবে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের কোথাও লেখালেখি না করারও অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয়রা দাবি করেন, ধর্ষন চেষ্টার মত একটি জঘন্য অপরাধ যদি সামজিক ভাবে সমাধান হয়, তাহলে অপরাধীরা দিনদিন আরও অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষণ চেষ্টাকারী এস্তাফ মাঝিকে দ্রুত গ্রেফতার করে তাকে আইনের আওতায় এনে উচিত শাস্থি দেওয়ার আহবান জানান।

র‍্যাপিস্টকে বাচাঁতে সামাজিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পূজা কমিটির নেতা শমীর সহ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 
জানা যায়,ধর্ষক এস্তাফ মাঝি সাবেক এক চেয়ারম্যানের আস্তাভাজন।  তাকে বাচাঁতে নানা অপচেষ্টা চালানো হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রীর এক নিকট আত্মীয় জানান, এস্তাপ মাঝি একজন চরিত্রহীন লোক এর আগেও সে হিন্দু মহিলার সাথে একই অপরাধ করেছে, তার বিচার না হওয়ায় সে বারবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই ছাত্রীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে জানান। 

মামলার বাদী লাকী দাশ জানান, আমার মেয়েকে একা পেয়ে এস্তাফ মাঝি ধর্ষণের চেষ্টা করেছে কুতুবদিয়া থানায় আমি দাবী হয়ে মামলা করেছি। আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্রীর সাথে আমি কথা বলেছি, তাকে একা মেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে, এস্তাপ মাঝি এর আগেও এক হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। ভিকটিমের পরিবারকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। নিজে উপস্থিত হয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করেছি বলে জানান তিনি।

উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার বলেন, ঘটনাটি গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে শুনার পর কুতুবদিয়া থানার ওসিকে অবহিত করেছি, ওসি পুলিশ পাঠিয়েছে, এটা হিন্দু নেতারাসহ স্থানীয়রা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে শুনেছি।

কুতুবদিয়া থানার উপপরিদর্শক এসআই মোজাম্মেল হক বলেন, ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা ঘটনা স্থলে গিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এস্তাব মাঝি ছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। তাকে আটকের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ভিকটিমের নানা অর্জুন দাশকে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছি।

কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরমান হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মা লাকী দাশ বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেছে, এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে আসামিকে আটকের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগীর পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।