ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে দেশের কত আয় হয়

  • Update Time : ০১:৫৭:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 121

পাঁচ বছর ধরে দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। এবারও একই উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ফলে আগামী ৮ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশের ইলিশ পাচ্ছেন ভারতীয়রা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকেরা।

বাংলাদেশের রপ্তানিনীতিতে ইলিশ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই এটি রপ্তানি করতে হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এখন আগ্রহী রপ্তানিকারকদের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। যাঁরা আগেই আবেদন করেছেন, তাঁদের অবশ্য নতুন আবেদনের প্রয়োজন নেই।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, তা মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া সরকার যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমোদন দেয়, তার কম ইলিশ যায় ভারতে। যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টনের অনুমতি দিলেও বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন।

২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতীয় রপ্তানি নীতিতে (২০১৫-১৮) ইলিশ মাছ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রাখা হয়। পরের দুটো রপ্তানি নীতিতেও তা একই রকম রাখা হয়।

তবে ইলিশ রপ্তানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। সেবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ইলিশ ৬ ডলার (বাংলাদেশের ৫০৭ টাকা) দরে প্রথম তিন চালান পাঠানো হয়েছিল। পরে অবশ্য তা প্রতি কেজি ১০ ডলারে উন্নীত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন বা ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এতে আয় হয় সাড়ে ৩৯ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। তখন প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১০, ৬ ও ৮ ডলার দামে রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। প্রতি কেজির রপ্তানি মূল্য ছিল ১০ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৮০ লাখ ডলার। তখন প্রতি কেজি ইলিশ মাছের রপ্তানি মূল্য ছিল ১০ ডলার বা ১ হাজার ৯৮ টাকা।

যাচ্ছে ইলিশ, আসছে শুঁটকি

ভারতের সঙ্গে মাছ আমদানি-রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রপ্তানি করে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় করেছে। অন্য মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে পাবদা, ভেটকি ও পুঁটি। এর বিপরীতে একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ৬৩ হাজার টন তাজা ও শুঁটকি মাছ। সে দেশ থেকে লইট্টা, কাঁচকি ও পোয়া শুঁটকির পাশাপাশি রুই, কাতলা, পোয়া ও ম্যাকারেল মাছ আমদানি হয়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশের যে আয় হয়, তা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা শুঁটকি মাছের দাম মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও এবার কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বেশি দামেই ইলিশ খেতে হবে। কারণ, বাংলাদেশেই এখনো মাছটির দাম বেশ চড়া। সাগরের এক কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম এখন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের দামও ১ হাজার ১০০ টাকার মতো। নদীতে পাওয়া ইলিশ মাছের দাম অবশ্য আরও বেশি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে দেশের কত আয় হয়

Update Time : ০১:৫৭:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পাঁচ বছর ধরে দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। এবারও একই উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ফলে আগামী ৮ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশের ইলিশ পাচ্ছেন ভারতীয়রা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকেরা।

বাংলাদেশের রপ্তানিনীতিতে ইলিশ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। তাই সরকারের অনুমোদন নিয়েই এটি রপ্তানি করতে হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়। এখন আগ্রহী রপ্তানিকারকদের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। যাঁরা আগেই আবেদন করেছেন, তাঁদের অবশ্য নতুন আবেদনের প্রয়োজন নেই।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, তা মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া সরকার যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমোদন দেয়, তার কম ইলিশ যায় ভারতে। যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টনের অনুমতি দিলেও বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন।

২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতীয় রপ্তানি নীতিতে (২০১৫-১৮) ইলিশ মাছ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রাখা হয়। পরের দুটো রপ্তানি নীতিতেও তা একই রকম রাখা হয়।

তবে ইলিশ রপ্তানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। সেবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ইলিশ ৬ ডলার (বাংলাদেশের ৫০৭ টাকা) দরে প্রথম তিন চালান পাঠানো হয়েছিল। পরে অবশ্য তা প্রতি কেজি ১০ ডলারে উন্নীত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন বা ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এতে আয় হয় সাড়ে ৩৯ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। তখন প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১০, ৬ ও ৮ ডলার দামে রপ্তানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। প্রতি কেজির রপ্তানি মূল্য ছিল ১০ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয় ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৮০ লাখ ডলার। তখন প্রতি কেজি ইলিশ মাছের রপ্তানি মূল্য ছিল ১০ ডলার বা ১ হাজার ৯৮ টাকা।

যাচ্ছে ইলিশ, আসছে শুঁটকি

ভারতের সঙ্গে মাছ আমদানি-রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রপ্তানি করে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ডলার আয় করেছে। অন্য মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে পাবদা, ভেটকি ও পুঁটি। এর বিপরীতে একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ৬৩ হাজার টন তাজা ও শুঁটকি মাছ। সে দেশ থেকে লইট্টা, কাঁচকি ও পোয়া শুঁটকির পাশাপাশি রুই, কাতলা, পোয়া ও ম্যাকারেল মাছ আমদানি হয়।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশের যে আয় হয়, তা দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা শুঁটকি মাছের দাম মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিলেও এবার কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বেশি দামেই ইলিশ খেতে হবে। কারণ, বাংলাদেশেই এখনো মাছটির দাম বেশ চড়া। সাগরের এক কেজি ওজনের একটি ইলিশের দাম এখন ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের দামও ১ হাজার ১০০ টাকার মতো। নদীতে পাওয়া ইলিশ মাছের দাম অবশ্য আরও বেশি।