মিরসরাইয়ে বন্যায় পানিবন্দি ৭০ হাজার পরিবার

  • Update Time : ১১:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
  • / 24

জেলা প্রতিনিধি

ফেনী নদী ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ডুবেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত বুধবার বিকেল থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনভর পানিতে নিমজ্জিত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর, পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী; ধুম ইউনিয়নের শুক্রবারইয়াহাট, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও বন্যার পানি বাড়ছে।

বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ওঠে যাওয়ায় স্লুইসগেটের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেন পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে এবং ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও শত শত মাছের পুকুর ডুবে গেছে।

গত বুধবার বিকাল থেকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে কিছু কিছু এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকালেও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকলেও দুপুরের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামতে দেখা গেছে।

দুর্ঘটনার আশংকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিছু এলাকায়। বেশিরভাগ সমস্যা দেখা দিয়েছে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মীরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৭০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩০টার অধিক স্পিড বোট আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, মীরসরাই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


মিরসরাইয়ে বন্যায় পানিবন্দি ৭০ হাজার পরিবার

Update Time : ১১:৪২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি

ফেনী নদী ও মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ডুবেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। গত বুধবার বিকেল থেকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যা কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিনভর পানিতে নিমজ্জিত এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জানা গেছে, মীরসরাই উপজেলার আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর গ্রাম, কাটাগাং, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর, পূর্ব আজমনগর ও খিলমুরালী; ধুম ইউনিয়নের শুক্রবারইয়াহাট, মিনাবাজার, আনন্দবাজার গ্রামেও বন্যার পানি বাড়ছে।

বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মীরসরাইয়ের মহামায়া লেকের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ওঠে যাওয়ায় স্লুইসগেটের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে উপজেলার দুর্গাপুর, কাটাছরা ও ইছাখালী ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় চট্টগ্রামমুখী লেন পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল করছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টানা ৬ দিনের বৃষ্টিতে এবং ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও শত শত মাছের পুকুর ডুবে গেছে।

গত বুধবার বিকাল থেকে এলাকার স্বেচ্ছাসেবকরা বোট দিয়ে কিছু কিছু এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সকালেও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকলেও দুপুরের দিকে সেনাবাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামতে দেখা গেছে।

দুর্ঘটনার আশংকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিছু এলাকায়। বেশিরভাগ সমস্যা দেখা দিয়েছে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মীরসরাইয়ে ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৭০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩০টার অধিক স্পিড বোট আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, মীরসরাই উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। জেলা প্রশাসক থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।