বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশে গভর্নরের ‘না’

  • Update Time : ০৭:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • / 57

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে সাংবাদিকেরা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট রেয়ায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর। ইআরএফ’র এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে ইআরএফ’র পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে রিপোর্টারদের আগের মতো বাধাহীনভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তার কাছে যাতায়াতের অধিকার আজ থেকেই নিশ্চিত করতে গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর।

গভর্নর বলেন, সাংবাদিকরা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে পাস নিয়ে ঢুকতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকরা পাস নিয়ে মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন।

ইআরএফ’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনপক্ষেরই কাম্য নয়।

এ সময় গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন টপ সিক্রেট ডকুমেন্টস নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ব্যাংকিংখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন।

তার প্রেক্ষিতে ব্যাংকিংখাতের বিভিন্ন তথ্যের স্পর্শকাতরতা ও মার্জার বিষয়ে রিপোর্টারদের নিয়ে দুটি কর্মশালা আয়োজনের প্রস্তাব দেয় ইআরএফ।

আগামী ৮ মে’র পরে ব্যাংকিংখাতের স্পর্শকাতরতা নিয়ে কর্মশালাটি আয়োজন করতে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। মার্জার বিষয়ে পরবর্তীতে কর্মশালা আয়োজন করা হবে বলে জানান গভর্নর।

গভর্নর আরও বলেন, কর্মশালা আয়োজনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্টারদের অবাধ যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তিনি।

সার্বিক পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণে ইআরএফ এর প্রেসিডেন্ট প্রেসি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইআরএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলেও জানা গেছে।

এদিকে আজ সকালে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। এসয় তারা বলেন, বড় ঋণখেলাপি ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোকে গণমাধ্যম থেকে আড়ালে রাখতে বর্তমান গভর্নর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর আগে কখনো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকেরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তাঁরা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।

Please Share This Post in Your Social Media


বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশে গভর্নরের ‘না’

Update Time : ০৭:২৯:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে সাংবাদিকেরা আগের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট রেয়ায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর। ইআরএফ’র এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে ইআরএফ’র পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে রিপোর্টারদের আগের মতো বাধাহীনভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তার কাছে যাতায়াতের অধিকার আজ থেকেই নিশ্চিত করতে গভর্নরকে জোরালোভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন গভর্নর।

গভর্নর বলেন, সাংবাদিকরা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে পাস নিয়ে ঢুকতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকরা পাস নিয়ে মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন।

ইআরএফ’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনপক্ষেরই কাম্য নয়।

এ সময় গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন টপ সিক্রেট ডকুমেন্টস নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ব্যাংকিংখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেন।

তার প্রেক্ষিতে ব্যাংকিংখাতের বিভিন্ন তথ্যের স্পর্শকাতরতা ও মার্জার বিষয়ে রিপোর্টারদের নিয়ে দুটি কর্মশালা আয়োজনের প্রস্তাব দেয় ইআরএফ।

আগামী ৮ মে’র পরে ব্যাংকিংখাতের স্পর্শকাতরতা নিয়ে কর্মশালাটি আয়োজন করতে গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। মার্জার বিষয়ে পরবর্তীতে কর্মশালা আয়োজন করা হবে বলে জানান গভর্নর।

গভর্নর আরও বলেন, কর্মশালা আয়োজনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্টারদের অবাধ যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনা করবেন তিনি।

সার্বিক পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণে ইআরএফ এর প্রেসিডেন্ট প্রেসি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইআরএফ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলেও জানা গেছে।

এদিকে আজ সকালে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। এসয় তারা বলেন, বড় ঋণখেলাপি ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোকে গণমাধ্যম থেকে আড়ালে রাখতে বর্তমান গভর্নর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর আগে কখনো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকেরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তাঁরা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।