কুবি উপাচার্যের নিয়মবহির্ভূত ডিন নিয়োগ, শিক্ষকদের ক্ষোভ

  • Update Time : ১০:২২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
  • / 70

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৪ মার্চ অনলাইনে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহবান করে। তবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেই সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে পাঁচজন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষকরাও। শিক্ষক নেতারা জানান, আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন এবং একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য।

জানা যায়, জরুরিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১ তম সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়। এর আগে গত ১৩ এবং ১৪ মার্চ উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহা ও শিক্ষকদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতির আহ্বানে ক্লাস বর্জন করে সকল শিক্ষকগণ। এসময় তারা দাবি আদায় না হলে আরও ৯ দিন ক্লাস বর্জনের হুমকি দেন। ক্লাস বর্জনের এই উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে সিন্ডিকেট সভা ডাকলেও উপাচার্যের ইচ্ছায় আলোচ্যসূচি পরিবর্তন করে ডিন নিয়োগের এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়মের ব্যত্যয় বলে আপত্তিও তুলেন দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য।

সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সভার অ্যাজেন্ডা ছিল উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা। ওই সভায় পাঁচজন ডিন নিয়োগ ও ডিন ক্যাটাগরিতে দুজন সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সভায় ১৬ জন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১১ জন অংশ নেন।

এদিকে পাঁচ ডিন নিয়োগের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ডিন নিয়োগ পাওয়ার কথা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ থেকে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সে নিয়োগের পাওয়ার কথা ছিল ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হকের। গত ৩ মার্চ ১৬ মাসের শিক্ষা ছুটি শেষে যোগদানপত্র জমা দিলেও যোগদান কার্যকর করেনি প্রশাসন। ফলে সিন্ডিকেটের আলোচ্য পরিবর্তন করে তড়িঘড়ি করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্লাহ কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ডিনের পদ থেকে বঞ্চিত মো: এমদাদুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি ৩ এর ৪ ধারা অনুযায়ী আমি গত ৩ মার্চ শিক্ষা ছুটি শেষে বিভাগে যোগদান করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু আইন বহির্ভূতভাবে গত ১১ দিনে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আইন অনুযায়ী বিভাগের আর্বতনে এবার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগকে ডীন হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

এদিকে সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি পরিবর্তন ও ডিন নিয়োগে অনিয়মের তুলেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাছান বলেন, আইনগতভাবে সিন্ডিকেট সভা এক বিষয়ে ডাকার পর অন্য বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব না। যে বিষয়ে ডাকা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। ডিন নিয়োগ তো প্রচলিত আইনের বিষয় এবং আইন দ্বারা এটা সুনির্দিষ্ট কার পরে কে হবে। ডিন নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেট সভার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না, কারণ এটা আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট।

শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, সিন্ডিকেটের সভাপতি মাননীয় উপাচার্য চরম জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির যে যৌক্তিক দাবিগুলোর ছিল সেগুলোর প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে এজেন্ডা পরিবর্তন করে ওনি অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার জন্য আজকের সিন্ডিকেট করেছে। একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। ওনার অবৈধ কর্মকাণ্ডের আরও একটি প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ওনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান না। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন এবং সামনের দিকেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে যাচ্ছেন।

তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক আছে বলে দাবি করে সদ্য ব্যাবসায় অনুষদে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিন ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, বিভাগীয় রোটেশন অনুযায়ী এখন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ পাবে। পরে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, যোগদান পত্র কেন আটকিয়ে রাখছেন উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কুবি উপাচার্যের নিয়মবহির্ভূত ডিন নিয়োগ, শিক্ষকদের ক্ষোভ

Update Time : ১০:২২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৪ মার্চ অনলাইনে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহবান করে। তবে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেই সিন্ডিকেটের আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে পাঁচজন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে শিক্ষকরাও। শিক্ষক নেতারা জানান, আলোচ্য সূচি পরিবর্তন করে নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন এবং একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য।

জানা যায়, জরুরিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯১ তম সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়। এর আগে গত ১৩ এবং ১৪ মার্চ উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহা ও শিক্ষকদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতির আহ্বানে ক্লাস বর্জন করে সকল শিক্ষকগণ। এসময় তারা দাবি আদায় না হলে আরও ৯ দিন ক্লাস বর্জনের হুমকি দেন। ক্লাস বর্জনের এই উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে সিন্ডিকেট সভা ডাকলেও উপাচার্যের ইচ্ছায় আলোচ্যসূচি পরিবর্তন করে ডিন নিয়োগের এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়মের ব্যত্যয় বলে আপত্তিও তুলেন দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য।

সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সভার অ্যাজেন্ডা ছিল উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা। ওই সভায় পাঁচজন ডিন নিয়োগ ও ডিন ক্যাটাগরিতে দুজন সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। সভায় ১৬ জন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১১ জন অংশ নেন।

এদিকে পাঁচ ডিন নিয়োগের মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ডিন নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ডিন নিয়োগ পাওয়ার কথা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ থেকে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সে নিয়োগের পাওয়ার কথা ছিল ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হকের। গত ৩ মার্চ ১৬ মাসের শিক্ষা ছুটি শেষে যোগদানপত্র জমা দিলেও যোগদান কার্যকর করেনি প্রশাসন। ফলে সিন্ডিকেটের আলোচ্য পরিবর্তন করে তড়িঘড়ি করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্লাহ কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ডিনের পদ থেকে বঞ্চিত মো: এমদাদুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি ৩ এর ৪ ধারা অনুযায়ী আমি গত ৩ মার্চ শিক্ষা ছুটি শেষে বিভাগে যোগদান করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু আইন বহির্ভূতভাবে গত ১১ দিনে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আইন অনুযায়ী বিভাগের আর্বতনে এবার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আমার যোগদান পত্র কার্যকর না করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগকে ডীন হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

এদিকে সিন্ডিকেটের আলোচ্যসূচি পরিবর্তন ও ডিন নিয়োগে অনিয়মের তুলেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাছান বলেন, আইনগতভাবে সিন্ডিকেট সভা এক বিষয়ে ডাকার পর অন্য বিষয়ে আলোচনা করা সম্ভব না। যে বিষয়ে ডাকা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। ডিন নিয়োগ তো প্রচলিত আইনের বিষয় এবং আইন দ্বারা এটা সুনির্দিষ্ট কার পরে কে হবে। ডিন নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেট সভার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না, কারণ এটা আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট।

শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, সিন্ডিকেটের সভাপতি মাননীয় উপাচার্য চরম জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির যে যৌক্তিক দাবিগুলোর ছিল সেগুলোর প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে এজেন্ডা পরিবর্তন করে ওনি অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়ার জন্য আজকের সিন্ডিকেট করেছে। একজন শিক্ষকের যোগদান ঠেকিয়ে অন্যজনকে অবৈধভাবে ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। ওনার অবৈধ কর্মকাণ্ডের আরও একটি প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ওনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান না। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন এবং সামনের দিকেও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে যাচ্ছেন।

তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঠিক আছে বলে দাবি করে সদ্য ব্যাবসায় অনুষদে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিন ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, বিভাগীয় রোটেশন অনুযায়ী এখন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ পাবে। পরে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, যোগদান পত্র কেন আটকিয়ে রাখছেন উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।