যৌথ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি কুবি শিক্ষক সমিতির

  • Update Time : ১০:৪৩:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 89

সাঈদ হাসান, কুবি
উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির সদস্য ও সাধারণ শিক্ষকরা দেখা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অতর্কিত ‘হামলা’ ও হেনস্থার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছে কুবি শিক্ষক সমিতি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ ও বহিরাগত সাবেক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহ মোট চার দাবি জানান তারা।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানা যায়।

চিঠিতে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চাশোর্ধ শিক্ষক উপাচার্যের সাথে মিষ্টি সহ দেখা করতে যান। পরে উপাচার্যের সাথে শিক্ষকদের আলোচনা বসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ব্যত্যয়, শিক্ষকদের পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ, শিক্ষাছুটি, অযাচিত বিভিন্ন শর্তারোপসহ শিক্ষকদের শিক্ষা-গবেষণা এবং পেশাগত ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে কথা বললে উপাচার্য কয়েকবার আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসেন।

এসময় কথার বনিবনা না হলে প্রক্টরিয়াল বডি উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করলে শিক্ষকদের মিথ্যাবাদী, অভদ্র, অশিক্ষকসুলভ বিশেষণে অভিহিত করেন উপাচার্য। “প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পর্কে আপনারা কোনো কথা বলবেন না, ‘শিক্ষক সমিতি’ প্রশাসনের কোনো অংশ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী” এ কথা বলেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে শিক্ষক সমিতি।

এসময়ে উপাচার্য কক্ষের বাইরে জনসমাবেশ হতে থাকে, এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে উপাচার্য কক্ষের প্রবেশ দরজার বাহির থেকে সজোরে লাথি, ধাক্কার শব্দ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্য দরজা খুলে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেনসহ এর নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে উপাচার্য দপ্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর স্লোগান দেয়, জীবননাশের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকি দেয় এবং কতিপয় শিক্ষকের উপর শারীরিক হামলা করা হয়। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে সকল শিক্ষক প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তা চাইলে তারা নির্বিকার ভূমিকা পালন করে।

চিঠিতে তারা আরও বলেন, পুরো ঘটনাটির পেছনে ছিল প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। উপাচার্য দপ্তরের ভিতরে কী ঘটছে সেটি বাহির থেকে কারো জানার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, প্রক্টরের ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে এ হামলায় ভূমিকা পালন করেছে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকায় প্রতীয়মান হয়েছে তারাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেইসব সন্ত্রাসীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। মাননীয় উপাচার্য উল্লেখ করেছেন, তিনি বহিরাগত কাউকে চেনেন না। তিনি যাদেরকে চেনেন না, সেই দুর্বৃত্তরা মাননীয় উপাচার্যের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। এ হামলার পরেও উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপাচার্য কার্যালয় ও ক্যাম্পাসে একসাথে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেছে।

এছাড়াও চিঠিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, কর্মকর্তা জাকির ও দেলোয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রক্টরের অপসারণ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী ও অছাত্রদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিও জানান তারা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


যৌথ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি কুবি শিক্ষক সমিতির

Update Time : ১০:৪৩:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সাঈদ হাসান, কুবি
উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির সদস্য ও সাধারণ শিক্ষকরা দেখা করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের অতর্কিত ‘হামলা’ ও হেনস্থার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছে কুবি শিক্ষক সমিতি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ ও বহিরাগত সাবেক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহ মোট চার দাবি জানান তারা।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানা যায়।

চিঠিতে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চাশোর্ধ শিক্ষক উপাচার্যের সাথে মিষ্টি সহ দেখা করতে যান। পরে উপাচার্যের সাথে শিক্ষকদের আলোচনা বসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ব্যত্যয়, শিক্ষকদের পদোন্নতি, স্থায়ীকরণ, শিক্ষাছুটি, অযাচিত বিভিন্ন শর্তারোপসহ শিক্ষকদের শিক্ষা-গবেষণা এবং পেশাগত ক্ষেত্রে বৈষম্য নিয়ে কথা বললে উপাচার্য কয়েকবার আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসেন।

এসময় কথার বনিবনা না হলে প্রক্টরিয়াল বডি উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করলে শিক্ষকদের মিথ্যাবাদী, অভদ্র, অশিক্ষকসুলভ বিশেষণে অভিহিত করেন উপাচার্য। “প্রশাসনের কার্যক্রম সম্পর্কে আপনারা কোনো কথা বলবেন না, ‘শিক্ষক সমিতি’ প্রশাসনের কোনো অংশ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী” এ কথা বলেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে শিক্ষক সমিতি।

এসময়ে উপাচার্য কক্ষের বাইরে জনসমাবেশ হতে থাকে, এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে উপাচার্য কক্ষের প্রবেশ দরজার বাহির থেকে সজোরে লাথি, ধাক্কার শব্দ আসতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্য দরজা খুলে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন ও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) দেলোয়ার হোসেনসহ এর নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে উপাচার্য দপ্তরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর স্লোগান দেয়, জীবননাশের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের শারীরিকভাবে আঘাতের হুমকি দেয় এবং কতিপয় শিক্ষকের উপর শারীরিক হামলা করা হয়। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে সকল শিক্ষক প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তা চাইলে তারা নির্বিকার ভূমিকা পালন করে।

চিঠিতে তারা আরও বলেন, পুরো ঘটনাটির পেছনে ছিল প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। উপাচার্য দপ্তরের ভিতরে কী ঘটছে সেটি বাহির থেকে কারো জানার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, প্রক্টরের ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে এ হামলায় ভূমিকা পালন করেছে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকায় প্রতীয়মান হয়েছে তারাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেইসব সন্ত্রাসীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন। মাননীয় উপাচার্য উল্লেখ করেছেন, তিনি বহিরাগত কাউকে চেনেন না। তিনি যাদেরকে চেনেন না, সেই দুর্বৃত্তরা মাননীয় উপাচার্যের পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। এ হামলার পরেও উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপাচার্য কার্যালয় ও ক্যাম্পাসে একসাথে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেছে।

এছাড়াও চিঠিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, কর্মকর্তা জাকির ও দেলোয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রক্টরের অপসারণ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী ও অছাত্রদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিও জানান তারা।