বিপিএলের সাত দলের সাতকাহন

  • Update Time : ১১:৪৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / 87

বিপিএলেও আইপিএলের মতো অধিনায়কদের ফটোশুটে কিছুটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে গত মৌসুম থেকে। ২০২৩ সালে ঢাকার মেট্রোরেলে হয়েছিল অধিনায়কদের ফটোসেশন। এবার বেছে নেওয়া হয় ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট জোনের মাটিকাটায় সাত বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরালকে। যদিও গতকালের ফটোসেশনে সব অধিনায়ককে একসঙ্গে পাননি বিপিএলের আয়োজকরা। তবে সব দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি ছিলেন। টুকটাক এ রকম দু-একটি ঘটনা ছাড়া সাদামাটাভাবে মাঠে গড়াচ্ছে এবারের বিপিএল। যেখানে দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটার থাকছেন প্রথম থেকেই।

বিপিএলের ঈগল কুমিল্লা: প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে বের হয়েই কুমিল্লার মালিক নাফিসা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা দল বানাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’ বিপিএলের ছয় আসরে খেলে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের স্বত্বাধিকারী এমন দাবি করতেই পারেন। দেশি-বিদেশি মিলেয়ে এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দলই গড়েছে তারা। মঈন আলি, সুনীল নারিন, আন্দ্রে রাসেল, রশিদ খানের মতো বৈশ্বিক তারকা ক্রিকেটার খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে।

খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতেখার আহমেদরা থাকছেন প্রথম দিকে। লিটন কুমার দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভির আহমেদ, রিশাদ হোসেনের সঙ্গে তরুণ ফাস্ট বোলার মুশফিক হাসান খেলবেন। দেশি-বিদেশি মিলেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কাগজে-কলমে সেরা। কুমিল্লার জন্য ইতিবাচক হলো, কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। গেম প্ল্যানে দারুণ মুনশিয়ানা দেখান তিনি।

রং চটেনি সিলেটের: সিলেট স্টাইকার্স বাজিমাত করে গত মৌসুমে। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে ফাইনাল খেলে দলটি। খুব বড় মানের কোনো বিদেশিও ছিল না তাদের। কাগজে-কলমে এবারও সাদামাটা একটি দল সিলেট। নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিম হাসান সাকিব ছাড়া সেভাবে বড় কোনো নাম নেই। বিদেশি ক্রিকেটার দলে টানার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে।

এর পরও সিলেটকে কোনোভাবেই পিছিয়ে রাখা যাবে না। কৌশলগত দিক থেকে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে তারা। তাদের বেশির ভাগ বিদেশি ক্রিকেটারই পুরো মৌসুম খেলবে। যেটা দল সমন্বয়ে কার্যকর হবে। টুর্নামেন্টের শুরুতে কিছুটা সংগ্রাম করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সেরা ছন্দে দেখা যেতে পারে।

রংপুরের বাজির ঘোড়া সাকিব: এবারের প্লেয়ার্স ড্রাফটে কিছুটা ‘রংবাজ’-এর মতোই ঢুকেছিলেন সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে ড্যাশিং একটা ব্যাপার ছিল। খেলার মাঠেও সেই জৌলুস দেখা যেতে পারে। সাকিব এবার ফ্রি বার্ড। নুরুল হাসান সোহানকে সামনে রেখে পেছন থেকে খেলবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার।

শেখ মেহেদি, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, রনি তালুকদার, হাসান মাহমুদকে নিয়ে রীতিমতো টি২০ জাতীয় দল তারা। বিদেশি কোটায় নিয়েছে বৈশ্বিক তারকা। নিকোলাস পুরান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, বাবর আজমের সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন অনেক তারকা। ছন্দ পেলে রংপুর থাকবে চ্যাম্পিয়ন রেসে।

অভিজ্ঞতায় ভারী বরিশাল: ফরচুন বরিশাল দেশসেরা ক্রিকেটার নিয়েও গত দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে এবার স্বপ্ন ছুঁতে চায় দলটি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, রাকিবুল হাসান, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলামদের নিয়ে রীতিমতো দ্বিতীয় জাতীয় দল বরিশাল।

বিদেশি দলে টানার ক্ষেত্রেও কুমিল্লার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারা। ফখর জামান, শোয়েব মালিক, আব্বাস আফ্রিদি, ইবরাহিম জাদরান ও ডেভিড মিলার ঠিকঠাক খেলে দিলে বিরশাল বারুদ দল। তামিমের নেতৃত্বে এবার বেশ গবেষণা করে দল সাজিয়েছে তারা। মিজানুর রহমান বাবুলকে প্রধান কোচ করা হলেও ডেভ হোয়াটমোর থাকবেন ড্রেসিংরুমে।

বিপিএলের পানসি চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স গত দুই আসরের মতো এবারও মোটামুটি মানের একটি দল গড়েছে। দেশের তারকা ক্রিকেটারে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি তারা। অভিজ্ঞদের মধ্যে পেসার আল আমিন হোসেন। ক্যারিয়ার শেষের দিকে থাকা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার খেলছেন দলটিতে।

সালাউদ্দিন শাকিল, জিয়াউর রহমান, শুভাগত হোমরা সেই ক্রিকেটার। চট্টগ্রামে বড় মানের বিদেশি ক্রিকেটারও নেই। স্কোয়াডে চোখ বুলালে যে কারও মনে হতে পারে, চট্টগ্রাম বিপিএলের পানসি।

খুলনা টাইগার্সে গর্জন নেই: তারকা বলতে যেটা বোঝায়, তা নেই খুলনার। তবে মানহীন ক্রিকেটার নিয়েছে তাও না। দেশের মাঝারি মানের ক্রিকেটার নিয়ে গড়া খুলনা। গত আসরে খেলা বেশ কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটার ধরে রেখেছে তারা। তবে ভালো দিক হলো, এবার বিকেএসপিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে খুলনা। যেটা ক্রিকেটারদের বোঝাপড়ায় কাজে দেবে।

ঢাকার ঢাক ফাঁপা: দুর্দান্ত ঢাকার বড় নাম আছে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামের মতো তারকা পেস বোলার ঢাকার। সাইফ হাসান, নাঈম শেখ, ইরফান শুক্কুরদের নিয়ে মোটামুটি দল তারা। নিয়মিত চার বিদেশি খেলাতে পারবে কিনা সন্দেহ। সব দিক বিবেচনায় নিলে ঢাকার র‍্যাঙ্কিং সাত নম্বরে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


বিপিএলের সাত দলের সাতকাহন

Update Time : ১১:৪৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪

বিপিএলেও আইপিএলের মতো অধিনায়কদের ফটোশুটে কিছুটা বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে গত মৌসুম থেকে। ২০২৩ সালে ঢাকার মেট্রোরেলে হয়েছিল অধিনায়কদের ফটোসেশন। এবার বেছে নেওয়া হয় ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট জোনের মাটিকাটায় সাত বীরশ্রেষ্ঠের ম্যুরালকে। যদিও গতকালের ফটোসেশনে সব অধিনায়ককে একসঙ্গে পাননি বিপিএলের আয়োজকরা। তবে সব দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি ছিলেন। টুকটাক এ রকম দু-একটি ঘটনা ছাড়া সাদামাটাভাবে মাঠে গড়াচ্ছে এবারের বিপিএল। যেখানে দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটার থাকছেন প্রথম থেকেই।

বিপিএলের ঈগল কুমিল্লা: প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে বের হয়েই কুমিল্লার মালিক নাফিসা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা দল বানাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’ বিপিএলের ছয় আসরে খেলে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের স্বত্বাধিকারী এমন দাবি করতেই পারেন। দেশি-বিদেশি মিলেয়ে এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দলই গড়েছে তারা। মঈন আলি, সুনীল নারিন, আন্দ্রে রাসেল, রশিদ খানের মতো বৈশ্বিক তারকা ক্রিকেটার খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে।

খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতেখার আহমেদরা থাকছেন প্রথম দিকে। লিটন কুমার দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভির আহমেদ, রিশাদ হোসেনের সঙ্গে তরুণ ফাস্ট বোলার মুশফিক হাসান খেলবেন। দেশি-বিদেশি মিলেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কাগজে-কলমে সেরা। কুমিল্লার জন্য ইতিবাচক হলো, কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। গেম প্ল্যানে দারুণ মুনশিয়ানা দেখান তিনি।

রং চটেনি সিলেটের: সিলেট স্টাইকার্স বাজিমাত করে গত মৌসুমে। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে ফাইনাল খেলে দলটি। খুব বড় মানের কোনো বিদেশিও ছিল না তাদের। কাগজে-কলমে এবারও সাদামাটা একটি দল সিলেট। নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিম হাসান সাকিব ছাড়া সেভাবে বড় কোনো নাম নেই। বিদেশি ক্রিকেটার দলে টানার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে।

এর পরও সিলেটকে কোনোভাবেই পিছিয়ে রাখা যাবে না। কৌশলগত দিক থেকে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে তারা। তাদের বেশির ভাগ বিদেশি ক্রিকেটারই পুরো মৌসুম খেলবে। যেটা দল সমন্বয়ে কার্যকর হবে। টুর্নামেন্টের শুরুতে কিছুটা সংগ্রাম করলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সেরা ছন্দে দেখা যেতে পারে।

রংপুরের বাজির ঘোড়া সাকিব: এবারের প্লেয়ার্স ড্রাফটে কিছুটা ‘রংবাজ’-এর মতোই ঢুকেছিলেন সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে ড্যাশিং একটা ব্যাপার ছিল। খেলার মাঠেও সেই জৌলুস দেখা যেতে পারে। সাকিব এবার ফ্রি বার্ড। নুরুল হাসান সোহানকে সামনে রেখে পেছন থেকে খেলবেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার।

শেখ মেহেদি, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, রনি তালুকদার, হাসান মাহমুদকে নিয়ে রীতিমতো টি২০ জাতীয় দল তারা। বিদেশি কোটায় নিয়েছে বৈশ্বিক তারকা। নিকোলাস পুরান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, বাবর আজমের সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন অনেক তারকা। ছন্দ পেলে রংপুর থাকবে চ্যাম্পিয়ন রেসে।

অভিজ্ঞতায় ভারী বরিশাল: ফরচুন বরিশাল দেশসেরা ক্রিকেটার নিয়েও গত দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে এবার স্বপ্ন ছুঁতে চায় দলটি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, রাকিবুল হাসান, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলামদের নিয়ে রীতিমতো দ্বিতীয় জাতীয় দল বরিশাল।

বিদেশি দলে টানার ক্ষেত্রেও কুমিল্লার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে তারা। ফখর জামান, শোয়েব মালিক, আব্বাস আফ্রিদি, ইবরাহিম জাদরান ও ডেভিড মিলার ঠিকঠাক খেলে দিলে বিরশাল বারুদ দল। তামিমের নেতৃত্বে এবার বেশ গবেষণা করে দল সাজিয়েছে তারা। মিজানুর রহমান বাবুলকে প্রধান কোচ করা হলেও ডেভ হোয়াটমোর থাকবেন ড্রেসিংরুমে।

বিপিএলের পানসি চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স গত দুই আসরের মতো এবারও মোটামুটি মানের একটি দল গড়েছে। দেশের তারকা ক্রিকেটারে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি তারা। অভিজ্ঞদের মধ্যে পেসার আল আমিন হোসেন। ক্যারিয়ার শেষের দিকে থাকা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার খেলছেন দলটিতে।

সালাউদ্দিন শাকিল, জিয়াউর রহমান, শুভাগত হোমরা সেই ক্রিকেটার। চট্টগ্রামে বড় মানের বিদেশি ক্রিকেটারও নেই। স্কোয়াডে চোখ বুলালে যে কারও মনে হতে পারে, চট্টগ্রাম বিপিএলের পানসি।

খুলনা টাইগার্সে গর্জন নেই: তারকা বলতে যেটা বোঝায়, তা নেই খুলনার। তবে মানহীন ক্রিকেটার নিয়েছে তাও না। দেশের মাঝারি মানের ক্রিকেটার নিয়ে গড়া খুলনা। গত আসরে খেলা বেশ কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটার ধরে রেখেছে তারা। তবে ভালো দিক হলো, এবার বিকেএসপিতে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে খুলনা। যেটা ক্রিকেটারদের বোঝাপড়ায় কাজে দেবে।

ঢাকার ঢাক ফাঁপা: দুর্দান্ত ঢাকার বড় নাম আছে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামের মতো তারকা পেস বোলার ঢাকার। সাইফ হাসান, নাঈম শেখ, ইরফান শুক্কুরদের নিয়ে মোটামুটি দল তারা। নিয়মিত চার বিদেশি খেলাতে পারবে কিনা সন্দেহ। সব দিক বিবেচনায় নিলে ঢাকার র‍্যাঙ্কিং সাত নম্বরে।