পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী আজ
- Update Time : ১১:৫২:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
- / 180
ফরিদপুর প্রতিনিধি:
পল্লীকবি খ্যাত জসীম উদ্দীনের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী রোববার (১ জানুয়ারি)। ১৯০৪ সালে মতান্তরে ১৯০৩ সালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আনসারউদ্দিন মোল্যা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম আমিনা খাতুন।
তিনি একজন আধুনিক মানের শক্তিশালী কবি। তবে গ্রাম-বাংলার মাটি ও মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাকে কেন্দ্র করে দরদি কবিতা, ছড়া, গীতিকবিতা ও উপন্যাস সহ সাহিত্য রচনা করায় তাকে পল্লীকবি বলা হয়।
সাহিত্যবিশারদদের মতে, পল্লীকবি উপাধিতে ভূষিত জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্দীনের। তার ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
জসীম উদ্দীন প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮), বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন পল্লীকবি খ্যাত জসীম উদ্দীন।
কবির স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে কবির বাড়ির অদূরে অম্বিকাপুরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অর্থায়নে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে পল্লী কবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রায় তিন বছর পর ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন।
কবির জন্মদিন উপলক্ষে তার বসতভিটা ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সকালে কবর জেয়ারত ও দোয়া, আলোচনা সভা এবং কবিতা পাঠের আসর। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশন এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
তবে কবির জন্মবার্ষিকীতে এখনো ‘জসীম পল্লীমেলা’ আয়োজনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। মেলার মাঠের সংস্কার কাজ চলার কারণে মেলা আয়োজনে বিলম্ব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে অম্বিকাপুরে কবির বাড়ির প্রাঙ্গণে কুমার নদীর তীরে মাসব্যাপী জসীম মেলার আয়োজন শুরু হয়। তবে দীর্ঘবছর চলার পর ২০১৮ সাল হতে জসীম মেলা আয়োজনে ছন্দপতন ঘটে। এরপর চারবছর বিরতির পর গত বছর মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনার কারণে ১ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৫ মে থেকে পক্ষকালব্যাপী আয়োজন করা হয়। মেলায় চারু ও কারুপণ্য ছাড়াও আসবাবপত্র ও বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যের সমাহার ঘটে। নির্মল বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, সার্কাস এমনকি প্রথমদিকে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাও মঞ্চস্থ হতো। তবে পরবর্তীতে অশ্লীলতার কারণে যাত্রাপালা বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে জসীম মঞ্চে গান, নাচ, নাটকসহ বিভিন্ন লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। ফরিদপুর ছাড়াও এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জসীম মেলার বিশেষ আবেদন রয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, কবির বাড়ির প্রাঙ্গণে মাঠের সংস্কার ও সৌন্দয্যবৃদ্ধি এবং সংলগ্ন কুমার নদের তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান থাকায় এবছর যথাসময়ে জসীম পল্লী মেলা শুরু করা যায়নি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমরা এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পক্ষকালব্যাপী হলেও এ মেলার আয়োজন করা সম্ভব হবে।