‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’

  • Update Time : ০১:৩১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • / 553

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন:

আজি হতে অর্ধ শতবর্ষ পূর্বে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।” জাতির পিতার কট্টর সমালোচক ও ক্ষ্যাপাটে বিরোধী আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য চর্যাপদ নয়, বৈষ্ণব গীতিকা নয়, সোনার তরী কিংবা গীতাঞ্জলি কোনোটা নয়, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতি হলো “আর দাবায়া রাখতে পারবা না”।

সাত মার্চের ভাষণের পর পঁচিশ মার্চের কালরাতে বাঙালিকে দমন করার জন্য নৃশংস গণহত্যা শুরু করা হয়। নয়মাস ধরে চলে হত্যাযজ্ঞ। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় নি। ওরাই দেবে গেছে। পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের কালরাতে বাঙালির সাহসের খনি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হল বাঙালিকে দাবানোর জন্য। জাতির পিতার বিদুষী কন্যা শেখ হাসিনার ওপর বারবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পিএমএ প্রশিক্ষিত জল্লাদের সন্তান খুনি তারেক আর্জেস গ্রেণেড দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা করলো তার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে। উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যা ছিল ইয়াহিয়া-টিক্কার, তাই ছিল জিয়া- তারেকের। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখবার দুঃস্বপ্ন। কিন্তু মহান রাহমানুর রাহীম রহমতের চাদর বিছিয়ে বাঙালির স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সুরক্ষা দিয়েছেন।

আজ এক শুভ দিন। ২০০৮ সালে আজকের দিনে অনুষ্ঠিত অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালির আপন দল আওয়ামী লীগ ভুমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অগ্রযাত্রা টেকসই ও গতিময় হয়েছে।

আজ আরেক শুভ দিন। আজ বাঙালি মেট্রোরেলের যুগে শুভ পদার্পণ করল। দিগ্বিজয়ী রাষ্ট্রনেতা, বাঙালির আপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাঙালি নতুন স্বপ্ন যাত্রার মাইল ফলক অতিক্রম করল। এই মেট্রোরেলের কারিগর জাপানিজ প্রকৌশলীদের হলি আর্টিজেনে হত্যা করা হয় যেন ওরা পালিয়ে যান। বাঙালির স্বপ্ন যাত্রা যেন পতিত প্রকল্পে পরিণত হয়।

কিন্তু মুজিবকন্যার দৃঢ়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জাপানিজ প্রকৌশলীরা আমাদের পাশে থেকে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজসম্পন্ন করেছেন। বাঙালির অকৃত্রিম ও সর্বকালের বন্ধু জাপানিজদের প্রতি আন্তরিক কৃতজতা জ্ঞাপন করছি।

বাংলাদেশ এমন একটি দেশ এবং সম্ভবত একটিমাত্র দেশ, যে দেশে জন্ম নেওয়া ও বসবাসকারী কতিপয় নাগরিক দেশকে অবজ্ঞা করে পৈশাচিক সুখ পায়। দেশের যে কোন অর্জন ভালভাবে নিতে পারে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জ্বালায় দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। পাকিস্তানের রক্তবীজ বা আদর্শবীজ ধারন করা অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি নামে পরিচিত সম্মানিত নাগরিকদের মাঝেও নানা নেতিবাচক তথ্য উপাত্ত দিয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতি বিরোধী গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের ছড়ানো গুজবের পালে ঠিকমত হাওয়া লাগলে রাতারাতি আমাদের অর্থনীতি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে জেনেও এই ধরণের জ্ঞানবাজরা সযতনে কাজটি করে থাকেন।

সেন্টার ফর পোলাইট ডেভিলস- এর জ্ঞানবাজদের উৎপাদিত নানাবিধ আশঙ্কার খানিকটা বাস্তবে রূপ পেলে বাংলাদেশ বহু আগেই ইথোওপিয়া হয়ে যেত। সৌভাগ্য যে, তাদের ‘ডলারের বিনিময়ে তথ্য সন্ত্রাস’ কর্মকান্ডের বিপরীতে বাঙালি জাতির হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দেশপ্রেমিক সঠিক নেতৃত্ব দেশকে সমুখের পানে এগিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আজ উন্নয়ন-মাতার হাত ধরে আমরা এক নতুন যুগে পদার্পণ করলাম। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের দূর্ঘটনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা যায় যে, ২০২২ সালে ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন যে কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলেছে, রাজধানী ঢাকার অসহনীয় যানজটে শুধু মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না—এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ও। শুধু ঢাকার যানজটের কারণেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৯ শতাংশ। মেট্রোরেল নিঃসন্দেহে গতিময় যাতায়াত নিশ্চিত করবে।

মহান আল্লাহর অসীম রহমতে উন্নয়ন মাতা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে এবং তাঁর যাদুকরি হাতে দেশ পরিচালনার ভার অর্পিত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো ৫ টি উড়াল ও পাতাল রেল লাইন চালু হবে। ৩১ কিলোমিটারের এমআরটি-১ নির্মিত হবে বিমানবন্দর থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত। এই প্রকল্পে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন বাজার এমআরটি-১ থেকে পূর্বাচলের দিকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত আরো ১১.৩৭ কিলোমিটারের উড়ালপথ নির্মিত হবে ২০২৮ সালের টার্গেটে।

২০ কিলোমিটারের এমআরটি-৫ (উত্তর) সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে আমিনবাজার- মিরপুর- বনানী- গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মিত হবে। এই প্রকল্পেও জাপান ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে অর্থায়ন করবে, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। গাবতলী থেকে আসাদগেট- রাসেলস্কয়ার-সোনারগাঁও- হাতিরঝিল- রামপুরা হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.৪০ কিলোমিটার উড়াল-পাতাল মিলিয়ে এমআরটি-৫ (দক্ষিণ) নির্মিত হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে বসিলা- মোহাম্মদপুর- ঝিগাতলা- সায়েন্সল্যব- নীলক্ষেত- আজিমপুর- গুলিস্তান- মতিঝিল-কমলাপুর- ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের এমআরটি -২ নির্মিত হবে। জিটুজি পিপিপি’র ভিত্তিতে লাইনটি নির্মাণের জন্য জাপান ও বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

এভাবে সমগ্র ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে উড়াল ও পাতাল পথে মেট্রোরেল দিয়ে সংযুক্ত করা হবে। আর ৮ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো সমাপ্ত হবে। ঢাকায় যানজট কমবে, জ্বালানি তেলের বায়ুদূষণ কমবে, পরিবেশ উন্নত হবে। সর্বোপরি যানজটের কারনে যে ২.৯% জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি লোকসান হচ্ছে সেখান থেকে দুই তৃতীয়াংশ লোকসান পুষিয়ে কেবলমাত্র একটি খাত আমাদের ২% প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি সম্ভব হবে। বর্তমান ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের জাতীয় অর্থনীতির ২% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি টাকার অঙ্কে কত হয় তা একবার পাঠক বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

আজকের শুভদিনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের “আর দাবায়ে রাখবার পারবা না” বজ্রকন্ঠ বারবার মনে পড়ছে। বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নতুন স্বপ্ন সফল হোক। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্ন সম্ভব করে।

লেখক :জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’

Update Time : ০১:৩১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন:

আজি হতে অর্ধ শতবর্ষ পূর্বে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।” জাতির পিতার কট্টর সমালোচক ও ক্ষ্যাপাটে বিরোধী আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য চর্যাপদ নয়, বৈষ্ণব গীতিকা নয়, সোনার তরী কিংবা গীতাঞ্জলি কোনোটা নয়, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতি হলো “আর দাবায়া রাখতে পারবা না”।

সাত মার্চের ভাষণের পর পঁচিশ মার্চের কালরাতে বাঙালিকে দমন করার জন্য নৃশংস গণহত্যা শুরু করা হয়। নয়মাস ধরে চলে হত্যাযজ্ঞ। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় নি। ওরাই দেবে গেছে। পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের কালরাতে বাঙালির সাহসের খনি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হল বাঙালিকে দাবানোর জন্য। জাতির পিতার বিদুষী কন্যা শেখ হাসিনার ওপর বারবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পিএমএ প্রশিক্ষিত জল্লাদের সন্তান খুনি তারেক আর্জেস গ্রেণেড দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা করলো তার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে। উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যা ছিল ইয়াহিয়া-টিক্কার, তাই ছিল জিয়া- তারেকের। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখবার দুঃস্বপ্ন। কিন্তু মহান রাহমানুর রাহীম রহমতের চাদর বিছিয়ে বাঙালির স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সুরক্ষা দিয়েছেন।

আজ এক শুভ দিন। ২০০৮ সালে আজকের দিনে অনুষ্ঠিত অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালির আপন দল আওয়ামী লীগ ভুমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অগ্রযাত্রা টেকসই ও গতিময় হয়েছে।

আজ আরেক শুভ দিন। আজ বাঙালি মেট্রোরেলের যুগে শুভ পদার্পণ করল। দিগ্বিজয়ী রাষ্ট্রনেতা, বাঙালির আপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাঙালি নতুন স্বপ্ন যাত্রার মাইল ফলক অতিক্রম করল। এই মেট্রোরেলের কারিগর জাপানিজ প্রকৌশলীদের হলি আর্টিজেনে হত্যা করা হয় যেন ওরা পালিয়ে যান। বাঙালির স্বপ্ন যাত্রা যেন পতিত প্রকল্পে পরিণত হয়।

কিন্তু মুজিবকন্যার দৃঢ়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জাপানিজ প্রকৌশলীরা আমাদের পাশে থেকে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজসম্পন্ন করেছেন। বাঙালির অকৃত্রিম ও সর্বকালের বন্ধু জাপানিজদের প্রতি আন্তরিক কৃতজতা জ্ঞাপন করছি।

বাংলাদেশ এমন একটি দেশ এবং সম্ভবত একটিমাত্র দেশ, যে দেশে জন্ম নেওয়া ও বসবাসকারী কতিপয় নাগরিক দেশকে অবজ্ঞা করে পৈশাচিক সুখ পায়। দেশের যে কোন অর্জন ভালভাবে নিতে পারে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জ্বালায় দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। পাকিস্তানের রক্তবীজ বা আদর্শবীজ ধারন করা অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি নামে পরিচিত সম্মানিত নাগরিকদের মাঝেও নানা নেতিবাচক তথ্য উপাত্ত দিয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতি বিরোধী গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের ছড়ানো গুজবের পালে ঠিকমত হাওয়া লাগলে রাতারাতি আমাদের অর্থনীতি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে জেনেও এই ধরণের জ্ঞানবাজরা সযতনে কাজটি করে থাকেন।

সেন্টার ফর পোলাইট ডেভিলস- এর জ্ঞানবাজদের উৎপাদিত নানাবিধ আশঙ্কার খানিকটা বাস্তবে রূপ পেলে বাংলাদেশ বহু আগেই ইথোওপিয়া হয়ে যেত। সৌভাগ্য যে, তাদের ‘ডলারের বিনিময়ে তথ্য সন্ত্রাস’ কর্মকান্ডের বিপরীতে বাঙালি জাতির হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দেশপ্রেমিক সঠিক নেতৃত্ব দেশকে সমুখের পানে এগিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আজ উন্নয়ন-মাতার হাত ধরে আমরা এক নতুন যুগে পদার্পণ করলাম। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের দূর্ঘটনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা যায় যে, ২০২২ সালে ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন যে কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলেছে, রাজধানী ঢাকার অসহনীয় যানজটে শুধু মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না—এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ও। শুধু ঢাকার যানজটের কারণেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৯ শতাংশ। মেট্রোরেল নিঃসন্দেহে গতিময় যাতায়াত নিশ্চিত করবে।

মহান আল্লাহর অসীম রহমতে উন্নয়ন মাতা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে এবং তাঁর যাদুকরি হাতে দেশ পরিচালনার ভার অর্পিত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো ৫ টি উড়াল ও পাতাল রেল লাইন চালু হবে। ৩১ কিলোমিটারের এমআরটি-১ নির্মিত হবে বিমানবন্দর থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত। এই প্রকল্পে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন বাজার এমআরটি-১ থেকে পূর্বাচলের দিকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত আরো ১১.৩৭ কিলোমিটারের উড়ালপথ নির্মিত হবে ২০২৮ সালের টার্গেটে।

২০ কিলোমিটারের এমআরটি-৫ (উত্তর) সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে আমিনবাজার- মিরপুর- বনানী- গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মিত হবে। এই প্রকল্পেও জাপান ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে অর্থায়ন করবে, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। গাবতলী থেকে আসাদগেট- রাসেলস্কয়ার-সোনারগাঁও- হাতিরঝিল- রামপুরা হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.৪০ কিলোমিটার উড়াল-পাতাল মিলিয়ে এমআরটি-৫ (দক্ষিণ) নির্মিত হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে বসিলা- মোহাম্মদপুর- ঝিগাতলা- সায়েন্সল্যব- নীলক্ষেত- আজিমপুর- গুলিস্তান- মতিঝিল-কমলাপুর- ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের এমআরটি -২ নির্মিত হবে। জিটুজি পিপিপি’র ভিত্তিতে লাইনটি নির্মাণের জন্য জাপান ও বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

এভাবে সমগ্র ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে উড়াল ও পাতাল পথে মেট্রোরেল দিয়ে সংযুক্ত করা হবে। আর ৮ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো সমাপ্ত হবে। ঢাকায় যানজট কমবে, জ্বালানি তেলের বায়ুদূষণ কমবে, পরিবেশ উন্নত হবে। সর্বোপরি যানজটের কারনে যে ২.৯% জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি লোকসান হচ্ছে সেখান থেকে দুই তৃতীয়াংশ লোকসান পুষিয়ে কেবলমাত্র একটি খাত আমাদের ২% প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি সম্ভব হবে। বর্তমান ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের জাতীয় অর্থনীতির ২% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি টাকার অঙ্কে কত হয় তা একবার পাঠক বিবেচনা করে দেখতে পারেন।

আজকের শুভদিনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের “আর দাবায়ে রাখবার পারবা না” বজ্রকন্ঠ বারবার মনে পড়ছে। বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নতুন স্বপ্ন সফল হোক। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্ন সম্ভব করে।

লেখক :জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।