ছাত্রলীগকে যেসব পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

  • Update Time : ০৩:৪০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
  • / 377

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কাজেই নিজেদের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। রাজনীতির পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

বুধবার (৩১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে আলোচনা সভায়’ অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনার সময় ছাত্রলীগ সবার আগে মাঠে নেমেছে। এভাবেই মানবতার সেবা করে যেতে হবে। পাশাপাশি যেটা সব থেকে বেশি দরকার-লেখাপড়া শিখতে হবে।’

‘আমি দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।’

প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞানের যুগ। শিক্ষায়-দীক্ষায় তাল মিলিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেভাবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে।’

‘ছাত্ররাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানতে হবে,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ চালাতে গেলে ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। এই দেশের ভবিষ্যৎ আমরা কী করবো-সেই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।’

টাকার পেছনে না ছুটতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই। এক দিন খালি হাতেই চলে যেতে হবে। অর্থ-সম্পদের দিকে না দৌড়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সংগঠন গোছানোর জন্য মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন। সেটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’

ছাত্রলীগকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতুফালতু লোক ঢুকানো যাবে না। তাতে নিজেদের, দলের ও দেশের বদনাম হয়। আমাদের পেছনেতো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলে বড় নিউজ। নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।’

আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা উদ্বুদ্ধ হতে হবে, স্বাধীনতার আদর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গড়ে উঠতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিজেকে গড়ে তুলতে হবে, যেন সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া যায়। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। মাথায় রাখতে হবে– এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার লেখা আমার দেখা নয় চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসামাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেককিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলবো, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেবো। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনও মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। আমরা আগে থেকেই যদি সাবধান হতে পারি, তাহলে সামাল দিতে পারবো। প্রত্যেকে নিজের ঘরে, হলে, ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় সুইচগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে আমাদের বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। অহেতুক ঘোরাঘুরির দরকার নেই। পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো হয়, শরীর চর্চাও হয়।’

করোনার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ ভবন মেরামত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আর প্রত্যেকে যার যার গ্রামের বাড়ি এবং যেখানে বসবাস করবে– হল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো, চাষ করা এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্বে কিন্তু আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। কোনও পয়সা দিয়েও খাবার পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদে উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

Please Share This Post in Your Social Media


ছাত্রলীগকে যেসব পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

Update Time : ০৩:৪০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। কাজেই নিজেদের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। রাজনীতির পাশাপাশি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

বুধবার (৩১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে আলোচনা সভায়’ অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনার সময় ছাত্রলীগ সবার আগে মাঠে নেমেছে। এভাবেই মানবতার সেবা করে যেতে হবে। পাশাপাশি যেটা সব থেকে বেশি দরকার-লেখাপড়া শিখতে হবে।’

‘আমি দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।’

প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞানের যুগ। শিক্ষায়-দীক্ষায় তাল মিলিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেভাবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে।’

‘ছাত্ররাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানতে হবে,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ চালাতে গেলে ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হতে হবে। এই দেশের ভবিষ্যৎ আমরা কী করবো-সেই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।’

টাকার পেছনে না ছুটতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই। এক দিন খালি হাতেই চলে যেতে হবে। অর্থ-সম্পদের দিকে না দৌড়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সংগঠন গোছানোর জন্য মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন। সেটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’

ছাত্রলীগকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতুফালতু লোক ঢুকানো যাবে না। তাতে নিজেদের, দলের ও দেশের বদনাম হয়। আমাদের পেছনেতো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলে বড় নিউজ। নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।’

আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা উদ্বুদ্ধ হতে হবে, স্বাধীনতার আদর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গড়ে উঠতে হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নিজেকে গড়ে তুলতে হবে, যেন সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া যায়। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। মাথায় রাখতে হবে– এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার লেখা আমার দেখা নয় চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসামাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেককিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলবো, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেবো। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনও মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।’

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। আমরা আগে থেকেই যদি সাবধান হতে পারি, তাহলে সামাল দিতে পারবো। প্রত্যেকে নিজের ঘরে, হলে, ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় সুইচগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে আমাদের বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। অহেতুক ঘোরাঘুরির দরকার নেই। পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো হয়, শরীর চর্চাও হয়।’

করোনার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জরাজীর্ণ ভবন মেরামত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। আর প্রত্যেকে যার যার গ্রামের বাড়ি এবং যেখানে বসবাস করবে– হল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে গাছ লাগানো, চাষ করা এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্বে কিন্তু আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। কোনও পয়সা দিয়েও খাবার পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদে উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।