স্বাধীন দেশের ৫১তম বাজেট পেশ বৃহস্পতিবার
- Update Time : ১০:৫৬:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জুন ২০২২
- / 129
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ৫১তম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর ৫১তম আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২৩তম জাতীয় বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
চলমান বাজেট অধিবেশনে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সভায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। মন্ত্রী পরিষদ সভায় নতুন বাজেট অনুমোদনের পর, রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেওয়ার পর তা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
সাধারণত, ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একটি অর্থবছর ধরা হয়। সরকারের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সংবলিত এই বাজেটে থাকে অনেক হিসাব নিকাশ। সে হিসেবে আগামী ৩০ জুন ২০২১-২০২২ অর্থবছর শেষ হবে এবং ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শুরু হবে।
এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি কোভিড পরবর্তী বিরাজমান বৈশ্বিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেটা কারো পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দেশের মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকবে নতুন বাজেটে।
বাজেটে বাংলাদেশের মোট বিনিয়োগ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। বতর্মানে এর পরিমাণ হচ্ছে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হচ্ছে ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে নতুন অর্থছরের মূল্যস্ফীতি প্রক্ষেপন করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সরকারের অনুমোদিত ১০০ বছরের ডেল্টা পরিকল্পনা হবে তথ্য প্রযুক্তি এবং জ্ঞান নির্ভর ‘টেকনো-ইকনোমিক মাস্টার প্ল্যান’। ধাপ ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন করতে দেশের মানুষের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপির পরিমাণ ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকছে নতুন বাজেটে।
দেশের জন্য বেকারত্ব এখনো একটি প্রধান সমস্যা। গেল এক দশকে বাংলাদেশ বেশ সন্তোষজনক জিডিপি অর্জন করেছে। কিন্তু বেকারত্বের হার এখনো সেই একই রকম রয়েছে। ২০১৩ এবং ২০১৬-২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায় বেকারত্বের হার হচ্ছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৩ এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৬-২০১৭ সালে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ (৫৮ দশমিক ১ মিলিয়ন থেকে ৬০ দশমিক ৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের খসড়া প্রস্তাব করা হবে। নতুন এই বাজেটের আকার সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা কি না চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এটি ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি বা ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেটটি উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে তাতে ঘাটতিই থাকবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসাবে যা সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ হলেও সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে বেশি নির্ভর করতে হবে ব্যাংকিং খাতের ওপর। এই খাত থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়। এবার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করার কারণে বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য ঋণ বঞ্চিত হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিট ঋণ নেওয়া হবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। আর ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ১৭৮ হাজার কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ দিতেই ব্যয় করতে হবে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। এই সুদের মধ্যে আবার দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় হবে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ গুনতে হবে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয়ের জন্য ধরা রয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটের বড় একটি দিক হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ৯ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে জন্য জিডিপির আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাবদ আয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। যে কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যেখানে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।