ডিমের কুসুমে রক্তের দাগ

  • Update Time : ০৯:৫৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২
  • / 393

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ একটা উৎস হলো ডিম। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় ডিম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেশিরভাগ পুষ্টিকর উপাদান প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ডিম। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি এবং বি-টুয়েলভ্। এছাড়াও ডিমে রয়েছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নাম দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা চোখের ছানিপড়া এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। এছাড়া ডিমে থাকা ফসফরাস দেহের হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং ডিমের কুসুমে জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অধিকাংশ মানুষের সকালের নাশতায় ডিম থাকে এবং অনেক ধরণের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ডিম। ডিমের পোচ, ডিমের অমলেট, ডিম সিদ্ধ– এই তিন খাবার অসম্ভব জনপ্রিয়। তবে ডিম ভাঙার পর কখনও কুসুমে লাল রক্তের দাগ খেয়াল করেছেন ? এমন ডিম যদি খেয়েও ফেলেন তাহলে কী হয় শরীরে?

ডিমের স্বচ্ছ সাদা অংশ এবং উজ্জ্বল হলুদ কুসুমের মধ্যে হালকা ব্লাড স্পট দেখা গেলে তা অস্বস্তির সৃষ্টি করে এবং চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় মাংসের টুকরোও লক্ষ্য করা যায়। মনে প্রশ্ন জাগে এটি খাওয়া নিরাপদ কিনা? বা কীভাবে এর মধ্যে রক্ত এলো? আসুন তাহলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমের কুসুমে রক্তের দাগ থাকলে তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, যদি সেটা ভালো করে রান্না করা হয়। অর্থাৎ সঠিক সময় ধরে যদি সেটি ভাজা বা সিদ্ধ করা হয়, তাহলে সেই ডিম খেলে কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকে আবার রক্তের অংশটি চামচ দিয়ে তুলে নিয়ে রান্না করেন, তাতেও কোনও ক্ষতি নেই।

কখনো কখনো ডিমের কুসুমের মধ্যে সামান্য রক্তের বা মাংসের চিহ্ন দেখা যায়। কুসুমের মধ্যে দেখা যাওয়া এমন পাতলা রক্তের দাগ ক্ষতিকর নয়। ডিমের গঠনের সময় মুরগীর ডিম্বাশয়ে বা কুসুম থলিতে কৈশিকনালী ফেটে গেলে এমন হতে পারে। এটি নিষিক্ত ডিমকে বুঝায় না।

ডিমের সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন যদি গোলাপি বা লাল হয় তাহলে তা নষ্ট হয়ে গেছে ধরে নিতে হবে। সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এমন হয় বলে এ ধরণের ডিম খাওয়া উচিৎ নয়। এছাড়া সবুজ ডিমেও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার থাকে বলে এই ধরণের ডিম খাওয়াও উচিৎ নয়। কিছু জীবাণু সবুজাভ, উজ্জ্বল এবং পানিতে দ্রবণীয় রঞ্জক উৎপন্ন করে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

ডিমের ভেতরের গঠন ও বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণার কাজে “ক্যান্ডলিং” নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ডিমের পেছনের দিকে উজ্জ্বল আলো ফেলা হয় যাতে খোলসের ভেতর দিয়েও ডিমের ভেতরের সব কিছু দেখা যায়। এখানে আলোর উৎস হিসেবে মোমবাতি ব্যবহার করা হয়।

ডিম শিল্পে ডিমের মান নির্ণয়ের জন্য এই কৌশল ব্যবহার করা হয়। ম্যাস ক্যান্ডলিং বা ইলেকট্রনিক স্পটারস বেশীরভাগ রক্তের দাগ শনাক্ত করতে পারে। প্যাকেটজাত করার পূর্বেই এই ধরণের ডিমগুলো আলাদা করা হয় এবং ইউএসডিএ এগুলোকে বি গ্রেডে রাখে। কিন্তু এভাবে সবকিছু নির্ণয় করা অসম্ভব।

জানা গিয়েছে, ডিম্বনালী দিয়ে ডিম যাওয়ার সময় অনেক সময়ই তাতে মাংসের টুকরো বা রক্ত মিশে যায়। এতে শরীরে ক্ষতি করার মতো কিছু থাকে না।

সাধারণত ১ শতাংশ ডিমের কুসুমে এমন রক্তের দাগ দেখা যায়। ডিম বাজারে আসার আগে সেটি ক্যান্ডলিং পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। জোরালো আলো দিয়ে কুসুমের ভিতরটি দেখা হয়, সেখানেই রক্তের দাগযুক্ত ডিম বাতিল হয়ে যায়। ফলে খুব কম সময়ই এমন ডিম আমাদের হাতে পড়ে।

সাদা খোলের চেয়ে খয়েরি রঙের খোলযুক্ত ডিমে রক্তের দাগযুক্ত কুসুম বেশি পাওয়া যায়। কারণ খয়েরি খোলের রং অনেক সময়ই সেই দাগকে ঢেকে দেয়। ফলে পরীক্ষার সময় সেটি ধরা পড়ে না। বাজারে চলে আসে। তবে অনেক সময় ডিমের সাদা অংশেও রক্তের দাগ দেখা যায়। এতেও শরীরে কোনও ক্ষতি হয় না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

ডিমের মধ্যে ব্লাড স্পট বা অন্যকোন অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের জন্য কোন খাবার তৈরির সময় এর সাথে ডিম যোগ করার আগে একটি আলাদা পাত্রে একটি একটি করে ডিম ভাঙ্গা উচিৎ।

এতে আপনার পুরো রেসিপিটি নষ্ট হবার ভয় থাকেনা এবং ডিমের খোসা মিশে যাওয়ারও ভয় থাকেনা। ইচ্ছে করলে পরিষ্কার একটি ছুরি দিয়ে ডিমের কুসুমের রক্তের চিহ্নটি সরিয়ে তারপর রান্না করতে পারেন। এটিসহ রান্না করলেও কোন সমস্যা নেই।

Please Share This Post in Your Social Media


ডিমের কুসুমে রক্তের দাগ

Update Time : ০৯:৫৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ একটা উৎস হলো ডিম। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় ডিম রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বেশিরভাগ পুষ্টিকর উপাদান প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ডিম। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি এবং বি-টুয়েলভ্। এছাড়াও ডিমে রয়েছে লুটেইন ও যিয়াস্যানথিন নাম দুটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা চোখের ছানিপড়া এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। এছাড়া ডিমে থাকা ফসফরাস দেহের হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং ডিমের কুসুমে জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অধিকাংশ মানুষের সকালের নাশতায় ডিম থাকে এবং অনেক ধরণের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ডিম। ডিমের পোচ, ডিমের অমলেট, ডিম সিদ্ধ– এই তিন খাবার অসম্ভব জনপ্রিয়। তবে ডিম ভাঙার পর কখনও কুসুমে লাল রক্তের দাগ খেয়াল করেছেন ? এমন ডিম যদি খেয়েও ফেলেন তাহলে কী হয় শরীরে?

ডিমের স্বচ্ছ সাদা অংশ এবং উজ্জ্বল হলুদ কুসুমের মধ্যে হালকা ব্লাড স্পট দেখা গেলে তা অস্বস্তির সৃষ্টি করে এবং চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় মাংসের টুকরোও লক্ষ্য করা যায়। মনে প্রশ্ন জাগে এটি খাওয়া নিরাপদ কিনা? বা কীভাবে এর মধ্যে রক্ত এলো? আসুন তাহলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমের কুসুমে রক্তের দাগ থাকলে তা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, যদি সেটা ভালো করে রান্না করা হয়। অর্থাৎ সঠিক সময় ধরে যদি সেটি ভাজা বা সিদ্ধ করা হয়, তাহলে সেই ডিম খেলে কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকে আবার রক্তের অংশটি চামচ দিয়ে তুলে নিয়ে রান্না করেন, তাতেও কোনও ক্ষতি নেই।

কখনো কখনো ডিমের কুসুমের মধ্যে সামান্য রক্তের বা মাংসের চিহ্ন দেখা যায়। কুসুমের মধ্যে দেখা যাওয়া এমন পাতলা রক্তের দাগ ক্ষতিকর নয়। ডিমের গঠনের সময় মুরগীর ডিম্বাশয়ে বা কুসুম থলিতে কৈশিকনালী ফেটে গেলে এমন হতে পারে। এটি নিষিক্ত ডিমকে বুঝায় না।

ডিমের সাদা অংশ বা অ্যালবুমিন যদি গোলাপি বা লাল হয় তাহলে তা নষ্ট হয়ে গেছে ধরে নিতে হবে। সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এমন হয় বলে এ ধরণের ডিম খাওয়া উচিৎ নয়। এছাড়া সবুজ ডিমেও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার থাকে বলে এই ধরণের ডিম খাওয়াও উচিৎ নয়। কিছু জীবাণু সবুজাভ, উজ্জ্বল এবং পানিতে দ্রবণীয় রঞ্জক উৎপন্ন করে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

ডিমের ভেতরের গঠন ও বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণার কাজে “ক্যান্ডলিং” নামক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে ডিমের পেছনের দিকে উজ্জ্বল আলো ফেলা হয় যাতে খোলসের ভেতর দিয়েও ডিমের ভেতরের সব কিছু দেখা যায়। এখানে আলোর উৎস হিসেবে মোমবাতি ব্যবহার করা হয়।

ডিম শিল্পে ডিমের মান নির্ণয়ের জন্য এই কৌশল ব্যবহার করা হয়। ম্যাস ক্যান্ডলিং বা ইলেকট্রনিক স্পটারস বেশীরভাগ রক্তের দাগ শনাক্ত করতে পারে। প্যাকেটজাত করার পূর্বেই এই ধরণের ডিমগুলো আলাদা করা হয় এবং ইউএসডিএ এগুলোকে বি গ্রেডে রাখে। কিন্তু এভাবে সবকিছু নির্ণয় করা অসম্ভব।

জানা গিয়েছে, ডিম্বনালী দিয়ে ডিম যাওয়ার সময় অনেক সময়ই তাতে মাংসের টুকরো বা রক্ত মিশে যায়। এতে শরীরে ক্ষতি করার মতো কিছু থাকে না।

সাধারণত ১ শতাংশ ডিমের কুসুমে এমন রক্তের দাগ দেখা যায়। ডিম বাজারে আসার আগে সেটি ক্যান্ডলিং পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। জোরালো আলো দিয়ে কুসুমের ভিতরটি দেখা হয়, সেখানেই রক্তের দাগযুক্ত ডিম বাতিল হয়ে যায়। ফলে খুব কম সময়ই এমন ডিম আমাদের হাতে পড়ে।

সাদা খোলের চেয়ে খয়েরি রঙের খোলযুক্ত ডিমে রক্তের দাগযুক্ত কুসুম বেশি পাওয়া যায়। কারণ খয়েরি খোলের রং অনেক সময়ই সেই দাগকে ঢেকে দেয়। ফলে পরীক্ষার সময় সেটি ধরা পড়ে না। বাজারে চলে আসে। তবে অনেক সময় ডিমের সাদা অংশেও রক্তের দাগ দেখা যায়। এতেও শরীরে কোনও ক্ষতি হয় না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

ডিমের মধ্যে ব্লাড স্পট বা অন্যকোন অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের জন্য কোন খাবার তৈরির সময় এর সাথে ডিম যোগ করার আগে একটি আলাদা পাত্রে একটি একটি করে ডিম ভাঙ্গা উচিৎ।

এতে আপনার পুরো রেসিপিটি নষ্ট হবার ভয় থাকেনা এবং ডিমের খোসা মিশে যাওয়ারও ভয় থাকেনা। ইচ্ছে করলে পরিষ্কার একটি ছুরি দিয়ে ডিমের কুসুমের রক্তের চিহ্নটি সরিয়ে তারপর রান্না করতে পারেন। এটিসহ রান্না করলেও কোন সমস্যা নেই।