সৃজনশীল লেখক মিজান মালিকের মন খারাপের পোস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৭:৩৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১
  • / ১৮২ Time View

মায়াময় জীবনের অনুচ্চারিত শব্দ গেঁথেছেন অনুচ্চারিত কবিতার বন্ধনে,একজন কবির কবিতার মায়াজাল এতটাই আপন, হৃদয়ঘেঁষা, গুল্মলতার মতো, এতটাই কাছে টানে- মিজান মালিকের কবিতা না পড়লে হয়তো অজানা থেকে যেতো। কবি মিজান মালিক একাধারে একজন ডাকসাইটে সাংবাদিক, বহু আলোচিত অনেকগুলো গানের রচয়িতা, নাট্যকার, সৃজনশীল লেখক ও সংগঠক।

তার হাতে কবিতা ওঠে, তিনি কবিতাকে লালন করেন কিংবা পাঠকের সামনে তুলে ধরেন সহজ করে- প্রথমে একটা ধাক্কা খেতে পারেন। কারণ আমরা জানি, কবিতা মানে দুর্বোধ্য কোনো বিষয়। কবিতা মানে জটিল বিষয়ের সমীকরণ। আবছা বুঝবেন, আবছা অন্ধকার। প্রথাগত কবিতার চরিত্র অনেকটা এরকমই।

কিন্তু ব্যতিক্রম তৈরি করেছেন মিজান মালিক। তিনি কবিতাকে একটি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। যা পাঠকের মনে অন্য এক ভালোলাগার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ‘এতো এতো পার্কের নাম শুনি, একটা অক্সিজেন পার্ক থাকলে কী হয়? আমার তো মনে হয় একটা অক্সিজেন পার্ক থাকা দরকার..’।

একজন পাঠক কিভাবে তার কবিতা দেখছেন, সেদিকে নজর দিলে দেখতে পাই আক্তার হোসেনের একটি মন্তব্য। তিনি মিজান মালিকের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের অক্সিজেন পার্ক কবিতা নিয়ে বলেছেন, ‘চারদিকে মন খারাপের খবর। একদিকে করোনার অবিশ্বাস্য হানা, অন্যদিকে পেশাজীবী মানুষগুলোর জীবন ও জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এমনি সময়ে কবি মিজান মালিক উচ্চারণ করেন, ‘কোলাহল থেমে গেছে প্রিয় এই শহরে/সবাই যেন হারিয়ে গেছে অচিন বহরে।’

যেখানে কবি স্পষ্ট করেই বলেছেন, “এতো এতো পার্কের নাম শুনি/একটা অক্সিজেন পার্ক থাকলে কী হয়!’ আসলেই মন খারাপের এই কঠিন সময়ে আমাদের অক্সিজেন প্রয়োজন। অক্সিজেন শুধু হাসপাতালে নয়, অক্সিজেন প্রয়োজন আমাদের মেধা, মননে, চিন্তায়, স্বপ্নে ও বাস্তবতায়।”

আক্তার হোসেন একজন সাংবাদিক। কাজ করেন আরটিভিতে। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি।

মিজান মালিকের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন কবি হাসান হাফিজ। তিনি বলেন, ‘মন খারাপের পোস্টার’ নামটার মাঝে এক ধরনের ব্যঞ্জনা আছে। এমনকি আছে এক ধরনের টান। কবি মিজান মালিকের কবিতায় তেমন স্বকীয়তা আছে, তেমনি নামেও। তিনটি শব্দের জালে তিনি বেঁধে দিয়েছেন অনুচ্চারিত কিংবা না বলা অনেক কথা। তার এক-একটি কবিতা যেনো একেকটি ছোট গল্প। এ বিষয়টি আমায় মুগ্ধ করে। পাঠককে করে বিমোহিত। পাঠককে কাছে টানার এক অদ্ভুত শক্তি আছে কবি মিজান মালিকের।

হাসান হাফিজ আরও, তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘গল্প ছাড়া মলাট’ এর নামটা যেমন ব্যতিক্রম তেমনি কবিতাও। ‘মন খারাপের পোস্টার’ এর কবিতাগুলো বিষণ্ন সময়ের। কোভিড কালের। কালো হরফের লেখায় গ্রন্থিত এই কবিতা বেঁচে থাকবে বহুকাল। করোনা চলে গেলেও এই দুঃসময়ের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে কবিতায়। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যখন কবিতায় হাত দেন, সেখানে ভিন্নতা থাকবে এমনটি পাঠকের প্রত্যাশা। মিজান মালিক এখানে সার্থক। তার কবিতার বাসভবনে একদিকে যেমন আছে প্রেম, মায়া, প্রতীক্ষা, স্বপ্ন; আবার আছে দ্রোহ, বিষন্নতা কিংবা হতাশ হয়ে যাবার কথা। মানুষের মনের ওপর দিয়ে যখন টর্নেডো বয়ে যায়, মিজান মালিক তার আঁচ পান। মানুষের ভেতরে যখন দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধে, তার বুননে তা শিল্প রূপ পায়। কোনো বয়সভেদ নেই। কোনো ওজর-আপত্তি নেই। তিনি সহজ করে তুলে আনেন সময়ের পিঠে পড়ে থাকা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কিংবা ভালোবাসার কথা। ‘মন খারাপের পোস্টার’ পড়ে কারও মন সাময়িক ব্যথাতুর হতে পারে। পরক্ষণেই তিনি খুঁজে পাবেন প্রেমময় লাবণ্য জীবনের গল্প। একটা প্রশান্তির ছোঁয়া পাঠককে আটকে রাখবে।’

একজন কবি তার কবিতা দিয়ে হৃদয়কে আলোড়িত করতে পারেন, দেখিয়েছেন মিজান মালিক। সাংবাদিক-লেখক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সাফ কথা, ‘সৃজনশীল সাংবাদিক মিজান মালিক একজন গতিশীল, স্বপ্নমুখর গীতিকবি।’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মিজান মালিকের কবিতার ভাষা একেবারে সাবলীল, ঝরঝরে। কঠিন কথা সহজে তুলে আনতে তিনি বেশ পারদর্শী। মায়াময় জীবনের অনুচ্চারিত শব্দ তিনি গেঁথে দেন কবিতার বন্ধনে। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের পোস্টার’। এই কাব্যের নামকরণের অন্তরালে লুকিয়ে আছে দুঃসহ সময়ের যন্ত্রনার কথা। বয়ে বেড়ানো কষ্টের কথা। এমনকি স্বপ্নময় জীবনের কথা। তাকে বলতে শুনি শরৎ বেলায় বৃষ্টি হবে/ হয়তো হবে/ বরষা ভুলে শরত/ বসে আছি মন বাড়িয়ে।’

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ যখন ঘিরে ফেলে প্রিয় স্বদেশকে, কবি মিজান মালিকের মনও বিষণ্ন হয়ে ওঠে। ‘কোলাহল থেমে গেছে প্রিয় এই শহরে/ সবাই যেনো হারিয়ে গেছে অচিন বহরে’..। তার কবিতার পঙতিমালায় কেমন যেনো একটা মায়া থাকে। এমনকি তিনি বেদনাতুর হয়ে উঠেন, যখন কষ্ট এসে উপড়ে পড়ে পায়ের কাছে। ‘মন খারাপের পোস্টার’ সময়ের ওপর থেকে মুছে যাক এমন প্রত্যাশার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন কবিতায়।

Please Share This Post in Your Social Media

সৃজনশীল লেখক মিজান মালিকের মন খারাপের পোস্টার

Update Time : ০৭:৩৭:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১

মায়াময় জীবনের অনুচ্চারিত শব্দ গেঁথেছেন অনুচ্চারিত কবিতার বন্ধনে,একজন কবির কবিতার মায়াজাল এতটাই আপন, হৃদয়ঘেঁষা, গুল্মলতার মতো, এতটাই কাছে টানে- মিজান মালিকের কবিতা না পড়লে হয়তো অজানা থেকে যেতো। কবি মিজান মালিক একাধারে একজন ডাকসাইটে সাংবাদিক, বহু আলোচিত অনেকগুলো গানের রচয়িতা, নাট্যকার, সৃজনশীল লেখক ও সংগঠক।

তার হাতে কবিতা ওঠে, তিনি কবিতাকে লালন করেন কিংবা পাঠকের সামনে তুলে ধরেন সহজ করে- প্রথমে একটা ধাক্কা খেতে পারেন। কারণ আমরা জানি, কবিতা মানে দুর্বোধ্য কোনো বিষয়। কবিতা মানে জটিল বিষয়ের সমীকরণ। আবছা বুঝবেন, আবছা অন্ধকার। প্রথাগত কবিতার চরিত্র অনেকটা এরকমই।

কিন্তু ব্যতিক্রম তৈরি করেছেন মিজান মালিক। তিনি কবিতাকে একটি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। যা পাঠকের মনে অন্য এক ভালোলাগার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। ‘এতো এতো পার্কের নাম শুনি, একটা অক্সিজেন পার্ক থাকলে কী হয়? আমার তো মনে হয় একটা অক্সিজেন পার্ক থাকা দরকার..’।

একজন পাঠক কিভাবে তার কবিতা দেখছেন, সেদিকে নজর দিলে দেখতে পাই আক্তার হোসেনের একটি মন্তব্য। তিনি মিজান মালিকের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের অক্সিজেন পার্ক কবিতা নিয়ে বলেছেন, ‘চারদিকে মন খারাপের খবর। একদিকে করোনার অবিশ্বাস্য হানা, অন্যদিকে পেশাজীবী মানুষগুলোর জীবন ও জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এমনি সময়ে কবি মিজান মালিক উচ্চারণ করেন, ‘কোলাহল থেমে গেছে প্রিয় এই শহরে/সবাই যেন হারিয়ে গেছে অচিন বহরে।’

যেখানে কবি স্পষ্ট করেই বলেছেন, “এতো এতো পার্কের নাম শুনি/একটা অক্সিজেন পার্ক থাকলে কী হয়!’ আসলেই মন খারাপের এই কঠিন সময়ে আমাদের অক্সিজেন প্রয়োজন। অক্সিজেন শুধু হাসপাতালে নয়, অক্সিজেন প্রয়োজন আমাদের মেধা, মননে, চিন্তায়, স্বপ্নে ও বাস্তবতায়।”

আক্তার হোসেন একজন সাংবাদিক। কাজ করেন আরটিভিতে। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি।

মিজান মালিকের ‘মন খারাপের পোস্টার’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন কবি হাসান হাফিজ। তিনি বলেন, ‘মন খারাপের পোস্টার’ নামটার মাঝে এক ধরনের ব্যঞ্জনা আছে। এমনকি আছে এক ধরনের টান। কবি মিজান মালিকের কবিতায় তেমন স্বকীয়তা আছে, তেমনি নামেও। তিনটি শব্দের জালে তিনি বেঁধে দিয়েছেন অনুচ্চারিত কিংবা না বলা অনেক কথা। তার এক-একটি কবিতা যেনো একেকটি ছোট গল্প। এ বিষয়টি আমায় মুগ্ধ করে। পাঠককে করে বিমোহিত। পাঠককে কাছে টানার এক অদ্ভুত শক্তি আছে কবি মিজান মালিকের।

হাসান হাফিজ আরও, তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘গল্প ছাড়া মলাট’ এর নামটা যেমন ব্যতিক্রম তেমনি কবিতাও। ‘মন খারাপের পোস্টার’ এর কবিতাগুলো বিষণ্ন সময়ের। কোভিড কালের। কালো হরফের লেখায় গ্রন্থিত এই কবিতা বেঁচে থাকবে বহুকাল। করোনা চলে গেলেও এই দুঃসময়ের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে কবিতায়। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যখন কবিতায় হাত দেন, সেখানে ভিন্নতা থাকবে এমনটি পাঠকের প্রত্যাশা। মিজান মালিক এখানে সার্থক। তার কবিতার বাসভবনে একদিকে যেমন আছে প্রেম, মায়া, প্রতীক্ষা, স্বপ্ন; আবার আছে দ্রোহ, বিষন্নতা কিংবা হতাশ হয়ে যাবার কথা। মানুষের মনের ওপর দিয়ে যখন টর্নেডো বয়ে যায়, মিজান মালিক তার আঁচ পান। মানুষের ভেতরে যখন দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধে, তার বুননে তা শিল্প রূপ পায়। কোনো বয়সভেদ নেই। কোনো ওজর-আপত্তি নেই। তিনি সহজ করে তুলে আনেন সময়ের পিঠে পড়ে থাকা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কিংবা ভালোবাসার কথা। ‘মন খারাপের পোস্টার’ পড়ে কারও মন সাময়িক ব্যথাতুর হতে পারে। পরক্ষণেই তিনি খুঁজে পাবেন প্রেমময় লাবণ্য জীবনের গল্প। একটা প্রশান্তির ছোঁয়া পাঠককে আটকে রাখবে।’

একজন কবি তার কবিতা দিয়ে হৃদয়কে আলোড়িত করতে পারেন, দেখিয়েছেন মিজান মালিক। সাংবাদিক-লেখক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সাফ কথা, ‘সৃজনশীল সাংবাদিক মিজান মালিক একজন গতিশীল, স্বপ্নমুখর গীতিকবি।’

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মিজান মালিকের কবিতার ভাষা একেবারে সাবলীল, ঝরঝরে। কঠিন কথা সহজে তুলে আনতে তিনি বেশ পারদর্শী। মায়াময় জীবনের অনুচ্চারিত শব্দ তিনি গেঁথে দেন কবিতার বন্ধনে। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন খারাপের পোস্টার’। এই কাব্যের নামকরণের অন্তরালে লুকিয়ে আছে দুঃসহ সময়ের যন্ত্রনার কথা। বয়ে বেড়ানো কষ্টের কথা। এমনকি স্বপ্নময় জীবনের কথা। তাকে বলতে শুনি শরৎ বেলায় বৃষ্টি হবে/ হয়তো হবে/ বরষা ভুলে শরত/ বসে আছি মন বাড়িয়ে।’

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ যখন ঘিরে ফেলে প্রিয় স্বদেশকে, কবি মিজান মালিকের মনও বিষণ্ন হয়ে ওঠে। ‘কোলাহল থেমে গেছে প্রিয় এই শহরে/ সবাই যেনো হারিয়ে গেছে অচিন বহরে’..। তার কবিতার পঙতিমালায় কেমন যেনো একটা মায়া থাকে। এমনকি তিনি বেদনাতুর হয়ে উঠেন, যখন কষ্ট এসে উপড়ে পড়ে পায়ের কাছে। ‘মন খারাপের পোস্টার’ সময়ের ওপর থেকে মুছে যাক এমন প্রত্যাশার কথাও তিনি তুলে ধরেছেন কবিতায়।