সাত দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৮:৩৪:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১
  • / ১২৯ Time View

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:

দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা ব্যাপী রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে সাত দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। শিক্ষকেরা এতে সংহতি জানান। কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবরোধ-বিক্ষোভের কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর ও টিএসসি অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷

এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো: হামলার শিকার মন্দিরগুলোর শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার পরিবারগুলোকে স্থায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জিডিপির ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা।

No description available.

বেলা সোয়া দুইটার দিকে জগন্নাথ হলের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়জিৎ দত্তের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবিগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে এবং এর মধ্যে দেশের কোথাও এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য আপাতত ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে আমরা আজকের কর্মসূচি এখানেই শেষ করছি।’

এর আগে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হওয়ার পর সেখানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল।
কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা স্লোগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। স্লোগানগুলো হলো ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না’’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘’আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’,‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি৷

এদিকে, কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপ ও ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দির এলাকা পরিদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদল। তাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। আজ সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় শিক্ষক সমিতির ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রথমে নানুয়া দিঘিরপাড় এলাকা পরিদর্শন করে। এরপর তাঁরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনায় আঘাত করতে চান, তাহলে আমরা কখনো তা সহ্য করবো না। আমরা সবাই এ রাষ্ট্রে স্বাধীন। আমরা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়েই বাস করতে চাই।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা হিন্দু নয়, মুসলিমও নয়। তারা মানবতাহীন। শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ লাফিফা জামাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’ রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংঘাত সৃষ্টির জন্য কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে অস্থায়ী পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়। ১৩ অক্টোবর সেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সংঘাত, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

সাত দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের

Update Time : ০৮:৩৪:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:

দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা ব্যাপী রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কর্মসূচি পালন করে তারা। পরে সাত দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগ মোড়ের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। শিক্ষকেরা এতে সংহতি জানান। কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অবরোধ-বিক্ষোভের কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর ও টিএসসি অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়৷

এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো: হামলার শিকার মন্দিরগুলোর শিগগিরই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার পরিবারগুলোকে স্থায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাসাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলার দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন গঠন, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আধুনিকায়ন করে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং জাতীয় বাজেটে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জিডিপির ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা।

No description available.

বেলা সোয়া দুইটার দিকে জগন্নাথ হলের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়জিৎ দত্তের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবিগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে এবং এর মধ্যে দেশের কোথাও এ ধরনের হামলা-ভাঙচুর বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে আমরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য আপাতত ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে আমরা আজকের কর্মসূচি এখানেই শেষ করছি।’

এর আগে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ শুরু হওয়ার পর সেখানে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহা, সাবেক প্রাধ্যক্ষ অসীম কুমার সরকার ও আইন বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল।
কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা স্লোগান দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই। স্লোগানগুলো হলো ‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘৪৬-এর চেতনায়, বাংলাদেশ চলবে না’’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘’আমার ভাইয়ের খুনি কে, ফাঁসি দাও দিতে হবে’,‘জঙ্গিবাদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ প্রভৃতি৷

এদিকে, কুমিল্লার নানুয়া দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপ ও ঠাকুরপাড়া রক্ষাময়ী কালীমন্দির এলাকা পরিদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদল। তাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। আজ সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় শিক্ষক সমিতির ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রথমে নানুয়া দিঘিরপাড় এলাকা পরিদর্শন করে। এরপর তাঁরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনায় আঘাত করতে চান, তাহলে আমরা কখনো তা সহ্য করবো না। আমরা সবাই এ রাষ্ট্রে স্বাধীন। আমরা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়েই বাস করতে চাই।

ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা হিন্দু নয়, মুসলিমও নয়। তারা মানবতাহীন। শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ লাফিফা জামাল বলেন, ‘এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’ রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংঘাত সৃষ্টির জন্য কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের নানুয়া দিঘিরপাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে অস্থায়ী পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়। ১৩ অক্টোবর সেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে সংঘাত, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।