রিজার্ভ চুরি মামলা বাতিল আবেদন খারিজ, মামলা পরিচালনায় বাধা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৮:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৪০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায়ে এমন মন্তব্য এসেছে।

গত ১৩ জানুয়ারি এই রায় দেওয়া হয়। এর ফলে রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা রইল না।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয় আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হতে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিবাদীদের আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ফের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। এরপর নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিএফআইইউ আরও জানায়, সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আবেদন খারিজ করে দেন। এই রায়ের মাধ্যমে বিবাদীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা থাকল না। রায়ে, স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ। খোয়া যাওয়া বাকি অর্থের ফেরত প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

রিজার্ভ চুরি মামলা বাতিল আবেদন খারিজ, মামলা পরিচালনায় বাধা নেই

Update Time : ০৮:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায়ে এমন মন্তব্য এসেছে।

গত ১৩ জানুয়ারি এই রায় দেওয়া হয়। এর ফলে রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা রইল না।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয় আরসিবিসির নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হতে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

বিএফআইইউ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে বিবেচনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিবাদীদের আবেদন খারিজ করে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।

সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ফের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। এরপর নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিএফআইইউ আরও জানায়, সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আবেদন খারিজ করে দেন। এই রায়ের মাধ্যমে বিবাদীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা থাকল না। রায়ে, স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে রিজার্ভ চুরির সবচেয়ে বড় এই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে। সেই রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের মাকাতি শহরের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ উত্তোলন করেন হ্যাকাররা। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতায় মাত্র দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ। খোয়া যাওয়া বাকি অর্থের ফেরত প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে।