ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৫:৪৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১৭ Time View

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে চলছে ব্যাপক অস্থিরতা। ব্যাংক একীভূত হলে আমানতের টাকা নিরাপদে থাকবে কিনা তা নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নিরাপদ আমানতের’ বুলি ছাড়লেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আমানতকারীদের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুটি ব্যাংক একীভূত হলেও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে।

তবে আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য প্রকাশিত দুর্বল ব্যাংকের পাশাপাশি ভালো ব্যাংকগুলো থেকেও অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খারাপ ও ভালো উভয় ব্যাংক থেকেই আমানত তুলে নিতে পারেন আমানতকারীরা। আমানতকারীদের টাকা যেন খোয়া না যায়, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গ্রাহক নিয়ামুল হক। তিনি আজ মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন খোঁজ নিতে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করে পেনশনের টাকা রেখেছিলাম বেসিক ব্যাংকে। তবে এখন শুনছি এ ব্যাংকটি আর থাকবে না। অন্যান্য ব্যাংকেরও নাকি অবস্থা বেশি ভালো না। তাই টাকা তুলে কোথায় রাখবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আমানতকারী, ব্যাংকার, পরিচালক ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর প্রকাশের পর থেকে ব্যাংক দুটির বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন বেড়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর ফলে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে। এখনো সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকারি খাতের এ ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৬৪ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকরাও তাদের আমানত তুলে নিতে ভিড় করছেন। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে লোকসান হয়েছিল ৩৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরামর্শে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Please Share This Post in Your Social Media

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক

Update Time : ০৫:৪৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে চলছে ব্যাপক অস্থিরতা। ব্যাংক একীভূত হলে আমানতের টাকা নিরাপদে থাকবে কিনা তা নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নিরাপদ আমানতের’ বুলি ছাড়লেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আমানতকারীদের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুটি ব্যাংক একীভূত হলেও ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে।

তবে আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য প্রকাশিত দুর্বল ব্যাংকের পাশাপাশি ভালো ব্যাংকগুলো থেকেও অনেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খারাপ ও ভালো উভয় ব্যাংক থেকেই আমানত তুলে নিতে পারেন আমানতকারীরা। আমানতকারীদের টাকা যেন খোয়া না যায়, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গ্রাহক নিয়ামুল হক। তিনি আজ মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন খোঁজ নিতে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি করে পেনশনের টাকা রেখেছিলাম বেসিক ব্যাংকে। তবে এখন শুনছি এ ব্যাংকটি আর থাকবে না। অন্যান্য ব্যাংকেরও নাকি অবস্থা বেশি ভালো না। তাই টাকা তুলে কোথায় রাখবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আমানতকারী, ব্যাংকার, পরিচালক ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর প্রকাশের পর থেকে ব্যাংক দুটির বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের টাকা উত্তোলন বেড়েছে।

এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এর ফলে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে। এখনো সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকারি খাতের এ ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৬৪ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্রাহকরাও তাদের আমানত তুলে নিতে ভিড় করছেন। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ২০২২ সালে লোকসান হয়েছিল ৩৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরামর্শে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।