বৈকুন্ঠপুর চা বাগানে ২৫ দফা দাবিতে শ্রমিকদের মতবিনিময় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:৪০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ১৭৩ Time View

লিটন মুন্ডা, চুনারুঘাট:

হবিগঞ্জ জেলার বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় স্থানীয় নাট্যমন্দিরে ‘বৈকুন্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটি’ র উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের মালিক কর্তৃক দিলীপ কেউট নামক একজন শ্রমিকের বাড়ি উচ্ছেদের রেশ ধরে বন্ধ হওয়া বাগানের কার্যক্রম পুনরায় চালু করাসহ ২৫ দফা দাবি তুলেন তারা৷

সভায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবারের মধ্যে যাবতীয় সংকট নিরসন না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানান আয়োজকেরা।

স্থায়ী চা শ্রমিককে বাগান মালিকপক্ষ আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি স্থায়ী চা শ্রমিক দিলীপ কেউটকে।

কালক্ষেপণ ও বাসস্থান সংকটের তোপে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য ম্যানেজার এবং পঞ্চায়েত কমিটির থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি।

কিন্তু বাড়ি তোলার ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ বাড়ি উচ্ছেদের নোটিশ দেয়।

স্থানীয় চা শ্রমিকরা দিলীপের পক্ষে কথা বললে ১২ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশ কিছু শ্রমিককে বহিস্কারের হুমকি দেওয়া হয়৷ এর পাশাপাশি গত এক মাস ধরে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের কার্যক্রম এবং শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷

আন্দোলন কমিটির সদস্য মাইকেল বাসকের সঞ্চালনায় উক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, লস্করপুর ভ্যালীর সভাপতি রবীন্দ্র গৌড়, সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক, বৈকুন্ঠপুর চা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনিব কর্মকার, বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক খাইরুন আক্তার, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মীরা কৈরী এবং রেমা-নোয়াপাড়া-চাঁদপুর-বেগমখানসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক প্রতিনিধিবৃন্দ।

সভার সমাপনী বক্তব্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবারের মধ্যে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না আসলে একযোগে দেশের সকল চা বাগান বন্ধের হুশিয়ারি দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল।

ঘটনার সমাধানের জন্য পঞ্চায়েত কমিটি ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতিতে একটি আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা ২৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। যেখানে দিলীপসহ আবাসনবঞ্চিত সকল চা শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে সংকট নিরসনের কথা উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ,উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা,মজুরি বৃদ্ধি প্রভৃতির দাবি উঠে আসে। ২০১৯ সালে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক ২৫ দফা ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চৌহান বলেন, “ইশতেহারের ২৩ নং অনুচ্ছেদে স্থানীয় আবাসন সংকট নিরসনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল।আজ তিন বছর পরেও ২৫ দফার এক দফা সমাধানও চা শ্রমিকেরা চোখে দেখেনি”।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বৈকুন্ঠপুর চা বাগানে ২৫ দফা দাবিতে শ্রমিকদের মতবিনিময় সভা

Update Time : ১১:৪০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

লিটন মুন্ডা, চুনারুঘাট:

হবিগঞ্জ জেলার বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় স্থানীয় নাট্যমন্দিরে ‘বৈকুন্ঠপুর চা বাগান আন্দোলন কমিটি’ র উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের মালিক কর্তৃক দিলীপ কেউট নামক একজন শ্রমিকের বাড়ি উচ্ছেদের রেশ ধরে বন্ধ হওয়া বাগানের কার্যক্রম পুনরায় চালু করাসহ ২৫ দফা দাবি তুলেন তারা৷

সভায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবারের মধ্যে যাবতীয় সংকট নিরসন না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানান আয়োজকেরা।

স্থায়ী চা শ্রমিককে বাগান মালিকপক্ষ আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও কোন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি স্থায়ী চা শ্রমিক দিলীপ কেউটকে।

কালক্ষেপণ ও বাসস্থান সংকটের তোপে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে বাড়ি বানানোর জন্য ম্যানেজার এবং পঞ্চায়েত কমিটির থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি।

কিন্তু বাড়ি তোলার ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ বাড়ি উচ্ছেদের নোটিশ দেয়।

স্থানীয় চা শ্রমিকরা দিলীপের পক্ষে কথা বললে ১২ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশ কিছু শ্রমিককে বহিস্কারের হুমকি দেওয়া হয়৷ এর পাশাপাশি গত এক মাস ধরে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের কার্যক্রম এবং শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷

আন্দোলন কমিটির সদস্য মাইকেল বাসকের সঞ্চালনায় উক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, লস্করপুর ভ্যালীর সভাপতি রবীন্দ্র গৌড়, সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক, বৈকুন্ঠপুর চা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনিব কর্মকার, বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক খাইরুন আক্তার, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মীরা কৈরী এবং রেমা-নোয়াপাড়া-চাঁদপুর-বেগমখানসহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক প্রতিনিধিবৃন্দ।

সভার সমাপনী বক্তব্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবারের মধ্যে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন স্পষ্ট সিদ্ধান্ত না আসলে একযোগে দেশের সকল চা বাগান বন্ধের হুশিয়ারি দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল।

ঘটনার সমাধানের জন্য পঞ্চায়েত কমিটি ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতিতে একটি আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা ২৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। যেখানে দিলীপসহ আবাসনবঞ্চিত সকল চা শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে সংকট নিরসনের কথা উল্লেখ করা হয়।

এছাড়াও অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ,উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা,মজুরি বৃদ্ধি প্রভৃতির দাবি উঠে আসে। ২০১৯ সালে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক ২৫ দফা ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চৌহান বলেন, “ইশতেহারের ২৩ নং অনুচ্ছেদে স্থানীয় আবাসন সংকট নিরসনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল।আজ তিন বছর পরেও ২৫ দফার এক দফা সমাধানও চা শ্রমিকেরা চোখে দেখেনি”।