বন্দুক নীতিতে বিভক্তি, অনিরাপদ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:২৭:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
  • / ১৪২ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

শিথিল বন্দুক নীতির কারণেই গুলি চালিয়ে হত্যা ঘটনা একের পর একে ঘটেই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে।সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বন্দুক আইন সংশোধনের চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না রক্ষণশীল গোষ্ঠীর কারণে। এই মতদ্বৈততার কারণে গেল এক দশক ধরেই অনিরাপদ দেশটির শিক্ষাঙ্গণ।

বিষয়টা এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের হামলার ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে পারবে না। তবে এটা ঠিক, এর জন্য যে জাতীয় সংহতি এবং ইচ্ছা প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে।

মঙ্গলবার টেক্সাসের হামলাই প্রমাণ করে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারের এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর নেই।

সিএনএনের হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধির এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বন্দুক ব্যবহার নীতি নিয়ে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাই প্রধানত এ ধরনের হামলার কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি অস্বাভাবিক এবং অসুস্থ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয় গণহত্যা। তবে সব শেষ টেক্সাসের ঘটনাটি প্রচণ্ড আঘাত করেছে মানুষের মনে। এই ঘটনা লাখ লাখ অভিভাবকের মনে ভয়ের অনুভূতি জাগিয়েছে। পরিস্থিতি এমন, এখন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।

শিশু শিক্ষার্থীদের মনেও ঘটনাটি গভীর দাগ কেটেছে। টেক্সাসের হামলার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর মনে এটি চিরস্থায়ী ভয় সৃষ্টি করেছে।

হামলাকারী ওই কিশোর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আসার আগ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ওই স্কুলে ছিল এবং একে একে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী এবং দুই শিক্ষককে হত্যা করেছিল।

ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ছিল যে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি পর্যন্ত শোক ও সমবেদনা জানাতে বাধ্য হয়েছেন। যখন জেলেনস্কির নিজ দেশেই চলছে যুদ্ধাপরাধ এবং নৃশংসতা।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নীতির সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও বিরোধী দল রিপাবলিকান এখনও অস্বীকার করে চলেছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে লাগামহীনতাই এই ধরনের হামলার কারণ।

হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোর আইনীভাবে একটি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল কিনেছিল, যেখানে সে এক ক্যান বিয়ার কেনার জন্যও আইনীভাবে যোগ্য নয়। এই বিষয়টিই একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পঙ্গুত্বের বহিঃপ্রকাশ।

২০১৭ সালে লাস ভেগাসে সঙ্গীত উৎসবে গুলি, ফ্লোরিডায় ২০১৮ সালে হাই স্কুলে গণহত্যার মত ঘটনা দিয়ে রক্তে ভেজা এক দশক পেরিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বহু ক্ষোভের জন্ম হয়েছে এবং যা পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের রাজনীতির জড়তাই কাটেনি।

রক্ষণশীল শক্তি এবং সিনেটে বাধা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের একাধিক চেষ্টা আটকে দিয়েছে।
তবে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট যদি বন্দুক আইন আরও শিথিল করে, তখন ধরেই নেওয়া যায় বিষয়টি ঠিক নয় বরং উল্টোদিকেই গতি পাচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

বন্দুক নীতিতে বিভক্তি, অনিরাপদ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঙ্গণ

Update Time : ০২:২৭:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

শিথিল বন্দুক নীতির কারণেই গুলি চালিয়ে হত্যা ঘটনা একের পর একে ঘটেই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে।সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বন্দুক আইন সংশোধনের চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না রক্ষণশীল গোষ্ঠীর কারণে। এই মতদ্বৈততার কারণে গেল এক দশক ধরেই অনিরাপদ দেশটির শিক্ষাঙ্গণ।

বিষয়টা এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের হামলার ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে পারবে না। তবে এটা ঠিক, এর জন্য যে জাতীয় সংহতি এবং ইচ্ছা প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে।

মঙ্গলবার টেক্সাসের হামলাই প্রমাণ করে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারের এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর নেই।

সিএনএনের হোয়াইট হাউজ প্রতিনিধির এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বন্দুক ব্যবহার নীতি নিয়ে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাই প্রধানত এ ধরনের হামলার কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি অস্বাভাবিক এবং অসুস্থ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয় গণহত্যা। তবে সব শেষ টেক্সাসের ঘটনাটি প্রচণ্ড আঘাত করেছে মানুষের মনে। এই ঘটনা লাখ লাখ অভিভাবকের মনে ভয়ের অনুভূতি জাগিয়েছে। পরিস্থিতি এমন, এখন সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।

শিশু শিক্ষার্থীদের মনেও ঘটনাটি গভীর দাগ কেটেছে। টেক্সাসের হামলার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর মনে এটি চিরস্থায়ী ভয় সৃষ্টি করেছে।

হামলাকারী ওই কিশোর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আসার আগ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা ওই স্কুলে ছিল এবং একে একে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী এবং দুই শিক্ষককে হত্যা করেছিল।

ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক ছিল যে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি পর্যন্ত শোক ও সমবেদনা জানাতে বাধ্য হয়েছেন। যখন জেলেনস্কির নিজ দেশেই চলছে যুদ্ধাপরাধ এবং নৃশংসতা।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নীতির সুরক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও বিরোধী দল রিপাবলিকান এখনও অস্বীকার করে চলেছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে লাগামহীনতাই এই ধরনের হামলার কারণ।

হামলাকারী ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোর আইনীভাবে একটি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল কিনেছিল, যেখানে সে এক ক্যান বিয়ার কেনার জন্যও আইনীভাবে যোগ্য নয়। এই বিষয়টিই একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পঙ্গুত্বের বহিঃপ্রকাশ।

২০১৭ সালে লাস ভেগাসে সঙ্গীত উৎসবে গুলি, ফ্লোরিডায় ২০১৮ সালে হাই স্কুলে গণহত্যার মত ঘটনা দিয়ে রক্তে ভেজা এক দশক পেরিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বহু ক্ষোভের জন্ম হয়েছে এবং যা পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের রাজনীতির জড়তাই কাটেনি।

রক্ষণশীল শক্তি এবং সিনেটে বাধা আগ্নেয়াস্ত্র আইন সংশোধনের একাধিক চেষ্টা আটকে দিয়েছে।
তবে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্ট যদি বন্দুক আইন আরও শিথিল করে, তখন ধরেই নেওয়া যায় বিষয়টি ঠিক নয় বরং উল্টোদিকেই গতি পাচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন