নওগাঁর রাণীনগরে প্রকাশ্যে অসহায় দম্পতির বসতবাড়ি ভেঙে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:২২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২৩ Time View

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদের বিরুদ্ধে এক অসহায় দম্পতির বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাটের ও ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা বলে দাবি করে প্রকাশ্যে দিবালকে তান্ডব চালিয়ে ওই দম্পতির বসতবাড়ির রান্নাঘর ও টিনের প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে চেয়ারম্যান জাহিদ তার বাহিনী। সম্প্রতি উপজেলার পারইল বাজারে এ ঘটনাটি ঘটেছে। চেয়ারম্যানের এমন কর্মকান্ডে এলাকায় বইছে সমালোচনা ঝড়।

ভূক্তভোগী ওই দম্পতি উপজেলার পারইল গ্রামের পরিমল-লাবনী। তাদের বসতবাড়ির জমিটি এখনও সরকারি গেজেটভূক্ত হয়নি। লোক দেখানো ১৫ বছর ধরে চলছে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। তাদের দেওয়া হয়নি জমির কোনো মূল্যও। অথচ সরকারি জায়গার অজুহাতে এনে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে ও পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং গ্রামপুলিশ নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে দম্পতির নির্মাণকৃত বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেন।

বসতবাড়ি ভাঙার একটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে দেখা যায়, পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে বসতবাড়ির রান্নাঘর, বেড়ার টিন, লাগানো গাছ ও বাঁশ তুলে ফেলেন। ঘটনাটি গত ৯ এপ্রিলের। এছাড়া ভিডিও করার কারণে লাবনীর ভাই মিঠুন প্রামানিককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের আশায় ভূক্তভোগী লাবণী রাণীনগরের ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। আর স্থায়ী সমাধানের জন্য গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওই দম্পতির।

ভুক্তভোগী লাবনী বলেন, আমার স্বামী পরিমল অত্যন্ত ভয়ে থাকে। আমি নারী হয়ে চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের সাথে অনেক যোগযোগ করেছি। কিন্তু তারা কোনো সহযোগীতা করেনি। শেষ পর্যন্ত ইউএনও অফিস এমনকি ডিসি অফিসে গিয়েছি প্রতিকারের আশায়। ডিসি স্যার সহযোগীতা করেছেন। ডিসি স্যার বরাবর আমি গত ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আবেদন করলে স্যারের নির্দেশে আমাকে আমার ৮ শতক সম্পত্তি মাপজোক করে বের করে দেন স্থানীয় তহশিলদার মোস্তাফিজুর। এরপর আমি প্রায় এক বছর আগে সেখানে দু’টি থাকার ঘর, একটি রান্না ঘর এবং ছোট একটি বাগান করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস শুরু করি। জমির খাজনা খারিজের জন্য গেলে তালবাহা শুরু করেন তহশিলদার। তাই বাধ্য হয়ে গত বছরের ২৬ জুলাই ইউএনও বরাবর সম্পত্তি খারিজের জন্য আবেদন করি। তারপরও ওরা কোনো কর্ণপাত করেনি। এরপর হঠাৎ করে চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে গ্রামপুলিশ ও তার গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে আমার বসতবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। প্রকাশ্যে দিনের বেলা বসতবাড়ির রান্নাঘর, বেড়ার টিন ও আমার লাগানো গাছ উপরে ফেলে দেয় তারা। পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই। তারা কেন অন্যায়ভাবে আমাদের দখলীয় বসবাড়িতে হামলা করেছে।

লাবনীর ভাই মিঠুন প্রামানিক জানান, আমি বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি চেয়ারম্যান জাহিদ বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙছে। এ সময় আমি ভিডিও করলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

জানতে চাইলে পারইল-বড়গাছা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিমলের ভাই বিমল এক অংশ ইউনিয়ন পরিষদের কাছে বিক্রি করেছে। আর পরিমলের অংশ আছে। সেটা হাটের মধ্যে পড়েছে। এখন হাটের সাথে অধিগ্রহণ হবে। রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে। অধিগ্রহণের জন্য যে ক্ষতিপূরণ সেটা দিলেই হয়ে যাবে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, বসতবাড়ি ভাঙার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, ওই জায়গা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের দলিলকৃত সম্পত্তি। ওই জায়গায় দম্পতি রাতের আধাঁরে বেড়া দিয়ে ও গাছ লাগিয়ে দখল করেছে। চেয়ারম্যানের দাবি, পরিষদের জাগয়া হওয়ার কারণে সেখান থেকে টিনের বেড়া ও গাছ তুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

নওগাঁর রাণীনগরে প্রকাশ্যে অসহায় দম্পতির বসতবাড়ি ভেঙে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

Update Time : ০৬:২২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদের বিরুদ্ধে এক অসহায় দম্পতির বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাটের ও ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা বলে দাবি করে প্রকাশ্যে দিবালকে তান্ডব চালিয়ে ওই দম্পতির বসতবাড়ির রান্নাঘর ও টিনের প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে চেয়ারম্যান জাহিদ তার বাহিনী। সম্প্রতি উপজেলার পারইল বাজারে এ ঘটনাটি ঘটেছে। চেয়ারম্যানের এমন কর্মকান্ডে এলাকায় বইছে সমালোচনা ঝড়।

ভূক্তভোগী ওই দম্পতি উপজেলার পারইল গ্রামের পরিমল-লাবনী। তাদের বসতবাড়ির জমিটি এখনও সরকারি গেজেটভূক্ত হয়নি। লোক দেখানো ১৫ বছর ধরে চলছে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। তাদের দেওয়া হয়নি জমির কোনো মূল্যও। অথচ সরকারি জায়গার অজুহাতে এনে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে ও পরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং গ্রামপুলিশ নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে দম্পতির নির্মাণকৃত বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেন।

বসতবাড়ি ভাঙার একটি ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে দেখা যায়, পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে বসতবাড়ির রান্নাঘর, বেড়ার টিন, লাগানো গাছ ও বাঁশ তুলে ফেলেন। ঘটনাটি গত ৯ এপ্রিলের। এছাড়া ভিডিও করার কারণে লাবনীর ভাই মিঠুন প্রামানিককে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচারের আশায় ভূক্তভোগী লাবণী রাণীনগরের ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। আর স্থায়ী সমাধানের জন্য গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওই দম্পতির।

ভুক্তভোগী লাবনী বলেন, আমার স্বামী পরিমল অত্যন্ত ভয়ে থাকে। আমি নারী হয়ে চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের সাথে অনেক যোগযোগ করেছি। কিন্তু তারা কোনো সহযোগীতা করেনি। শেষ পর্যন্ত ইউএনও অফিস এমনকি ডিসি অফিসে গিয়েছি প্রতিকারের আশায়। ডিসি স্যার সহযোগীতা করেছেন। ডিসি স্যার বরাবর আমি গত ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য আবেদন করলে স্যারের নির্দেশে আমাকে আমার ৮ শতক সম্পত্তি মাপজোক করে বের করে দেন স্থানীয় তহশিলদার মোস্তাফিজুর। এরপর আমি প্রায় এক বছর আগে সেখানে দু’টি থাকার ঘর, একটি রান্না ঘর এবং ছোট একটি বাগান করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস শুরু করি। জমির খাজনা খারিজের জন্য গেলে তালবাহা শুরু করেন তহশিলদার। তাই বাধ্য হয়ে গত বছরের ২৬ জুলাই ইউএনও বরাবর সম্পত্তি খারিজের জন্য আবেদন করি। তারপরও ওরা কোনো কর্ণপাত করেনি। এরপর হঠাৎ করে চেয়ারম্যান জাহিদ নিজে গ্রামপুলিশ ও তার গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে আমার বসতবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। প্রকাশ্যে দিনের বেলা বসতবাড়ির রান্নাঘর, বেড়ার টিন ও আমার লাগানো গাছ উপরে ফেলে দেয় তারা। পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই। তারা কেন অন্যায়ভাবে আমাদের দখলীয় বসবাড়িতে হামলা করেছে।

লাবনীর ভাই মিঠুন প্রামানিক জানান, আমি বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি চেয়ারম্যান জাহিদ বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙছে। এ সময় আমি ভিডিও করলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

জানতে চাইলে পারইল-বড়গাছা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিমলের ভাই বিমল এক অংশ ইউনিয়ন পরিষদের কাছে বিক্রি করেছে। আর পরিমলের অংশ আছে। সেটা হাটের মধ্যে পড়েছে। এখন হাটের সাথে অধিগ্রহণ হবে। রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে। অধিগ্রহণের জন্য যে ক্ষতিপূরণ সেটা দিলেই হয়ে যাবে। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, বসতবাড়ি ভাঙার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পারইল ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, ওই জায়গা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের দলিলকৃত সম্পত্তি। ওই জায়গায় দম্পতি রাতের আধাঁরে বেড়া দিয়ে ও গাছ লাগিয়ে দখল করেছে। চেয়ারম্যানের দাবি, পরিষদের জাগয়া হওয়ার কারণে সেখান থেকে টিনের বেড়া ও গাছ তুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা।

এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।