ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
  • / ৭৬৯ Time View
মনিরুজ্জামান অপূর্ব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার / মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার / নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি / সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি / ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম / আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’
.
নচিকেতার এই গানের মতোই জীবন এখানকার মানুষের। যে পিতা-মাতা সন্তানের লালন-পালন ও আনন্দময় ভবিষ্যতের জন্য ক্ষয় করেন নিজের জীবন। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব পিতামাতা সে সন্তানের সংসারে হয়ে পড়েন অপাংক্তেয়। সে সন্তান শেষ বয়সে মা-বাবাকে করেন অবহেলা। নিজের সংসারের ঝামেলা ভেবে পরিত্যাগ করেন বৃদ্ধ পিতামাতাকে।এমনি এক নাজুক পরিস্থিতিতে সব হারানো এ সকল বাবা-মায়ের সন্তান হয়ে তাদের আগলে রেখেছেন খতিব আবদুল জাহিদ। গড়ে তুলেছেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র (বপুক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
.
‘মুকুলের বৃদ্ধাশ্রম’ নামে পরিচিত এই বৃদ্ধনিবাস। এ নিয়ে আমাদের এবারের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. মনিরুজ্জামান অপূর্ব।
.
সবুজ শ্যামলের এক শান্তির নীড় গ্রিভেন্সি গ্রুপের পরিচালনায় বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঢুকতেই সারি সারি গাছ স্বাগত জানাবে। গাছগুলো যারা লাগিয়েছেন, তাদের নামফলকও দেওয়া আছে। তারপরই মেডিকেল ক্যাম্প।
.
পুরুষদের থাকার ইউনিট। সামনে এগিয়ে গেলে পুকুর ও অফিস কক্ষ। পাশেই মহিলাদের থাকার ইউনিট ও রান্নাঘর। মহিলাদের ইউনিট থেকে সামনে এগোলে বিশ্রামখানা আর পুকুর। পুকুরে পদ্মফুল এবং নৌকা বাধাঁ আছে। সামনে-পেছনে বিশাল বাগান। প্রায় সব রকমের ফলদ ও ঔষধি গাছ। পুকুরের সামনে মসজিদ, অজুখানা ও লিচুবাগান। মসজিদ থেকে সামনে এগুলেই পড়বে কবরস্থান। পুরো কেন্দ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বসার বেঞ্চ ও নিরাপত্তা বুথ। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এ আশ্রমের ৮০বিঘা জমির অনেকটাই চাষযোগ্য। এখানে ৫টি পুকুরে মাছ চাষ, ধান চাষ ও পুরো কম্পাউন্ডে লিচু, কাঠাল, পেয়ারা, কুল, নারিকেলসহ নানাবিধ ফলবান বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। যার ফল-ফসল মূলত বসবাসকারী অসহায় বৃদ্ধদের মধ্যেই বিতরণ করা হয়ে থাকে।
.
শৈশবের এক স্বপ্ন সবুজ শ্যামল এক গ্রাম। যেখানে মুকুল নামের দুরন্ত এক শিশুর শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ সময় কেটেছে।শৈশবের একটি স্মৃতি আজও তাকে বেদনার্ত করে। তাঁর বয়স যখন ১২-১৩ বছর, তখন এক হৃদয় বিদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। তাঁর বাড়ির পাশের এক বৃদ্ধাকে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে কাঁদতে দেখেন। তার কাছে গিয়ে জানতে চান কান্নার কারণ।
.
বৃদ্ধা জানান, তার সন্তানেরা আর তাকে বাড়িতে রাখতে চায় না। যাদের তিনি কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন তারা এখন আর তাকে রাখতে চায় না। এই ঘটনাটিই তার শিশু মনটিকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, এসব অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করবেন। স্বপ্ন হল সত্যি পড়াশোনা শেষে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঠিকাদারী করে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। ব্যবসায় সফলতা পেয়েই উদ্যোগ নেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত হয়ে অবহেলিত, অসহায়, আশ্রয়হীন প্রবীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’ (বপুক)। ১৯৮৭ সালের গোড়ার দিকে উত্তরার আজমপুরে ২০ কক্ষ বিশিষ্ট ভাড়া বাড়িতে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।
.
১৯৯৪ সালে বয়ষ্ক পুনবাসন কেন্দ্রকে গাজিপুর জেলার হোতাপাড়া, মনিপুরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালের ২১ এপ্রিল, নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী মাদার তেরেসা কেন্দ্রটির সম্প্রসারিত অংশের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ বৎসরে পদার্পন করেছে। কারা থাকেন বপুকে বপুকে জীবনের শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নিঃস্ব উত্তরাধীকার উচ্চ শিক্ষিতা সৈয়দা রানা আলীরাজ, কালিহাতির জমিদারের নায়েবের স্ত্রী আমেনা খানমের মত অভিজাত মহিলা। এখানে আশ্রয় পেয়েছেন সার্টিফিকেটবিহীন আহত নারী মুক্তিযোদ্ধা, সড়ক দুর্ঘটনায় স্মৃতিভ্রষ্ট বিদেশিনী, নিঃস্ব ব্যবসায়ী, প্রতারণার শিকার সাবেক স্বচ্ছল প্রবীণ, যাত্রাশিল্পী, বেসরকারি স্কুল-কলেজের সাবেক শিক্ষক, উচ্চপর্যায়ের সাবেক সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী। প্রতিদিনের জীবনযাপন এখানে আছেন দুই শতাধিক প্রবীণ। এর মধ্যে শতাধিকই নারী। তবে এ সংখ্যা নিয়মিতই কমে বাড়ে।
.
এক কাপড়ে কোনো প্রবীণ যদি এখানে চলে আসেন তাঁকে আর বাকি জীবন নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। তার পোশাক, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় ও নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখানে এলে একটি নিয়মের মধ্যেই থাকতে হয়। খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের দিনযাপন সবকিছুই নিয়মমতো। আত্মপরিচয়হীন শিশুদের পরিচয় দান বপুক পরিত্যক্ত ও অনাকাঙ্খিত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পিতৃ-মাতৃহীন, পরিচয়হীন অবাঞ্চিত শিশু এবং রাস্তাঘাট, ক্লিনিক ও নার্সিং হোম থেকে আত্মপরিচয়হীন শিশুদের এনে পরবর্তীতে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে দত্তক দেয়া হয়। নিঃসন্তান দম্পতিরা কয়েকটি মানবিক শর্তে বপুক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারেন।
.
স্বপ্নের নেই শেষ বপুক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও গিভেন্সী গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল বলেন, আগামী কয়েক বছর পর পুরোদমে বপুক আন্দোলন শুরু করবেন। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের জেলা-উপজেলায় ঘুরে প্রবীনদের নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য এ আন্দোলন গড়ে তুলবেন। প্রতিটি জেলা, উপজেলায় বয়স্ক কল্যাণ ক্লাব তৈরি করবেন। যেন সন্তানরা তাদের পিতা-মাতাকে শেষ বয়সে অনাদর অবহেলা না করেন। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স¤প্রসারণ করবেন বপুক।
.
এছাড়া তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ কেন্দ্রের নামে একটি ট্রাস্টি বোর্ড করে দান করবেন যাতে বপুককে থমকে দাঁড়াতে না হয়। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে নিজস্ব অবস্থান থেকে মানবতাবাদী উদ্যোগ গ্রহণে উদ্ধুব্ধ করবেন এই মানবসেবী। বপুকে ভর্তির নিয়মকানুন বপুকে ষাটোর্ধ বয়সের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ সবাই থাকতে পারেন। কারও সহায়তা ছাড়া চলাফেরায় সক্ষম, মানসিকভাবে সুস্থ, প্রকৃত অসহায়রা বপুকের উত্তরার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ভর্তি হতে পারেন। বপুক-এ নিজের ছোট খাটো কাজ নিজেকেই করতে হয়। সব সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম

Update Time : ১২:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
মনিরুজ্জামান অপূর্ব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার / মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার / নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি / সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি / ছেলের আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম / আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’
.
নচিকেতার এই গানের মতোই জীবন এখানকার মানুষের। যে পিতা-মাতা সন্তানের লালন-পালন ও আনন্দময় ভবিষ্যতের জন্য ক্ষয় করেন নিজের জীবন। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব পিতামাতা সে সন্তানের সংসারে হয়ে পড়েন অপাংক্তেয়। সে সন্তান শেষ বয়সে মা-বাবাকে করেন অবহেলা। নিজের সংসারের ঝামেলা ভেবে পরিত্যাগ করেন বৃদ্ধ পিতামাতাকে।এমনি এক নাজুক পরিস্থিতিতে সব হারানো এ সকল বাবা-মায়ের সন্তান হয়ে তাদের আগলে রেখেছেন খতিব আবদুল জাহিদ। গড়ে তুলেছেন বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র (বপুক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
.
‘মুকুলের বৃদ্ধাশ্রম’ নামে পরিচিত এই বৃদ্ধনিবাস। এ নিয়ে আমাদের এবারের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. মনিরুজ্জামান অপূর্ব।
.
সবুজ শ্যামলের এক শান্তির নীড় গ্রিভেন্সি গ্রুপের পরিচালনায় বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঢুকতেই সারি সারি গাছ স্বাগত জানাবে। গাছগুলো যারা লাগিয়েছেন, তাদের নামফলকও দেওয়া আছে। তারপরই মেডিকেল ক্যাম্প।
.
পুরুষদের থাকার ইউনিট। সামনে এগিয়ে গেলে পুকুর ও অফিস কক্ষ। পাশেই মহিলাদের থাকার ইউনিট ও রান্নাঘর। মহিলাদের ইউনিট থেকে সামনে এগোলে বিশ্রামখানা আর পুকুর। পুকুরে পদ্মফুল এবং নৌকা বাধাঁ আছে। সামনে-পেছনে বিশাল বাগান। প্রায় সব রকমের ফলদ ও ঔষধি গাছ। পুকুরের সামনে মসজিদ, অজুখানা ও লিচুবাগান। মসজিদ থেকে সামনে এগুলেই পড়বে কবরস্থান। পুরো কেন্দ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বসার বেঞ্চ ও নিরাপত্তা বুথ। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এ আশ্রমের ৮০বিঘা জমির অনেকটাই চাষযোগ্য। এখানে ৫টি পুকুরে মাছ চাষ, ধান চাষ ও পুরো কম্পাউন্ডে লিচু, কাঠাল, পেয়ারা, কুল, নারিকেলসহ নানাবিধ ফলবান বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। যার ফল-ফসল মূলত বসবাসকারী অসহায় বৃদ্ধদের মধ্যেই বিতরণ করা হয়ে থাকে।
.
শৈশবের এক স্বপ্ন সবুজ শ্যামল এক গ্রাম। যেখানে মুকুল নামের দুরন্ত এক শিশুর শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ সময় কেটেছে।শৈশবের একটি স্মৃতি আজও তাকে বেদনার্ত করে। তাঁর বয়স যখন ১২-১৩ বছর, তখন এক হৃদয় বিদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। তাঁর বাড়ির পাশের এক বৃদ্ধাকে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে কাঁদতে দেখেন। তার কাছে গিয়ে জানতে চান কান্নার কারণ।
.
বৃদ্ধা জানান, তার সন্তানেরা আর তাকে বাড়িতে রাখতে চায় না। যাদের তিনি কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন তারা এখন আর তাকে রাখতে চায় না। এই ঘটনাটিই তার শিশু মনটিকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, এসব অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করবেন। স্বপ্ন হল সত্যি পড়াশোনা শেষে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ঠিকাদারী করে প্রথমে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। ব্যবসায় সফলতা পেয়েই উদ্যোগ নেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত হয়ে অবহেলিত, অসহায়, আশ্রয়হীন প্রবীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’ (বপুক)। ১৯৮৭ সালের গোড়ার দিকে উত্তরার আজমপুরে ২০ কক্ষ বিশিষ্ট ভাড়া বাড়িতে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়।
.
১৯৯৪ সালে বয়ষ্ক পুনবাসন কেন্দ্রকে গাজিপুর জেলার হোতাপাড়া, মনিপুরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালের ২১ এপ্রিল, নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী মাদার তেরেসা কেন্দ্রটির সম্প্রসারিত অংশের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ বৎসরে পদার্পন করেছে। কারা থাকেন বপুকে বপুকে জীবনের শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নিঃস্ব উত্তরাধীকার উচ্চ শিক্ষিতা সৈয়দা রানা আলীরাজ, কালিহাতির জমিদারের নায়েবের স্ত্রী আমেনা খানমের মত অভিজাত মহিলা। এখানে আশ্রয় পেয়েছেন সার্টিফিকেটবিহীন আহত নারী মুক্তিযোদ্ধা, সড়ক দুর্ঘটনায় স্মৃতিভ্রষ্ট বিদেশিনী, নিঃস্ব ব্যবসায়ী, প্রতারণার শিকার সাবেক স্বচ্ছল প্রবীণ, যাত্রাশিল্পী, বেসরকারি স্কুল-কলেজের সাবেক শিক্ষক, উচ্চপর্যায়ের সাবেক সরকারি-বেসরকারি চাকুরিজীবী। প্রতিদিনের জীবনযাপন এখানে আছেন দুই শতাধিক প্রবীণ। এর মধ্যে শতাধিকই নারী। তবে এ সংখ্যা নিয়মিতই কমে বাড়ে।
.
এক কাপড়ে কোনো প্রবীণ যদি এখানে চলে আসেন তাঁকে আর বাকি জীবন নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। তার পোশাক, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ প্রয়োজনীয় ও নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এখানে এলে একটি নিয়মের মধ্যেই থাকতে হয়। খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের দিনযাপন সবকিছুই নিয়মমতো। আত্মপরিচয়হীন শিশুদের পরিচয় দান বপুক পরিত্যক্ত ও অনাকাঙ্খিত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত গঠন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পিতৃ-মাতৃহীন, পরিচয়হীন অবাঞ্চিত শিশু এবং রাস্তাঘাট, ক্লিনিক ও নার্সিং হোম থেকে আত্মপরিচয়হীন শিশুদের এনে পরবর্তীতে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে দত্তক দেয়া হয়। নিঃসন্তান দম্পতিরা কয়েকটি মানবিক শর্তে বপুক থেকে সন্তান দত্তক নিতে পারেন।
.
স্বপ্নের নেই শেষ বপুক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও গিভেন্সী গ্রুপের চেয়ারম্যান খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুল বলেন, আগামী কয়েক বছর পর পুরোদমে বপুক আন্দোলন শুরু করবেন। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের জেলা-উপজেলায় ঘুরে প্রবীনদের নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য এ আন্দোলন গড়ে তুলবেন। প্রতিটি জেলা, উপজেলায় বয়স্ক কল্যাণ ক্লাব তৈরি করবেন। যেন সন্তানরা তাদের পিতা-মাতাকে শেষ বয়সে অনাদর অবহেলা না করেন। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স¤প্রসারণ করবেন বপুক।
.
এছাড়া তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ কেন্দ্রের নামে একটি ট্রাস্টি বোর্ড করে দান করবেন যাতে বপুককে থমকে দাঁড়াতে না হয়। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকে নিজস্ব অবস্থান থেকে মানবতাবাদী উদ্যোগ গ্রহণে উদ্ধুব্ধ করবেন এই মানবসেবী। বপুকে ভর্তির নিয়মকানুন বপুকে ষাটোর্ধ বয়সের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ সবাই থাকতে পারেন। কারও সহায়তা ছাড়া চলাফেরায় সক্ষম, মানসিকভাবে সুস্থ, প্রকৃত অসহায়রা বপুকের উত্তরার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে ভর্তি হতে পারেন। বপুক-এ নিজের ছোট খাটো কাজ নিজেকেই করতে হয়। সব সময় প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।