জামায়াতের বিচারে উদ্যোগ নিতে দাবি তুললেন বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৫৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৩৫ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে উদ্যোগ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় শোক দিবসে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় এই দাবি জানান তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সভায় বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘আজকের এই শোক দিবসে আমার একটি দাবি প্রধান বিচারপতির কাছে, জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য। আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী ও অপরাধী সংগঠন বলা হয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আইনের ছোট একটি সংশোধনী দরকার—কী শাস্তি হবে? সেটি কেন হচ্ছে না? সংশ্লিষ্ট মহলে জানুন। আমরা বিচার করতে চাই।’

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও সদস্য। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা আছে। দাখিল করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিচার হচ্ছে না কেন? কেন এত শঙ্কা?

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার জানান, গত সোমবার দিবাগত রাতে তাঁর দুই ছেলে (পুলিশ কর্মকর্তা) বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কোথায় যাও?’ ছেলেরা জানান, পিজি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে। তখন তিনি বলেছিলেন, কেন? তাঁরা বলেছিলেন, দাঙ্গাহাঙ্গামা হতে পারে। তাড়াতাড়ি ওখানে যেতে মেসেজ (বার্তা) এসেছে। তিনি বলেছিলেন, কেন দাঙ্গা? ছেলেরা বলেছিলেন, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী (মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির) মারা গেছেন, এ জন্য দাঙ্গাহাঙ্গামা হতে পারে।

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘যে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেখানে এখনো এই ৫২ বছর পর কেন এই শঙ্কা? তারা কি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাইতেও বেশি ক্ষমতাধর? আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন মানুষ মারা গেছে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী আমি জানি না। আল্লামা নামধারী সে কি এতই জ্ঞানী ছিল বাংলাদেশে? তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য, দাঙ্গাহাঙ্গামা ঠেকানোর জন্য হাজার হাজার পুলিশ সারা রাত জেগেছে।…যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিচার হতে হবে।’

কী হবে বিচার করলে, হত্যা করবে—এমন প্রশ্ন রেখে বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘হত্যা একাত্তর সালে করবে জেনেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বিচার করতে চাই। শোক দিবস থেকে দাবি করব—এই বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। কেন বিচার হচ্ছে না? তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা আছে। সাক্ষীসাবুদ এখনো আছে। বিচার কেন হবে না? এই সূত্রের সঙ্গেই পঁচাত্তরের সূত্র। এই সূত্রের সঙ্গেই পঁচাত্তরের অনেক ঘটনা জড়িত।…যুদ্ধ করেছিলাম রাজাকারদের বসবাসের জন্য নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের অনুসারীদের বসবাসের জন্য, বঙ্গবন্ধুর দেশে বসবাসের জন্য। আজকে রাজাকারদের ভয়ে, আলবদরদের ভয়ে হাজার হাজার পুলিশ রাতে মোতায়েন করতে হয়, একজন দণ্ডিত রাজাকারের লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য, আফসোস ও দুঃখ হয়।’

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘আবারও দাবি করব প্রধান বিচারপতির কাছে, বিচার করার উদ্যোগ নেন। আমাকে যদি বন্দুক ধরে গুলি করে, যে বিচার করলে, রায় দিলে তোমাকে গুলি করা হবে, তদুপরি বিচার করতে আমি প্রস্তুত।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

জামায়াতের বিচারে উদ্যোগ নিতে দাবি তুললেন বিচারপতি

Update Time : ০৯:৫৪:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে উদ্যোগ নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি দাবি জানিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় শোক দিবসে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় এই দাবি জানান তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সভায় বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘আজকের এই শোক দিবসে আমার একটি দাবি প্রধান বিচারপতির কাছে, জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য। আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী ও অপরাধী সংগঠন বলা হয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আইনের ছোট একটি সংশোধনী দরকার—কী শাস্তি হবে? সেটি কেন হচ্ছে না? সংশ্লিষ্ট মহলে জানুন। আমরা বিচার করতে চাই।’

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও সদস্য। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা আছে। দাখিল করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিচার হচ্ছে না কেন? কেন এত শঙ্কা?

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার জানান, গত সোমবার দিবাগত রাতে তাঁর দুই ছেলে (পুলিশ কর্মকর্তা) বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কোথায় যাও?’ ছেলেরা জানান, পিজি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে। তখন তিনি বলেছিলেন, কেন? তাঁরা বলেছিলেন, দাঙ্গাহাঙ্গামা হতে পারে। তাড়াতাড়ি ওখানে যেতে মেসেজ (বার্তা) এসেছে। তিনি বলেছিলেন, কেন দাঙ্গা? ছেলেরা বলেছিলেন, দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী (মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির) মারা গেছেন, এ জন্য দাঙ্গাহাঙ্গামা হতে পারে।

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘যে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেখানে এখনো এই ৫২ বছর পর কেন এই শঙ্কা? তারা কি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চাইতেও বেশি ক্ষমতাধর? আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন মানুষ মারা গেছে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী আমি জানি না। আল্লামা নামধারী সে কি এতই জ্ঞানী ছিল বাংলাদেশে? তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য, দাঙ্গাহাঙ্গামা ঠেকানোর জন্য হাজার হাজার পুলিশ সারা রাত জেগেছে।…যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিচার হতে হবে।’

কী হবে বিচার করলে, হত্যা করবে—এমন প্রশ্ন রেখে বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘হত্যা একাত্তর সালে করবে জেনেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। বিচার করতে চাই। শোক দিবস থেকে দাবি করব—এই বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। কেন বিচার হচ্ছে না? তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা আছে। সাক্ষীসাবুদ এখনো আছে। বিচার কেন হবে না? এই সূত্রের সঙ্গেই পঁচাত্তরের সূত্র। এই সূত্রের সঙ্গেই পঁচাত্তরের অনেক ঘটনা জড়িত।…যুদ্ধ করেছিলাম রাজাকারদের বসবাসের জন্য নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের অনুসারীদের বসবাসের জন্য, বঙ্গবন্ধুর দেশে বসবাসের জন্য। আজকে রাজাকারদের ভয়ে, আলবদরদের ভয়ে হাজার হাজার পুলিশ রাতে মোতায়েন করতে হয়, একজন দণ্ডিত রাজাকারের লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য, আফসোস ও দুঃখ হয়।’

বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘আবারও দাবি করব প্রধান বিচারপতির কাছে, বিচার করার উদ্যোগ নেন। আমাকে যদি বন্দুক ধরে গুলি করে, যে বিচার করলে, রায় দিলে তোমাকে গুলি করা হবে, তদুপরি বিচার করতে আমি প্রস্তুত।’