চালক-হেলপারদের ইচ্ছেমতো চলছে ঢাকা সিটির গণপরিবহন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:০৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুন ২০২১
  • / ১৩১ Time View

 

মাহিন উদ্দিনঃ

নেই কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
যেখানে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ার বদলে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ, অর্ধেক আসনের বদলে যাত্রী নেয়া হচ্ছে দাঁড়িয়ে।

আলআমিন নামে এক ব্যক্তির সাথে বিডি সমাচারের কথা হয় তিনি জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন ।

মঙ্গলবার (১৫জুন) দয়াগঞ্জ বাসা থেকে গুলিস্তান উদ্দেশে বের হয়েছেন। দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। অথচ এই পথটুকু যেতে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে, তিনি জানান আগের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। আর এখন মোট দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া বাবদ তার খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। এই দূরত্বে যাওয়া-আসায় আগে খরচ হতো ১০ টাকা।

দয়াগঞ্জ মোড়ে তার সঙ্গে কথা হয় বিডি সমাচারের। আল-আমিন বলেন, ‘অল্প বেতনে চাকরি শুরু করেছি। ওঠানামা ১৫ টাকার নামে পরিবহনগুলোর এই নতুন জুলুমে প্রতিদিন ভাড়া গুনতেই অনেক টাকা চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আগে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা ছিল। আর এই পথে যাওয়া-আসায় খরচ হতো ১০টাকা। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ, আর পরিবহনগুলো নিচ্ছে দ্বিগুণ। পাঁচ টাকার ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়লেও হতো আট টাকা, অথচ এরা গাড়িতে উঠলেই নিয়ে নিচ্ছে ১০ টাকা।’

৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ নানা শর্ত থাকলেও তা মানা হয় না অভিযোগ করে এক তরুণী বিডি সমাচারকে বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। গাড়িগুলোতে যাত্রীও থাকে পরিপূর্ণ। প্রতিবাদ করলেই চালক-শ্রমিকরা জোর করে নামিয়ে দেন। এভাবে জুলুম করলে আমরা যাব কোথায়?’

শুধু আল-আমীন একাই নন। ঢাকা সিটির বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাস স্টপেজে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীতে যে কোনো ধরনের গণপরিবহনে উঠলেই গুনতে হয় ১০ টাকা। দূরত্ব যতই কম হোক, এর কম নিতে চান না পরিবহন শ্রমিকরা। স্বল্প দূরত্বে পরিবহনগুলো আগে পাঁচ টাকা করে নিত। কিন্তু এখন ১০ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নেই। সরকার ৬০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বললেও পরিবহনগুলো ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ।

এ বিষয়ে বোরাক পরিবহন চালক রবিউল উদ্দিন বলেন, ‘আগে ওঠানামা ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল। এখন ভাড়া বাড়ানোর পর সবাই ১০ টাকা নিচ্ছে, আমরাও নিচ্ছি। ১০ টাকার নিচে আসলে ভাড়া কেমনে নেব?’

গণপরিবহনে এভাবে ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিডিসমাচারকে বলেন, ‘ওঠা-নামায় ১০ টাকার বিষয়টি আমরা দেখছি। বেশিরভাগ গাড়িচালক সরকারের বেশি ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত মানছেন, কিন্তু অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ বিষয়ে বিভিন্ন গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। সব গাড়িতে তো আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। যাত্রীরা যেখানেই অভিযোগ দিচ্ছেন আমরা সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি।’

যাত্রীভর্তি গাড়িতে বেশি ভাড়া, বাগ্বিতণ্ডা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিলে গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গাড়ির অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। বিপরীতে ৬০ শতাংশ করে ভাড়া বেশি নেয়া যাবে। কিন্তু বিভিন্ন গণপরিবহনে একদিকে গাড়িভর্তি যাত্রী নেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বাড়তি। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও বেশি নেয়ার বিষয়ে গাড়িচালকদের সঙ্গে একা প্রতিবাদ করলে তাকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয়। আর সবাই প্রতিবাদ করলেই পুরো গাড়ি থামিয়ে দিয়ে চালকরা বলেন, ‘গাড়ি আর যাবে না।’

শরিফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) ০৮ নম্বর বাসে একটা গাড়িতে গাবতলী থেকে পল্টন মোড় যাচ্ছিলাম। আসাদগেট এলাকায় এসে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়টি আমি একা প্রতিবাদ করলে গাড়িচালক আমাকে বলেন, আপনার ভালো না লাগলে আপনি নেমে যান। আবার কিছুদূর যেতেই সবকটি সিট পূর্ণ করে দাঁড়িয়েও যাত্রী নিলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বন্ধ করে চালক বলেন, গাড়ি আর যাবে না। এভাবেই চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করেন।’

বিষয়টি জানতে চাইলে এক বাসচালক বলেন, ‘আমরা অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী নেই না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিজেরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে কেউ কেউ গাড়িতে উঠে যান। এখানে আমাদের করার কিছুই নাই।।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

চালক-হেলপারদের ইচ্ছেমতো চলছে ঢাকা সিটির গণপরিবহন

Update Time : ০৩:০৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুন ২০২১

 

মাহিন উদ্দিনঃ

নেই কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
যেখানে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ার বদলে নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ, অর্ধেক আসনের বদলে যাত্রী নেয়া হচ্ছে দাঁড়িয়ে।

আলআমিন নামে এক ব্যক্তির সাথে বিডি সমাচারের কথা হয় তিনি জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন ।

মঙ্গলবার (১৫জুন) দয়াগঞ্জ বাসা থেকে গুলিস্তান উদ্দেশে বের হয়েছেন। দূরত্ব এক কিলোমিটারের মতো। অথচ এই পথটুকু যেতে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে, তিনি জানান আগের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। আর এখন মোট দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভাড়া বাবদ তার খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। এই দূরত্বে যাওয়া-আসায় আগে খরচ হতো ১০ টাকা।

দয়াগঞ্জ মোড়ে তার সঙ্গে কথা হয় বিডি সমাচারের। আল-আমিন বলেন, ‘অল্প বেতনে চাকরি শুরু করেছি। ওঠানামা ১৫ টাকার নামে পরিবহনগুলোর এই নতুন জুলুমে প্রতিদিন ভাড়া গুনতেই অনেক টাকা চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আগে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা ছিল। আর এই পথে যাওয়া-আসায় খরচ হতো ১০টাকা। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ, আর পরিবহনগুলো নিচ্ছে দ্বিগুণ। পাঁচ টাকার ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়লেও হতো আট টাকা, অথচ এরা গাড়িতে উঠলেই নিয়ে নিচ্ছে ১০ টাকা।’

৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ নানা শর্ত থাকলেও তা মানা হয় না অভিযোগ করে এক তরুণী বিডি সমাচারকে বলেন, ‘গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। গাড়িগুলোতে যাত্রীও থাকে পরিপূর্ণ। প্রতিবাদ করলেই চালক-শ্রমিকরা জোর করে নামিয়ে দেন। এভাবে জুলুম করলে আমরা যাব কোথায়?’

শুধু আল-আমীন একাই নন। ঢাকা সিটির বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাস স্টপেজে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীতে যে কোনো ধরনের গণপরিবহনে উঠলেই গুনতে হয় ১০ টাকা। দূরত্ব যতই কম হোক, এর কম নিতে চান না পরিবহন শ্রমিকরা। স্বল্প দূরত্বে পরিবহনগুলো আগে পাঁচ টাকা করে নিত। কিন্তু এখন ১০ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নেই। সরকার ৬০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বললেও পরিবহনগুলো ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ।

এ বিষয়ে বোরাক পরিবহন চালক রবিউল উদ্দিন বলেন, ‘আগে ওঠানামা ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল। এখন ভাড়া বাড়ানোর পর সবাই ১০ টাকা নিচ্ছে, আমরাও নিচ্ছি। ১০ টাকার নিচে আসলে ভাড়া কেমনে নেব?’

গণপরিবহনে এভাবে ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিডিসমাচারকে বলেন, ‘ওঠা-নামায় ১০ টাকার বিষয়টি আমরা দেখছি। বেশিরভাগ গাড়িচালক সরকারের বেশি ভাড়া নেয়ার সিদ্ধান্ত মানছেন, কিন্তু অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ বিষয়ে বিভিন্ন গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। সব গাড়িতে তো আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। যাত্রীরা যেখানেই অভিযোগ দিচ্ছেন আমরা সেখানেই অভিযান পরিচালনা করছি।’

যাত্রীভর্তি গাড়িতে বেশি ভাড়া, বাগ্বিতণ্ডা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিলে গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গাড়ির অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। বিপরীতে ৬০ শতাংশ করে ভাড়া বেশি নেয়া যাবে। কিন্তু বিভিন্ন গণপরিবহনে একদিকে গাড়িভর্তি যাত্রী নেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়াও নেয়া হচ্ছে বাড়তি। এ নিয়ে প্রায়ই যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন।

যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও বেশি নেয়ার বিষয়ে গাড়িচালকদের সঙ্গে একা প্রতিবাদ করলে তাকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয়। আর সবাই প্রতিবাদ করলেই পুরো গাড়ি থামিয়ে দিয়ে চালকরা বলেন, ‘গাড়ি আর যাবে না।’

শরিফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) ০৮ নম্বর বাসে একটা গাড়িতে গাবতলী থেকে পল্টন মোড় যাচ্ছিলাম। আসাদগেট এলাকায় এসে গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার বিষয়টি আমি একা প্রতিবাদ করলে গাড়িচালক আমাকে বলেন, আপনার ভালো না লাগলে আপনি নেমে যান। আবার কিছুদূর যেতেই সবকটি সিট পূর্ণ করে দাঁড়িয়েও যাত্রী নিলে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বন্ধ করে চালক বলেন, গাড়ি আর যাবে না। এভাবেই চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করেন।’

বিষয়টি জানতে চাইলে এক বাসচালক বলেন, ‘আমরা অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী নেই না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিজেরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে কেউ কেউ গাড়িতে উঠে যান। এখানে আমাদের করার কিছুই নাই।।