কলাপাতায় মিল্লি জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:১০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • / ৬৬৮ Time View

এমরান হোসেন, জামালপুর:

জামালপুর জেলার সুস্বাদু আর জনপ্রিয় এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার মিল্লি বা ম্যান্দা। অনেকে আবার মিলানি বা পিঠালিও বলে। মিল্লি দেখতে অনেকটা হালিমের মতো হলেও খেতে অন্য রকম এবং অনেক সুস্বাদু। একবার যে মিল্লি খেয়েছেন, তাদের পক্ষে এর স্বাদ ভুলে যাওয়া কষ্টকর। খেলেই শুধু বোঝা যায়, কেন এই মিল্লির নাম শুনলে জিবে পানি চলে আসে।

মিল্লি কিন্তু প্রতিদিনের খাবার নয়। কারও মৃত্যু বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ খাবার পরিবেশন করা জেলার ঐতিহ্য।

গরু, খাসি অথবা মহিষের মাংস, চালের গুঁড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরাসহ নানা প্রকার মসলা মিল্লি বা ম্যান্দা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে মিল্লি রান্নার জন্য মাংস বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিল্লি’র জন্য মাংস বড় করে কাটতে হবে। মাংসের সঙ্গে চর্বি ও হাড় অবশ্যই থাকতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চালের গুঁড়া যা খাবারটাকে ঘন করে। মিল্লি প্রায় তৈরি হয়ে গেলে রসুন, পেঁয়াজ আর জিরা দিয়ে যে বাগাড় দেওয়া হয়, তাতেই পূর্ণতা পায় মিল্লি’র স্বাদ।

No description available.

ঠিক কবে থেকে বা কিভাবে মিল্লি বা পিঠালির প্রচলন শুরু হয়েছে জামালপুরে, তার সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, শত বছরের বেশি সময় ধরে জামালপুরবাসী মিল্লির ঐতিহ্য লালন করছে। স্বাধীনতার আগেও নাকি বিচার-সালিস বৈঠকে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে মিল্লি পরিবেশন করা হতো।

এই খাবার সম্পর্কে রহিম মিয়া বলেন, আমার জন্ম হয়েছে দেশ স্বাধীনের আগে।তখনই দেখেছি বাব দাদারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিল্লি বা পিঠালির আয়োজন করতো। তারাও বলতে পারেনি কবে থেকে এই খাবার প্রচলন শুরু হয়েছে।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই অঞ্চল এর মানুষও ভাত, সবজি, মাছ, ডালে অভ্যস্ত। কিন্তু মিল্লি যখন রান্না হয় কারও বাড়িতে, তখন যেন উৎসব লেগে যায়। বিশেষ করে বড় কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই অঞ্চলে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতেও এই মিল্লি রান্নার প্রচলন রয়েছে।

No description available.

এই খাবারের সাথে স্থানীয় মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। মিল্লি রান্না না হলে বিয়ে, আকিকা, খতনাসহ নানা উৎসবের খাবার আয়োজনই অপরিপূর্ণ থেকে যায়। অনুষ্ঠান ছাড়াও নিজেদের বাড়িতেও মিল্লি রান্না করতে ও খেতে পছন্দ করে জামালপুরবাসী।

এছাড়াও মানুষ মারা গেলে ৪০ দিনের দিন যে দোয়া ও খাবার আয়োজন করা হয়, তাকে বেপার বা চল্লিশা বলা হয়। এই বেপারে সব শ্রেণি পেশার মানুষ মাটিতে খড় বা চট বিছিয়ে এক সাথে বসে কলা পাতায় ভাতের সাথে গরম মিল্লি খাওয়ার মজাই আলাদা।প্লেট নয়, কলাপাতায় সার বেঁধে বসে মিল্লি খাওয়াও এই অঞ্চলের ঐতিহ্য।

Please Share This Post in Your Social Media

কলাপাতায় মিল্লি জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার

Update Time : ১২:১০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

এমরান হোসেন, জামালপুর:

জামালপুর জেলার সুস্বাদু আর জনপ্রিয় এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার মিল্লি বা ম্যান্দা। অনেকে আবার মিলানি বা পিঠালিও বলে। মিল্লি দেখতে অনেকটা হালিমের মতো হলেও খেতে অন্য রকম এবং অনেক সুস্বাদু। একবার যে মিল্লি খেয়েছেন, তাদের পক্ষে এর স্বাদ ভুলে যাওয়া কষ্টকর। খেলেই শুধু বোঝা যায়, কেন এই মিল্লির নাম শুনলে জিবে পানি চলে আসে।

মিল্লি কিন্তু প্রতিদিনের খাবার নয়। কারও মৃত্যু বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ খাবার পরিবেশন করা জেলার ঐতিহ্য।

গরু, খাসি অথবা মহিষের মাংস, চালের গুঁড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরাসহ নানা প্রকার মসলা মিল্লি বা ম্যান্দা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে মিল্লি রান্নার জন্য মাংস বাছাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিল্লি’র জন্য মাংস বড় করে কাটতে হবে। মাংসের সঙ্গে চর্বি ও হাড় অবশ্যই থাকতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চালের গুঁড়া যা খাবারটাকে ঘন করে। মিল্লি প্রায় তৈরি হয়ে গেলে রসুন, পেঁয়াজ আর জিরা দিয়ে যে বাগাড় দেওয়া হয়, তাতেই পূর্ণতা পায় মিল্লি’র স্বাদ।

No description available.

ঠিক কবে থেকে বা কিভাবে মিল্লি বা পিঠালির প্রচলন শুরু হয়েছে জামালপুরে, তার সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, শত বছরের বেশি সময় ধরে জামালপুরবাসী মিল্লির ঐতিহ্য লালন করছে। স্বাধীনতার আগেও নাকি বিচার-সালিস বৈঠকে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে মিল্লি পরিবেশন করা হতো।

এই খাবার সম্পর্কে রহিম মিয়া বলেন, আমার জন্ম হয়েছে দেশ স্বাধীনের আগে।তখনই দেখেছি বাব দাদারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিল্লি বা পিঠালির আয়োজন করতো। তারাও বলতে পারেনি কবে থেকে এই খাবার প্রচলন শুরু হয়েছে।

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই অঞ্চল এর মানুষও ভাত, সবজি, মাছ, ডালে অভ্যস্ত। কিন্তু মিল্লি যখন রান্না হয় কারও বাড়িতে, তখন যেন উৎসব লেগে যায়। বিশেষ করে বড় কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই অঞ্চলে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতেও এই মিল্লি রান্নার প্রচলন রয়েছে।

No description available.

এই খাবারের সাথে স্থানীয় মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। মিল্লি রান্না না হলে বিয়ে, আকিকা, খতনাসহ নানা উৎসবের খাবার আয়োজনই অপরিপূর্ণ থেকে যায়। অনুষ্ঠান ছাড়াও নিজেদের বাড়িতেও মিল্লি রান্না করতে ও খেতে পছন্দ করে জামালপুরবাসী।

এছাড়াও মানুষ মারা গেলে ৪০ দিনের দিন যে দোয়া ও খাবার আয়োজন করা হয়, তাকে বেপার বা চল্লিশা বলা হয়। এই বেপারে সব শ্রেণি পেশার মানুষ মাটিতে খড় বা চট বিছিয়ে এক সাথে বসে কলা পাতায় ভাতের সাথে গরম মিল্লি খাওয়ার মজাই আলাদা।প্লেট নয়, কলাপাতায় সার বেঁধে বসে মিল্লি খাওয়াও এই অঞ্চলের ঐতিহ্য।