ওষধি গুণে ভরা পাথরকুচি গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২৭:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১
  • / ১৮৩ Time View
নিজস্ব প্রতিবেদক:twitter sharing button

পাথরকুচি একটি পরিচিত ঔষধি গাছ। গাছটি লাগাতে তেমন কিছুর প্রয়োজন হয় না। একটি পাতা মাটিতে ফেলে দিলেই কিছুদিন পর চারাগাছ গজাবে। কফপাতা, পটিয়াপুরী নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে এটা ‘পাথরকুচি’ নামেই সর্বত্র পরিচিত।

পাথরকুচি পাতাকে বৈজ্ঞানিক জগতে ব্রায়োফাইলাম নামে ডাকা হয়। এ পাতার এতটাই ঔষধি গুণ বিধায় একে ‘মিরাকল লিফ’ ও বলা হয়। পাতা থেকে পাথরকুচি গাছের জন্ম হয়। এর মূলত বীজ হয় না। একটি পাতা থেকে ৫ থেকে ১০টি গাছ উৎপাদন সম্ভব। সাধারণত কাঁকরমাটিতে জন্মে থাকে। তাছাড়া ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতেও জন্মে এই উদ্ভিদ।

বীরুৎজাতীয় এই উদ্ভিদটি খুব একটা লম্বা হয় না। ১ থেকে ২ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। পাতার রং সবুজ। পাতা ডিম্বাকৃতি, মাংসল এবং পুরু। পাতার চারপাশে খাঁজের মতো অংশ রয়েছে। খাঁজকাটা এই অংশ মাটিতে ফেলে রাখলেই নতুন গাছ জন্মায়।

পাথরকুচিকে বলা হয় ‘জগতের বিস্ময়’

এর রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। আফ্রিকা, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকায় পোকামাকড়ের কামড়, জখম, আলসার, ফোড়া, পোড়া, প্রদাহ, শুষ্কতার জন্য পাথরকুচির পাতা ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগ, ফুসকুড়ি, ডায়রিয়া, কলেরা রোগেও এটা ব্যবহার হতো। ছোট শিশুদের ঠাণ্ডা লাগার প্রতিকার হিসাবেও এটা ব্যবহার করা হতো। সাধারণ কাশি, ব্যথা, ব্রংকাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডার্মাটাইটিসের জন্য ব্রাজিলে পাথরকুচি ব্যবহার হতো।

ভারতের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে জন্ডিসের চিকিৎসায় পাথরকুচির তাজা পাতার রস ব্যবহার হতো। পশ্চিমাঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে নবজাতক শিশু এবং তার মাকে এই পাতার রস খাওয়ানো হয়। সিঙ্গাপুরে এই রস জ্বরের ঔষধ হিসেবে খাওয়ানো হতো। কিডনি এবং পাকস্থালীর ঔষধ হিসেবে নিয়মিত এই পাতার স্যুপ খাওয়া হয়। বিশ্ব জুড়ে এর বিস্তৃত পরিসরের ব্যবহারের কারণেই একে ‘জগতের বিস্ময়’ বলা হয়।

মেহ হলো সর্দির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোঁড়ার মতো অংশ। এই মেহ শরীরে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন সর্দি থাকলে মেহ দেখা দেয়। মেহ সারাতে তাজা পাথরকুচির পাতার রস নিয়মিত সকালে এবং বিকালে খেতে হবে। সাথে সর্দিও চলে যায় এবং কাশি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। কাটাছেঁড়া সারাতেও পাথরকুচির পাতা বেশ কার্যকর। ক্ষতস্থানে পাথরকুচির পাতা হালকা গরম করে তাপ দিলে আরাম পাওয়া যায় এবং ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়।

অনেকের পিত্তথলির কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। প্রতিদিন দু’বেলা করে টাটকা পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ালে সেরে যাবে। পাইলস এবং অর্শরোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন পাথরকুচি পাতার রস গোলমরিচের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

কলেরা, ডায়রিয়া কিংবা রক্ত আমাশয়ে ভুগছেন? সজীব পাথরকুচি পাতার সাথে জিরা গুড়া এবং ঘি মিশিয়ে কিছুদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। পাথরকুচি পাতার রসের সাথে আধা কাপ গরম পানি মিশিয়ে পান করলে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হয়। জন্ডিস নিরাময়ে এবং উচ্চ রক্তচাপ আয়ত্বে রাখতে পাথরকুচি পাতার রস অনেক কার্যকরী।

দিনে দুই-তিনবার চিবিয়ে অথবা রস করে পাথরকুচির পাতা খেলে, কিডনির পাথর দূর হয়। এভাবে খেলে জন্ডিসও উপশম হয়।

প্রায়ই অনেকের দেখা যায়, পেট ফাঁপা হয়ে আছে, প্রস্রাব আটকে আছে, বায়ু সরছে না। তখন পাথরকুচি পাতার রসের সাথে চিনি এবং হালকা গরম পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। তাহলে বায়ু সরবে, মূত্রের বেগ হবে, পেট ফাঁপাটাও কমবে। মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগাক্রান্ত সময়ে কয়েক ফোটা এই উদ্ভিদের রস খাওয়ালে তাৎক্ষণিক রোগের উপশম ঘটবে। কানের ব্যথার উপশম কমাতে সামান্য কয়েক ফোঁটা রস কানে দিলে উপকার পাওয়া যাবে। যারা ত্বক সম্পর্কে সচেতন, তারা মাঝেমধ্যে পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে প্রচুর পানি আছে। ত্বক ঠাণ্ডা, নরম ও সতেজ থাকবে। এছাড়া ব্রণেও পাথরকুচি পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

ওষধি গুণে ভরা পাথরকুচি গাছ

Update Time : ০১:২৭:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:twitter sharing button

পাথরকুচি একটি পরিচিত ঔষধি গাছ। গাছটি লাগাতে তেমন কিছুর প্রয়োজন হয় না। একটি পাতা মাটিতে ফেলে দিলেই কিছুদিন পর চারাগাছ গজাবে। কফপাতা, পটিয়াপুরী নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে এটা ‘পাথরকুচি’ নামেই সর্বত্র পরিচিত।

পাথরকুচি পাতাকে বৈজ্ঞানিক জগতে ব্রায়োফাইলাম নামে ডাকা হয়। এ পাতার এতটাই ঔষধি গুণ বিধায় একে ‘মিরাকল লিফ’ ও বলা হয়। পাতা থেকে পাথরকুচি গাছের জন্ম হয়। এর মূলত বীজ হয় না। একটি পাতা থেকে ৫ থেকে ১০টি গাছ উৎপাদন সম্ভব। সাধারণত কাঁকরমাটিতে জন্মে থাকে। তাছাড়া ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতেও জন্মে এই উদ্ভিদ।

বীরুৎজাতীয় এই উদ্ভিদটি খুব একটা লম্বা হয় না। ১ থেকে ২ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। পাতার রং সবুজ। পাতা ডিম্বাকৃতি, মাংসল এবং পুরু। পাতার চারপাশে খাঁজের মতো অংশ রয়েছে। খাঁজকাটা এই অংশ মাটিতে ফেলে রাখলেই নতুন গাছ জন্মায়।

পাথরকুচিকে বলা হয় ‘জগতের বিস্ময়’

এর রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। আফ্রিকা, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকায় পোকামাকড়ের কামড়, জখম, আলসার, ফোড়া, পোড়া, প্রদাহ, শুষ্কতার জন্য পাথরকুচির পাতা ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগ, ফুসকুড়ি, ডায়রিয়া, কলেরা রোগেও এটা ব্যবহার হতো। ছোট শিশুদের ঠাণ্ডা লাগার প্রতিকার হিসাবেও এটা ব্যবহার করা হতো। সাধারণ কাশি, ব্যথা, ব্রংকাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডার্মাটাইটিসের জন্য ব্রাজিলে পাথরকুচি ব্যবহার হতো।

ভারতের বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে জন্ডিসের চিকিৎসায় পাথরকুচির তাজা পাতার রস ব্যবহার হতো। পশ্চিমাঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে নবজাতক শিশু এবং তার মাকে এই পাতার রস খাওয়ানো হয়। সিঙ্গাপুরে এই রস জ্বরের ঔষধ হিসেবে খাওয়ানো হতো। কিডনি এবং পাকস্থালীর ঔষধ হিসেবে নিয়মিত এই পাতার স্যুপ খাওয়া হয়। বিশ্ব জুড়ে এর বিস্তৃত পরিসরের ব্যবহারের কারণেই একে ‘জগতের বিস্ময়’ বলা হয়।

মেহ হলো সর্দির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোঁড়ার মতো অংশ। এই মেহ শরীরে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন সর্দি থাকলে মেহ দেখা দেয়। মেহ সারাতে তাজা পাথরকুচির পাতার রস নিয়মিত সকালে এবং বিকালে খেতে হবে। সাথে সর্দিও চলে যায় এবং কাশি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। কাটাছেঁড়া সারাতেও পাথরকুচির পাতা বেশ কার্যকর। ক্ষতস্থানে পাথরকুচির পাতা হালকা গরম করে তাপ দিলে আরাম পাওয়া যায় এবং ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়।

অনেকের পিত্তথলির কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। প্রতিদিন দু’বেলা করে টাটকা পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ালে সেরে যাবে। পাইলস এবং অর্শরোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন পাথরকুচি পাতার রস গোলমরিচের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

কলেরা, ডায়রিয়া কিংবা রক্ত আমাশয়ে ভুগছেন? সজীব পাথরকুচি পাতার সাথে জিরা গুড়া এবং ঘি মিশিয়ে কিছুদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। পাথরকুচি পাতার রসের সাথে আধা কাপ গরম পানি মিশিয়ে পান করলে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর হয়। জন্ডিস নিরাময়ে এবং উচ্চ রক্তচাপ আয়ত্বে রাখতে পাথরকুচি পাতার রস অনেক কার্যকরী।

দিনে দুই-তিনবার চিবিয়ে অথবা রস করে পাথরকুচির পাতা খেলে, কিডনির পাথর দূর হয়। এভাবে খেলে জন্ডিসও উপশম হয়।

প্রায়ই অনেকের দেখা যায়, পেট ফাঁপা হয়ে আছে, প্রস্রাব আটকে আছে, বায়ু সরছে না। তখন পাথরকুচি পাতার রসের সাথে চিনি এবং হালকা গরম পানি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। তাহলে বায়ু সরবে, মূত্রের বেগ হবে, পেট ফাঁপাটাও কমবে। মৃগীরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগাক্রান্ত সময়ে কয়েক ফোটা এই উদ্ভিদের রস খাওয়ালে তাৎক্ষণিক রোগের উপশম ঘটবে। কানের ব্যথার উপশম কমাতে সামান্য কয়েক ফোঁটা রস কানে দিলে উপকার পাওয়া যাবে। যারা ত্বক সম্পর্কে সচেতন, তারা মাঝেমধ্যে পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে প্রচুর পানি আছে। ত্বক ঠাণ্ডা, নরম ও সতেজ থাকবে। এছাড়া ব্রণেও পাথরকুচি পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।