ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:২৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১২৬ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেই আগের বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। আর এটি গত ছয় বছরের হিসাব ধরলে পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৪ কোটি ডলার ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৭৩ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। ছয় বছর পর (২০২৯-৩০ অর্থবছর) তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ যদি আর কোনো ঋণ না-ও নেয়, তবু ২০৬২ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে।

অর্থনৈতিক সংকটে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অনেক কমে গেছে। সে তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। এতে সরকারের চলতি ও আর্থিক হিসাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হলেও প্রবাসী আয়ে ওঠানামা রয়েছে। ডলারে নেওয়া বেসরকারি খাতে ঋণের বড় অংশই আর নবায়ন হচ্ছে না। আর এমন এক সময়ে সরকারের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও ডলার খরচ বেশি হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

যে সব কারণে চাপ বাড়ছে

সহজ শর্তের ঋণের ছাড় কম হওয়া এবং বেশি সুদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেশি বাড়ছে। পাশাপাশি আছে চীন ও ভারত থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ।

ইআরডি কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়ায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তির অর্থ রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষায়িত হিসাবে তা রাখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত গত এক বছরে ৩৩ কোটি ডলার রাখা হয়েছে, যা ঋণ পরিশোধ হিসাবে দেখানো হচ্ছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারের উন্নীত হয়। মূলত চীনের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় গত দু-তিন বছর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার ঋণ। আর এই চাপ সামনে আরও বাড়বে। কেননা, চলতি অর্থবছরেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘ঋণ পরিশোধের অঙ্ক দেখে মনে হচ্ছে, চাপ বাড়ছে। কিন্তু এখনো আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে আছে। ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছি, তা প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত হচ্ছে। উৎপাদন বাড়ছে।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে

Update Time : ০৪:২৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেই আগের বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশের বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। আর এটি গত ছয় বছরের হিসাব ধরলে পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৪ কোটি ডলার ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০১ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৭৩ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। ছয় বছর পর (২০২৯-৩০ অর্থবছর) তা বেড়ে দাঁড়াবে ৫১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ যদি আর কোনো ঋণ না-ও নেয়, তবু ২০৬২ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে।

অর্থনৈতিক সংকটে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অনেক কমে গেছে। সে তুলনায় ব্যয় বেড়েছে। এতে সরকারের চলতি ও আর্থিক হিসাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হলেও প্রবাসী আয়ে ওঠানামা রয়েছে। ডলারে নেওয়া বেসরকারি খাতে ঋণের বড় অংশই আর নবায়ন হচ্ছে না। আর এমন এক সময়ে সরকারের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েও ডলার খরচ বেশি হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।

যে সব কারণে চাপ বাড়ছে

সহজ শর্তের ঋণের ছাড় কম হওয়া এবং বেশি সুদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেশি বাড়ছে। পাশাপাশি আছে চীন ও ভারত থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ।

ইআরডি কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়ায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তির অর্থ রাশিয়ায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষায়িত হিসাবে তা রাখা হচ্ছে। এ পর্যন্ত গত এক বছরে ৩৩ কোটি ডলার রাখা হয়েছে, যা ঋণ পরিশোধ হিসাবে দেখানো হচ্ছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারের উন্নীত হয়। মূলত চীনের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় গত দু-তিন বছর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার ঋণ। আর এই চাপ সামনে আরও বাড়বে। কেননা, চলতি অর্থবছরেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘ঋণ পরিশোধের অঙ্ক দেখে মনে হচ্ছে, চাপ বাড়ছে। কিন্তু এখনো আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে আছে। ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছি, তা প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত হচ্ছে। উৎপাদন বাড়ছে।’