উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাবিতে মশাল মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০১:২৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী ২০২২
  • / ২১৭ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারী) প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলে প্রায় পাঁচশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা ‘যে ভিসি মানুষ মারে, সে ভিসি চাই না’, ‘চাষাভুষার সন্তান, আমরা সবাই সাস্টিয়ান’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এ রিপোর্ট লেখার সময় শাবি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল হাতে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যে পদত্যাগ দাবিতে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে দেয়া আল্টিমেটাম অনুযায়ী বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানান। পদত্যাগ না করলে অনশনে বসার ঘোষণাও দেন তারা।

এরও আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ ও তিন দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। আবাসিক হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলেও তিনি অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলাকালে একপর্যায়ে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন।পরে এ আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল বুধবার আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ২৪ জন আমরণ অনশনে বসেছেন।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৩ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। এছাড়া ৭ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় না খেয়ে থাকায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল আন্দোলনকারীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন।

এসময় তারা বলেন, আমরা তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এ ক্যাম্পাসে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে আমরা সে পরিবেশ নিশ্চিত করব। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধানে যেতে চাই।

এসময় শিক্ষার্থীরা শাবি কোষাধ্যক্ষের আলোচনার বিষয়টিকে প্রত্যাখান করে বলেন, ‘স্যার এখন আর আলোচনার কোন পথ খোলা নেই। আমরা যখন আলোচনার জন্য বসে ছিলাম তখন আপনারা আসেন নাই। এখন আমাদের একটাই দাবি, যে ভিসি গুলি করার অনুমতি দেন তিনি আর ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না। গুলিতে যারা আহত হয়েছে তাদের কেউ মারা যেতে পারতো। ভিসিকে তখন আমরা অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের আসামি করতাম। সে হিসেবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আর আমাদের ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা এখন আর সহমর্মিতা চাই না। আমরা আপনাদের একাত্মতা চাই, স্যার।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে শাবির মেইনগেটে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনসহ শাবি শিক্ষকদের একাংশ মানববন্ধনে দাঁড়ান। সেখানে নিজেদের ‘বুদ্ধিজীবী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত’ দাবি করে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, আমরা সম্মানটুকুর জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।

এ মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দীন, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রয় সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করছে। তবে আন্দোলনকারীরা এ বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এমন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাবিতে মশাল মিছিল

Update Time : ০১:২৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারী) প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলে প্রায় পাঁচশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় তারা ‘যে ভিসি মানুষ মারে, সে ভিসি চাই না’, ‘চাষাভুষার সন্তান, আমরা সবাই সাস্টিয়ান’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এ রিপোর্ট লেখার সময় শাবি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল হাতে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যে পদত্যাগ দাবিতে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে দেয়া আল্টিমেটাম অনুযায়ী বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানান। পদত্যাগ না করলে অনশনে বসার ঘোষণাও দেন তারা।

এরও আগে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ ও তিন দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। আবাসিক হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলেও তিনি অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলাকালে একপর্যায়ে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন।পরে এ আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল বুধবার আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ২৪ জন আমরণ অনশনে বসেছেন।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৩ জনকে স্যালাইন পুশ করা হয়েছে। এছাড়া ৭ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় না খেয়ে থাকায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল আন্দোলনকারীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন।

এসময় তারা বলেন, আমরা তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এ ক্যাম্পাসে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে আমরা সে পরিবেশ নিশ্চিত করব। আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধানে যেতে চাই।

এসময় শিক্ষার্থীরা শাবি কোষাধ্যক্ষের আলোচনার বিষয়টিকে প্রত্যাখান করে বলেন, ‘স্যার এখন আর আলোচনার কোন পথ খোলা নেই। আমরা যখন আলোচনার জন্য বসে ছিলাম তখন আপনারা আসেন নাই। এখন আমাদের একটাই দাবি, যে ভিসি গুলি করার অনুমতি দেন তিনি আর ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না। গুলিতে যারা আহত হয়েছে তাদের কেউ মারা যেতে পারতো। ভিসিকে তখন আমরা অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের আসামি করতাম। সে হিসেবে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আর আমাদের ভিসি থাকার অধিকার রাখেন না।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা এখন আর সহমর্মিতা চাই না। আমরা আপনাদের একাত্মতা চাই, স্যার।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে শাবির মেইনগেটে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনসহ শাবি শিক্ষকদের একাংশ মানববন্ধনে দাঁড়ান। সেখানে নিজেদের ‘বুদ্ধিজীবী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত’ দাবি করে অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন বলেন, আমরা সম্মানটুকুর জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।

এ মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জসীম উদ্দীন, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রয় সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করছে। তবে আন্দোলনকারীরা এ বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এমন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।