অগ্রগতির অদম্য স্বপ্নযাত্রায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১২:১৬:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
  • / ২০৭ Time View

 

সাইফুল আলম:

‘এ দিন আজি কোন ঘরে গো
খুলে দিল দ্বার,
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা
সফল হলো কার?’

অগ্নিঝরা মার্চের ২৬ তারিখ। মহা-আনন্দের দিন। উচ্ছ্বসিত উল্লাসে আত্মহারা হওয়ার এক অনিবার্য উপলক্ষ্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ দিনটির বোধনের জন্যই যেন লিখে গেছেন, ‘কাহার অভিষেকের তরে। সোনার ঘাটে আলোক ভরে,/ ঊষা কাহার আশিস বহি/ হল আঁধার পার।’

শিকল ভাঙার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় মরণজয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি ওইদিন পরিপূর্ণভাবে। পঞ্জিকার হিসাবে আজকের দিনটি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ৫০ বছর পার হবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতার অদম্য আকাক্সক্ষা এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তারও অনেক আগে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের এক উত্তাল জনসভায় আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।

১৯৪৭ সালে দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। দুভাগে বিভক্ত হয় ভারতবর্ষ-ভারত ও পাকিস্তান। ‘মুসলিম ইজ আ নেশন’-এই ভুয়া ধারণার আলোকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আবহমান সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এ রাষ্ট্রটি পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুই অংশে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ থেকে অন্য অংশের অবস্থান ছিল যোজন যোজন মাইল দূরে। দুই অংশের মানুষের ভাষা, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসও ছিল একেবারেই আলাদা।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গের মানুষ বুঝতে পারলেন যে, এই দেশভাগে বাঙালির ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। তারা বুঝতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা মুরুব্বি সেজে সব দিক থেকে পূর্ববঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করছে। পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের একটি কলোনি হিসাবে বিবেচনা করে শোষণ করছে তাদের অর্থসম্পদ। বৈষম্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন তারা-এ সত্যটি উপলব্ধি করতেও বেগ পেতে হয় না তাদের।

দুই.
ইতোমধ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। ফলে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন, ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়।’

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটে ’৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি। গুলি চলে। শহিদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ আরও অনেক নাম না-জানা ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই বিকশিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। ’৪৮ সালে কারাবরণের পরই তিনি চলে আসেন আন্দোলনের পুরোভাগে। সেই থেকে শুরু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ক্যারিশমায় আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে যখন ছয় দফা পেশ করেন তখনই তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। কে না-জানেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির প্রথম মুক্তির সনদ।

ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, ‘ছয় দফা হলো স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’

এ বীজমন্ত্রের সুদূরপ্রসারী ফলাফল আঁচ করতে পারে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করে কারাগারে আটক করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ তথা বাঙালির দুর্বার আন্দোলনের ফলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারির শেষ প্রহরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পান জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

তিন.
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জের হিসাবে স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নেয় পূর্ব বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমাবেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ বাংলার জনগণের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব করলে সমবেত জনসমুদ্র বিপুল করতালি দিয়ে সে প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।

১৯৭০ সালের পাকিস্তান পার্লামেন্ট নির্বাচন দুনিয়ার গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দেশময় ধ্বনিত হয় একটিমাত্র স্লোগান: ‘তোমার নেতা, আমার নেতা-শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।’

চার.
১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় অগণিত মানুষের সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আরেক ইতিহাস একাত্তরের ৭ মার্চ। ‘সাত তারিখের সেই সমাবেশ/দেশটা যেন অচিনপুর,/ মাঠটা তো আর রেসকোর্স নয়/ লোক থই থই সমুদ্দুর।’ সে দিনটা ছিল বিশ্বের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের সেই ভাষণ যেন এক মহাকাব্য। ‘কে নেতা আর কে জনতা/ চিনতে পারাই ভার,/ নেতা এবং বীর জনতা/ সেদিন একাকার।’

ভাষণে ব্যবহৃত শব্দসম্ভার এবং কবিতার মতো বাক্যবিন্যাসে সে ভাষণ চিহ্নিত হয়েছে এক মহাকাব্য হিসাবে। যে কারণে আমেরিকার ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’ বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতারই ঘোষণা। গণমানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আস্থার ওপর নির্ভর করে তিনি বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার মানুষকে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল-প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্র“র মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ আরও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তার অমোঘ উচ্চারণ, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব-এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২০১৭ সালে ইউনেস্কো জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণটিকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পাঁচ.
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নাড়া দিয়েছিল বাঙালির অন্তরাত্মাকে। প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠেছিল দিকে দিকে। তারপর অনেক ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের এক ভয়াবহ দিন। ২৫ মার্চের কালরাতে সংঘটিত হয়েছে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত এক পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালির ওপর এই রাতে হালকা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হত্যার নেশায় উন্মাদ হয়ে।

সব আলোচনা ব্যর্থ হলে, ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বেতার বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন :
‘This may be my last massage, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh. Final victory is achieved.’

এদিকে সংগ্রাম, প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ, আক্রমণ ও সম্মুখসমরের দীর্ঘ নয় মাস; ওদিকে বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টার পাকিস্তানে দুর্বিষহ কারাজীবন। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। এ যুদ্ধের মধ্যদিয়েই আমরা অর্জন করেছি লাল-সবুজের পতাকা, একটি আবাসভ‚মি। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। অভ্যুদয় ঘটে একটি নামের, একটি দেশের, সেটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ছয়.
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতের নাম। ১৯৭১ সালে আমাদের এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে দীর্ঘ ৯ মাস ভরণপোষণের মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে ভারত। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে অস্ত্র, খাদ্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে ভারতীয় সেনারাও যুদ্ধ করেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর এসব কিছুর মূলে অক্ষয় হয়ে আছে আরেকটি নাম, ইন্দিরা গান্ধী। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীর মুহূর্তে আমরা কখনোই ভুলতে পারব না প্রতিবেশী ভারতের মানবিক সহযোগিতার কথা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা। ইতিহাসের পাতায় এসব কিছুই অম্লান হয়ে আছে, থাকবে।

সাত.
অমূল্য স্বাধীনতা অর্জনের পর অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবার্ষিকী পালনের রেশ আজও বহমান। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটি ভিন্ন নাম, কিন্তু ইতিহাসের একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস অসম্ভব। করোনাভাইরাসের অতিমারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে গোটা বিশ্ব এবং আমরাও তা থেকে আলাদা নই। সে সংকটকালেই জাতি পালন করেছে বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকী, পালন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতেও দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার।’ তার এই উপলব্ধি আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও খুবই প্রাসঙ্গিক।

শেখ হাসিনার সরকার তিনবার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে। দেশ এখন সমৃদ্ধ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পরিশ্রম করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছি।

করোনা মহামারির কারণে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও আমাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি। আমরা আজ অনেকদূর এগিয়েছি সত্য, আরও বহুদূর যেতে হবে তারপরও। আঁধার পেরিয়ে অগ্রগতির অদম্য স্বপ্নযাত্রায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের অঙ্গীকার হোক-মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

আজ একুশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে বাস্তবতা এটাই যে, আমরা ‘বাঙালি’ কিংবা ‘জাপানি’ কিংবা ‘ভারতীয়’ বা ‘চীনা’ তার চেয়ে বড় সত্য আমরা এক পৃথিবীর বাসিন্দা, মানুষ। মনুষ্যত্বের উদ্বোধনই আজ সভ্যতার সবচেয়ে বড় দাবি।

বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর ভোর আজ আমাদেরকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। প্রাচীন বাঙালি কবির অবিনাশী উচ্চারণ আজও প্রাসঙ্গিক;
‘শুনহ মানুষ ভাই,
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

সুবর্ণজয়ন্তীর ভোরে পৃথিবীর কাছে এটাই আমাদের বারতা।
জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানবতার।

লেখক: সাইফুল আলম, সম্পাদক দৈনিক যুগান্তর 
ও সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব।

Please Share This Post in Your Social Media

অগ্রগতির অদম্য স্বপ্নযাত্রায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

Update Time : ১২:১৬:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

 

সাইফুল আলম:

‘এ দিন আজি কোন ঘরে গো
খুলে দিল দ্বার,
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা
সফল হলো কার?’

অগ্নিঝরা মার্চের ২৬ তারিখ। মহা-আনন্দের দিন। উচ্ছ্বসিত উল্লাসে আত্মহারা হওয়ার এক অনিবার্য উপলক্ষ্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ দিনটির বোধনের জন্যই যেন লিখে গেছেন, ‘কাহার অভিষেকের তরে। সোনার ঘাটে আলোক ভরে,/ ঊষা কাহার আশিস বহি/ হল আঁধার পার।’

শিকল ভাঙার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় মরণজয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি ওইদিন পরিপূর্ণভাবে। পঞ্জিকার হিসাবে আজকের দিনটি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ৫০ বছর পার হবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতার অদম্য আকাক্সক্ষা এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তারও অনেক আগে। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানের এক উত্তাল জনসভায় আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’।

১৯৪৭ সালে দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। দুভাগে বিভক্ত হয় ভারতবর্ষ-ভারত ও পাকিস্তান। ‘মুসলিম ইজ আ নেশন’-এই ভুয়া ধারণার আলোকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আবহমান সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এ রাষ্ট্রটি পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুই অংশে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ থেকে অন্য অংশের অবস্থান ছিল যোজন যোজন মাইল দূরে। দুই অংশের মানুষের ভাষা, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসও ছিল একেবারেই আলাদা।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গের মানুষ বুঝতে পারলেন যে, এই দেশভাগে বাঙালির ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। তারা বুঝতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা মুরুব্বি সেজে সব দিক থেকে পূর্ববঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করছে। পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের একটি কলোনি হিসাবে বিবেচনা করে শোষণ করছে তাদের অর্থসম্পদ। বৈষম্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন তারা-এ সত্যটি উপলব্ধি করতেও বেগ পেতে হয় না তাদের।

দুই.
ইতোমধ্যে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। ফলে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন, ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়।’

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের বিস্ফোরণ ঘটে ’৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি। গুলি চলে। শহিদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ আরও অনেক নাম না-জানা ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই বিকশিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। ’৪৮ সালে কারাবরণের পরই তিনি চলে আসেন আন্দোলনের পুরোভাগে। সেই থেকে শুরু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ক্যারিশমায় আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে যখন ছয় দফা পেশ করেন তখনই তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। কে না-জানেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির প্রথম মুক্তির সনদ।

ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, ‘ছয় দফা হলো স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। সাঁকো দিলাম, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’

এ বীজমন্ত্রের সুদূরপ্রসারী ফলাফল আঁচ করতে পারে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দায়ের করে কারাগারে আটক করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ তথা বাঙালির দুর্বার আন্দোলনের ফলে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্র“য়ারির শেষ প্রহরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতা হিসাবে স্বীকৃতি পান জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

তিন.
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জের হিসাবে স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নেয় পূর্ব বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমাবেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ বাংলার জনগণের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব করলে সমবেত জনসমুদ্র বিপুল করতালি দিয়ে সে প্রস্তাবে সম্মতি জানায়।

১৯৭০ সালের পাকিস্তান পার্লামেন্ট নির্বাচন দুনিয়ার গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন জয়লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দেশময় ধ্বনিত হয় একটিমাত্র স্লোগান: ‘তোমার নেতা, আমার নেতা-শেখ মুজিব, শেখ মুজিব।’

চার.
১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় অগণিত মানুষের সমাবেশে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আরেক ইতিহাস একাত্তরের ৭ মার্চ। ‘সাত তারিখের সেই সমাবেশ/দেশটা যেন অচিনপুর,/ মাঠটা তো আর রেসকোর্স নয়/ লোক থই থই সমুদ্দুর।’ সে দিনটা ছিল বিশ্বের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের সেই ভাষণ যেন এক মহাকাব্য। ‘কে নেতা আর কে জনতা/ চিনতে পারাই ভার,/ নেতা এবং বীর জনতা/ সেদিন একাকার।’

ভাষণে ব্যবহৃত শব্দসম্ভার এবং কবিতার মতো বাক্যবিন্যাসে সে ভাষণ চিহ্নিত হয়েছে এক মহাকাব্য হিসাবে। যে কারণে আমেরিকার ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’ বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতারই ঘোষণা। গণমানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আস্থার ওপর নির্ভর করে তিনি বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার মানুষকে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল-প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্র“র মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ আরও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তার অমোঘ উচ্চারণ, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব-এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২০১৭ সালে ইউনেস্কো জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণটিকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পাঁচ.
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নাড়া দিয়েছিল বাঙালির অন্তরাত্মাকে। প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠেছিল দিকে দিকে। তারপর অনেক ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের এক ভয়াবহ দিন। ২৫ মার্চের কালরাতে সংঘটিত হয়েছে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত এক পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালির ওপর এই রাতে হালকা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হত্যার নেশায় উন্মাদ হয়ে।

সব আলোচনা ব্যর্থ হলে, ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বেতার বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন :
‘This may be my last massage, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh. Final victory is achieved.’

এদিকে সংগ্রাম, প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ, আক্রমণ ও সম্মুখসমরের দীর্ঘ নয় মাস; ওদিকে বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টার পাকিস্তানে দুর্বিষহ কারাজীবন। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। এ যুদ্ধের মধ্যদিয়েই আমরা অর্জন করেছি লাল-সবুজের পতাকা, একটি আবাসভ‚মি। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। অভ্যুদয় ঘটে একটি নামের, একটি দেশের, সেটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ছয়.
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতের নাম। ১৯৭১ সালে আমাদের এক কোটিরও বেশি শরণার্থীকে দীর্ঘ ৯ মাস ভরণপোষণের মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে ভারত। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে অস্ত্র, খাদ্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে ভারতীয় সেনারাও যুদ্ধ করেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর এসব কিছুর মূলে অক্ষয় হয়ে আছে আরেকটি নাম, ইন্দিরা গান্ধী। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীর মুহূর্তে আমরা কখনোই ভুলতে পারব না প্রতিবেশী ভারতের মানবিক সহযোগিতার কথা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা। ইতিহাসের পাতায় এসব কিছুই অম্লান হয়ে আছে, থাকবে।

সাত.
অমূল্য স্বাধীনতা অর্জনের পর অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মের শতবার্ষিকী পালনের রেশ আজও বহমান। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটি ভিন্ন নাম, কিন্তু ইতিহাসের একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস অসম্ভব। করোনাভাইরাসের অতিমারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে গোটা বিশ্ব এবং আমরাও তা থেকে আলাদা নই। সে সংকটকালেই জাতি পালন করেছে বঙ্গবন্ধুর জš§শতবার্ষিকী, পালন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতেও দেশ গড়া বেশ কঠিন। দেশ গড়ার সংগ্রামে আরও বেশি আত্মত্যাগ, আরও বেশি ধৈর্য, আরও বেশি পরিশ্রম দরকার।’ তার এই উপলব্ধি আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও খুবই প্রাসঙ্গিক।

শেখ হাসিনার সরকার তিনবার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে। দেশ এখন সমৃদ্ধ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে আরও উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে পরিশ্রম করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছি।

করোনা মহামারির কারণে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও আমাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়নি। আমরা আজ অনেকদূর এগিয়েছি সত্য, আরও বহুদূর যেতে হবে তারপরও। আঁধার পেরিয়ে অগ্রগতির অদম্য স্বপ্নযাত্রায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের অঙ্গীকার হোক-মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক, কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

আজ একুশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে বাস্তবতা এটাই যে, আমরা ‘বাঙালি’ কিংবা ‘জাপানি’ কিংবা ‘ভারতীয়’ বা ‘চীনা’ তার চেয়ে বড় সত্য আমরা এক পৃথিবীর বাসিন্দা, মানুষ। মনুষ্যত্বের উদ্বোধনই আজ সভ্যতার সবচেয়ে বড় দাবি।

বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর ভোর আজ আমাদেরকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। প্রাচীন বাঙালি কবির অবিনাশী উচ্চারণ আজও প্রাসঙ্গিক;
‘শুনহ মানুষ ভাই,
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

সুবর্ণজয়ন্তীর ভোরে পৃথিবীর কাছে এটাই আমাদের বারতা।
জয় হোক মানুষের। জয় হোক মানবতার।

লেখক: সাইফুল আলম, সম্পাদক দৈনিক যুগান্তর 
ও সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব।