অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠছে আজ
- Update Time : ০৯:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২
- / 199
স্পোর্টস ডেস্কঃ
৩৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় সদ্য কৈশোর পেরোনো এক তরুণের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে নেমেছিল ইতিহাসের প্রথম যুব বিশ্বকাপ। পরের দেড় দশকে সেদিনের সেই কম বয়সী ক্যারিবীয় অধিনায়কের নানা কীর্তিতে ক্রিকেট ইতিহাসও কম সমৃদ্ধ হয়নি। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানেরই স্বীকৃতি পেয়ে যাওয়া ব্রায়ান লারার কিংবদন্তি হওয়ার পথে ডিঙানো প্রথম সিঁড়িটিই ছিল ১৯৮৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ।
মাঝখানে ১০ বছরের দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আসরটি নিয়মিত মাঠে গড়াতে শুরু করার পর থেকে এমন অজস্র ভবিষ্যৎ তারকার উত্থানের ভিত্তিভূমিও হয়ে থেকেছে যুবাদের বিশ্ব আসর। ১৯৯৮ সালের দ্বিতীয় আসরেই যেমন সর্বোচ্চ ৩৬৪ রান করা এক ব্যাটসম্যান নিজের আগমনী ঘোষণা করেছিলেন। কে তিনি? পরের দুই দশকে ব্যাট হাতে বিশ্ব শাসন করা স্বঘোষিত ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইল।
সেই লারা-গেইলদের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেই আজ থেকে শুরু হচ্ছে যুব বিশ্বকাপের ১৪তম আসর। কে বলতে পারে যে এখানেই তাঁদের মতো এক বা একাধিক ভবিষ্যৎ কীর্তিমানের বীজ বোনা হচ্ছে না? অত বড় না হোন, ভবিষ্যতের তারকা ক্রিকেটার সরবরাহের নিশ্চিত বন্দোবস্ত অন্তত করে আসতে পারছে এই আসরটি। পেছন ফিরে গেলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি আসর থেকেই একাধিক ক্রিকেটার পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় মঞ্চেও আলো ছড়িয়েছেন। ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কায় হওয়া তৃতীয় আসর থেকেই নিজেদের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন গ্রায়েম স্মিথ-ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে শিখর ধাওয়ানের এক আসরে করা ৫০৫ রানের রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতেই পারেনি। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় ডেভিড ওয়ার্নার, রোহিত শর্মা ও এউইন মরগ্যানদের সঙ্গে একই আসরে খেলেছিলেন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালরা। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় হওয়া আসর শুনেছিল বিরাট কোহলি ও কেন উইলিয়ামসনদের পদধ্বনি। ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুব বিশ্বকাপের বছরখানেকের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হৈচৈ ফেলে দেওয়া আবির্ভাব ঘটেছিল বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমানেরও। যুব বিশ্বকাপকে ‘ভবিষ্যতের তারার মেলা’ তো আর এমনি এমনি বলা হয় না!
এই মেলার উদ্বোধনী দিনে আজ গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। জর্জটাউনের এভারেস্ট ক্রিকেট ক্লাব মাঠে একই গ্রুপের শ্রীলঙ্কা-স্কটল্যান্ডও একে অন্যের বিপক্ষে নামছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অবশ্য শুরু হচ্ছে আরো দুই দিন পরে। ১৬ জানুয়ারি সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে তাঁদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে ইংল্যান্ডের। যে ম্যাচ দিয়ে এবার অন্য মর্যাদা নিয়েই যুবাদের বিশ্ব আসরটি শুরু করতে যাচ্ছেন রাকিবুল হাসানরা। এবার যে তাঁরা খেলতে নামছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতা দলের সামনে এবার পাকিস্তানের সমকক্ষ হওয়ার হাতছানিও। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ছাড়া আর কোনো দলই পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গিয়ে শিরোপা (২০০৪ ও ২০০৬) ধরে রাখতে। কঠিন সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের গ্রুপে অবশ্য ইংল্যান্ড ছাড়া শক্ত আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই। গ্রুপে কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থাকায় তাদের পরের পর্বে যাওয়া নিয়ে সংশয়ও নেই তেমন। তাই বলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রবল বিক্রমে আসর শুরুর তাড়নায়ও রাকিবুলদের কমতি নেই কোনো। গতবারের বিশ্বজয়ী দলের অপরিহার্য সদস্য এবার নেতৃত্ব পেয়ে আগে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন। এর আগে ধাপে ধাপে এগোতে চাওয়ার চিন্তায় সতীর্থদের বুঝিয়ে যাচ্ছেন গতবারের সাফল্যের রেসিপিও। সেটি দলগত পারফরম্যান্সের ঝিলিক।
কভিড বাস্তবতায় অবশ্য বাংলাদেশই শুধু নয়, অন্য কোনো দলেরই প্রস্তুতি তেমন জমাট হয়নি। তা ছাড়া বায়ো বাবল বা জৈব সুরক্ষা বলয়ের ধকল এড়াতে আসর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনাও আছে। যুব ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডই যেমন এই আসরে দল পাঠায়নি। আফগানিস্তানেরও অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে ভিসা জটিলতার সমাধান হওয়ায় অবশেষে তারা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যাচ্ছে। তাদের যাওয়ার বিলম্বে ‘সি’ গ্রুপের চারটি ম্যাচের সূচিও বদলানো হয়েছে। তবুও আসর ঠিকমতোই মাঠে গড়াচ্ছে। প্রস্তুতির ঘাটতি সত্ত্বেও শীর্ষ দলগুলোও রাখছে শিরোপায় চোখ। বাংলাদেশেরও চোখ আকবর আলীদের গতবারের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি।