মেডিকেল ছাত্রীর পাশে দাঁড়াল পুলিশ

  • Update Time : ০১:৪৫:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১
  • / 192
নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে মেসেজের ভিত্তিতে মেডিকেল ছাত্রীর পাশে দাঁড়াল পুলিশ। এ ছাড়া প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্ল্যাকমেইল থেকে উদ্ধার করল ছাত্রীকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ’ এর ইনবক্সে মৌলভীবাজার জেলা থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থী একটি বার্তা প্রেরণ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তার সঙ্গে কোনো এক ছেলের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যেই সে জানতে পারে যে ছেলেটি ভালো নয়। মাঝে মাঝে নেশা করে এবং স্বভাব-চরিত্রও ভালো নয়। জানার পর ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু ছেলেটি তাকে বিরক্ত করতে থাকে।

একপর্যায়ে পরিবারের উদ্যোগে ছেলেটি বিদেশে চলে যায়। কিন্তু সেখান থেকে সে মেয়েটির নামে ফেক আইডি খোলে এবং তার ছবি এডিট করে নানা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তৈরি করে তা মেয়েটির নিকটজনদের কাছে পাঠাতে থাকে। এভাবে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। ছেলেটির কথা না শুনলে সেইসব ভুয়া ছবি ও ভিডিও মেডিকেল কলেজে মেয়েটির সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছেও পাঠানো হবে বলে হুমকি দেয়।

ছেলেটির নিয়মিত হুমকি ও হয়রানির ফলে মেয়েটি তার পড়াশোনায় মন দিতে পারছিল না। তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তার পরিবারও এটি নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় ছিল। তারা ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর প্রতিকার চেয়েও কোনো সহযোগিতা পায়নি। ছেলেটির নাম ইমরান হোসেন। তার পরিবার থাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানা এলাকায়।

মেয়েটি বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই কথা বলেছে। কিন্তু ওই ছেলের বাবার কথা হলো যে ওনার ছেলে যা ইচ্ছে করুক আর আমরা যা পারি আমরা যেন করি। উনি উনার ছেলেকে উসকানি দিচ্ছেন। ওনার প্রশ্রয়ে ছেলে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওই ছেলে আজকে আমার মেডিকেলের সহপাঠীদের নক দিয়েছে। আমি কীভাবে স্যার মেডিকেলে যাব? আমি কীভাবে পড়াশোনা করব?’

উল্লেখ্য, ছেলেটি বলত যেহেতু সে বিদেশে থাকে। বাংলাদেশের পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। কোনোভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছিল না। বার্তাটি পেয়ে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং উক্ত ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় এবং তাকে সকল প্রকার পুলিশি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গাজীপুরের বাসন থানার ওসি মো. কামরুল ফারুককে নির্দেশনা দেয়া হয় ছেলে ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করতে মেয়ের পরিবারকে মৌলভীবাজার থেকে গাজীপুর আসতে হতো। মেয়েটির বৃদ্ধ বাবার শারীরিক অবস্থা, করোনাকাল ও দূরত্ব বিবেচনা করে মিডিয়া উইংয়ের পরামর্শে ও বিশেষ সুপারিশে অনলাইনে মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ নেয় থানা পুলিশ।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলের পরিবারকে থানায় ডাকা হয়। পরবর্তীতে, মেয়েটির পরিবারের সম্মতিতে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিশ্চয়তায় একটি মুচলেকার ভিত্তিতে বিষয়‌টির সমাধান হয়। মুচলেকার সেই কপিটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মেয়ের পরিবারকে পাঠিয়েছে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং।

ঘটনার পর মেয়েটি বলেন,‘ আসসালামুআলাইকুম, স্যার। আপনারা আমার যে উপকার ক‌রে‌ছেন তার জন্য কো‌নো কৃতজ্ঞতাই য‌থেষ্ট না। কীভাবে থ্যাংক ইউ জানাব, সে ভাষা আমার জানা নাই। গত কয়েক দিন যাবৎ আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম। এখন থেকে আমি মনোযোগ দিয়ে আমার পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারব।’

Please Share This Post in Your Social Media


মেডিকেল ছাত্রীর পাশে দাঁড়াল পুলিশ

Update Time : ০১:৪৫:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে মেসেজের ভিত্তিতে মেডিকেল ছাত্রীর পাশে দাঁড়াল পুলিশ। এ ছাড়া প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্ল্যাকমেইল থেকে উদ্ধার করল ছাত্রীকে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মি‌ডিয়া অ্যান্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স) মো. সো‌হেল রানার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ’ এর ইনবক্সে মৌলভীবাজার জেলা থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থী একটি বার্তা প্রেরণ করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, তার সঙ্গে কোনো এক ছেলের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যেই সে জানতে পারে যে ছেলেটি ভালো নয়। মাঝে মাঝে নেশা করে এবং স্বভাব-চরিত্রও ভালো নয়। জানার পর ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু ছেলেটি তাকে বিরক্ত করতে থাকে।

একপর্যায়ে পরিবারের উদ্যোগে ছেলেটি বিদেশে চলে যায়। কিন্তু সেখান থেকে সে মেয়েটির নামে ফেক আইডি খোলে এবং তার ছবি এডিট করে নানা অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তৈরি করে তা মেয়েটির নিকটজনদের কাছে পাঠাতে থাকে। এভাবে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। ছেলেটির কথা না শুনলে সেইসব ভুয়া ছবি ও ভিডিও মেডিকেল কলেজে মেয়েটির সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছেও পাঠানো হবে বলে হুমকি দেয়।

ছেলেটির নিয়মিত হুমকি ও হয়রানির ফলে মেয়েটি তার পড়াশোনায় মন দিতে পারছিল না। তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। তার পরিবারও এটি নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় ছিল। তারা ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর প্রতিকার চেয়েও কোনো সহযোগিতা পায়নি। ছেলেটির নাম ইমরান হোসেন। তার পরিবার থাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানা এলাকায়।

মেয়েটি বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই কথা বলেছে। কিন্তু ওই ছেলের বাবার কথা হলো যে ওনার ছেলে যা ইচ্ছে করুক আর আমরা যা পারি আমরা যেন করি। উনি উনার ছেলেকে উসকানি দিচ্ছেন। ওনার প্রশ্রয়ে ছেলে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ওই ছেলে আজকে আমার মেডিকেলের সহপাঠীদের নক দিয়েছে। আমি কীভাবে স্যার মেডিকেলে যাব? আমি কীভাবে পড়াশোনা করব?’

উল্লেখ্য, ছেলেটি বলত যেহেতু সে বিদেশে থাকে। বাংলাদেশের পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। কোনোভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছিল না। বার্তাটি পেয়ে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং উক্ত ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় এবং তাকে সকল প্রকার পুলিশি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গাজীপুরের বাসন থানার ওসি মো. কামরুল ফারুককে নির্দেশনা দেয়া হয় ছেলে ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করতে মেয়ের পরিবারকে মৌলভীবাজার থেকে গাজীপুর আসতে হতো। মেয়েটির বৃদ্ধ বাবার শারীরিক অবস্থা, করোনাকাল ও দূরত্ব বিবেচনা করে মিডিয়া উইংয়ের পরামর্শে ও বিশেষ সুপারিশে অনলাইনে মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ নেয় থানা পুলিশ।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলের পরিবারকে থানায় ডাকা হয়। পরবর্তীতে, মেয়েটির পরিবারের সম্মতিতে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিশ্চয়তায় একটি মুচলেকার ভিত্তিতে বিষয়‌টির সমাধান হয়। মুচলেকার সেই কপিটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মেয়ের পরিবারকে পাঠিয়েছে মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং।

ঘটনার পর মেয়েটি বলেন,‘ আসসালামুআলাইকুম, স্যার। আপনারা আমার যে উপকার ক‌রে‌ছেন তার জন্য কো‌নো কৃতজ্ঞতাই য‌থেষ্ট না। কীভাবে থ্যাংক ইউ জানাব, সে ভাষা আমার জানা নাই। গত কয়েক দিন যাবৎ আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম। এখন থেকে আমি মনোযোগ দিয়ে আমার পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারব।’